নয়াদিল্লি: আজ ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবস। বাংলার নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জন্ম এবং মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে উল্লেখ করেন, ‘বেগম রোকেয়া ছিলেন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন একজন আধুনিক নারী। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন সমাজ তথা রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়নের জন্য পুরুষের পাশাপাশি নারীকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে উপযুক্ত করে গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন। তাঁর এই উপলব্ধি ও আদর্শ আজও আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়।’
তবে নারীবাদী লেখক তসলিমার কন্ঠে ভিন্ন সুর।
তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশ মহাসমারোহে পালন করছে নারীবাদী লেখক বেগম রোকেয়ার জন্মবার্ষিকী। দেখে মনে হয় বাংলাদেশের লোকেরা নারীবাদে বেশ বিশ্বাস করে! প্রশ্ন হলো, বিশ্বাস করলে আরেক নারীবাদী লেখককে নির্বাসনদন্ড দিল কেন, কেনই বা তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলো?
রোকেয়ার আর আমার বক্তব্যে সত্যিই কি কোনও তফাৎ আছে? তিনি ধর্মের সমালোচনা করেছেন, আমিও করেছি। তিনি মেয়েদের শিক্ষার কথা বলেছেন , আমিও মেয়েদের শিক্ষা, স্বনির্ভরতা আর সচেতনতার কথা চার দশক ধরে বলছি। তিনি অবশ্য তাঁর এক উপন্যাসের নায়িকাকে দিয়ে নারীস্থানের স্বপ্ন দেখিয়েছেন।
দুনিয়ার সব পুরুষকে ঘরবন্দি করে,ওদের চাকর বাকর বানিয়ে, ওদের ওপর রান্না বান্না আর সন্তান লালনের ভার দিয়ে নারীদের বানাতে চেয়েছেন পুরুষের প্রভু, রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবারের সর্বময় কর্তা, পরিচালক। আমি এরকম স্বপ্ন দেখাইনি কাউকে। আমি বলেছি, নারী যেন পুরুষের সমান অধিকার পায়, নারী- পুরুষ উভয়ের মর্যাদা যেন এক হয়, কাউকে যেন কারোর দাসত্ব করতে না হয়।
আজ বাংলাদেশে যারা রোকেয়াকে মাথায় তোলার আর তসলিমাকে পায়ে মাড়ানোর পক্ষে, তারা মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত হিপোক্রিট। যারা আজ রোকেয়ার জন্য উৎসব করার আর তসলিমাকে নির্বাসনদণ্ড দেওয়ার,নিষিদ্ধ করার, নিশ্চিহ্ন করার পক্ষে, তারা আপাদমস্তক পুরুষবাদী।
পুরুষবাদীরা সেই নারীবাদীকে মাথায় তোলে, যে নারীবাদী মৃত। মৃত নারীবাদী মেয়েদের শিক্ষার কথা বলেছেন, এই শিক্ষা, ধার্মিক ভেবে নেয় কোরান শিক্ষা, নাস্তিক ভেবে নেয় বিজ্ঞানশিক্ষা, রক্ষণশীল ভেবে নেয় ঘরে বসে সন্তানদের অক্ষরজ্ঞান দিতে পারে এমন শিক্ষা, পুরুষতান্ত্রিক ভেবে নেয় অনুগত স্ত্রীর ভূমিকা যথাযথ পালন করার অর্থাৎ স্বামী এবং সংসারের প্রতি কর্তব্যপালন করার শিক্ষা।
তাই সকলে এক কাতারে দাঁড়িয়ে রোকেয়া বন্দনা করতে পারে। আমি কিন্তু রোকেয়া ভক্ত। রোকেয়া দিবস আমিও পালন করি। কিন্তু আমি সত্যিকার নারীবাদীর মতো পালন করি, হিপোক্রিটের মতো নয়।
এই কথাগুলো আমি না বলে অন্য কেউ বললে ভালো হতো। কিন্তু সত্য কথা জোরে সোরে উচ্চারণ করার মুরোদ কারো নেই বলে আমাকেই বলতে হলো”।
৯ ডিসেম্বর, ২০১৮