বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার অন্তর্গত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের রোহিঙ্গা ছাত্রদের বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করায় প্রতিবাদে ফুঁসছে সারা বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ছাত্ররা। মানবাধিকার কমিশন সূত্রে খবর, বাংলাদেশ সরকার ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠরত রিফিউজি রোহিঙ্গা ছাত্রদের বহিষ্কার করেছে। উল্লেখ্য, কক্সবাজার জেলায় রিফিউজি সেটেলমেন্টের কাছে থাকা সেকেন্ডারি স্কুলগুলোতে নামভর্তি করা, বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নাথাকা সমস্ত ছাত্রদের বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
মানবাধিকার কমিশনের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, বাংলাদেশ সরকারের উচিত, রোহিঙ্গা ছাত্রদের শিক্ষার অধিকার দিয়ে মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের রাজনীতির শিকার হয়েছে রোহিঙ্গা ছাত্ররা। সরকার ছাত্রদের শিক্ষার অধিকার কেড়ে নিয়ে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
সিনিওর চিলড্রেন্স রাইটস এর গবেষক বিল ভান এসভেল্ট এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘শিক্ষা মানুষ মাত্রেরই মৌলিক অধিকার’। শিক্ষার অধিকার কেড়ে নেওয়া রোহিঙ্গা ছাত্ররা জন্মগতভাবে বাংলাদেশের। মায়ানমারের থেকে নির্যাতিত হয়ে রোহিঙ্গা ছেলে-মেয়েদের মা বাবারা বাংলাদেশে এসেছেন ১৯৯০ সাল নাগাদ। রোহিঙ্গাদের ভোগান্তির শেষ নেই। বাংলাদেশ সরকার কোন আনুষ্ঠানিক বিদ্যালয়ে রোহিঙ্গাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। রিফিউজি ক্যাম্পে থাকা অনানুষ্ঠানিক বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে কোনরকমে সামান্য শিক্ষা গ্রহণ করছে। সেই মর্মে তারা উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কারণ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোহিঙ্গা ছাত্রদের উচ্চশিক্ষার জন্যে বাধ্যতামূলক করেছে বাংলাদেশের বার্থ সার্টিফিকেট। সার্টিফিকেট না দেখাতে পারলে ছাত্ররা শিক্ষা থেকে চিরকাল বঞ্চিত থেকে যাবে এভাবেই।
রোহিঙ্গারা মায়ানমারের একটি মুসলিম সংখ্যালঘু জাতি। তাঁরা মায়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী এবং বৌদ্ধদের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে ১৯৭০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে শরণার্থী হয়ে আসতে আরম্ভ করেন।
মানবাধীকার কমিশন ১৩ জন রোহিঙ্গা ছাত্রদের একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন। তাঁদের মধ্যে ৪ জন মেয়ে। যারা ২৩ জানুয়ারি, ২৮ জানুয়ারি এবং ১৪ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হয়েছে। বিদ্যালয় পরিচালনা সমিতি প্রত্যেক ক্লাসে গিয়ে বাংলাদেশ সরকার ইস্যু করা রোহিঙ্গা ছাত্র বহিষ্কারের নোটিস পাঠ করেন। এবং সেই সঙ্গে ছাত্রদের জীবন অন্ধকূপে ঠেলে দেন।
আন্তর্জাতিক মানবাধীকার কমিশনের আইন অনুযায়ী, সমস্ত ছাত্রদের শিক্ষার অধিকারের সাথে রোহিঙ্গা ছাত্রদেরও শিক্ষার সমান অধিকারের কথা উল্লেখ রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের কাছে রোহিঙ্গা ছাত্ররা নিজেদের শিক্ষার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছে বাংলাদেশের মাধ্যমিক স্তরের রোহিঙ্গা ছাত্র-ছাত্রীরা। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানের প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছে মানবাধীকার কমিশন।