নয়াদিল্লি: বাংলাদেশের জনপ্রিয় রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ মারা গেছেন। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মানুষের জীবন। কার ভিতরে যে ভিতরে ভিতরে কী চলতে থাকে তা কয়জন খবর রাখে!?
বুধবার, ১৩ মার্চ বাংলাদেশ সময় রাত ৯টার দিকে তাঁর মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়।
জানা যাচ্ছে, শিল্পী সাদির মা মারা যাওয়ার পর থেকেই তিনি ট্রমার মধ্যে চলে যান। তিনি স্বাভাবিক ছিলেন না মানসিকভাবে।
মা হারানোর বেদনা সম্ভবত তিনি নিতে পারেননি। এমনটাই মনে করা হচ্ছে। কিন্তু ভিতরে ভিতরে আসলে কী চলছিল তা তো বলা যাচ্ছেনা।
২০২৩ সালের ৮ জুলাই বার্ধক্যজনিত রোগে মৃত্যু হয় সাদি মহম্মদের মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহর (৯৬)। এই মৃত্যুটা তিনি মেনে নিতে পারেননি।
সাদি মহম্মদ রবীন্দ্রসঙ্গীতের ওপর বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন।
২০০৭ সালে ‘আমাকে খুঁজে পাবে ভোরের শিশিরে’ অ্যালবামের মাধ্যমে তিনি সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ২০০৯ সালে তার ‘শ্রাবণ আকাশে’ ও ২০১২ সালে তার ‘সার্থক জনম আমার’ অ্যালবাম প্রকাশিত হয়।
তবে তসলিমা নাসরিনের সন্দেহ ভিন্ন। তিনি সন্দেহ করছেন সাদি হয়তো সমপ্রেমী ছিলেন।
তিনি লিখেছেন:
“আজকাল এমন হয়েছে কারও মৃত্যুই আমাকে আর অবাক করে না। বৃদ্ধ হওয়ার আগেই আমার বাবা মা, দুই দাদা, মামারা, খালারা, কাকারা ফুপুরা গত হয়েছেন। আজ সকালে সাদি মহম্মদের মৃত্যুর খবর শুনে আমি অবাক হইনি। তবে কেউ আত্মহত্যা করলে কষ্ট হয়।
আত্মহত্যার আগে তার যে কষ্ট হয়েছিল, সেই কষ্টের কথা ভেবে আমার কষ্ট হয়। সাদির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কোনও পরিচয় ছিল না। তবে তাঁকে দেখে মনে হতো তিনি বোধহয় সমপ্রেমী বা সমকামী। আমার মনে হতেই পারে, আমি ঠিক নাও হতে পারি।
অনেকে বলছে তিনি আত্মহত্যা করেছেন কারণ তাঁর মা’র মারা যাওয়াটা তিনি সহ্য করতে পারেননি। সাদি মহম্মদের মা’র বয়স নব্বইয়ের ওপরে ছিল। বার্ধক্যজনিত কারণে তাঁর মৃত্যু হওয়াটা খুব স্বাভাবিক । সুতরাং মাতৃবিয়োগের যন্ত্রণায় সাদি আত্মহত্যা করেছেন, এ আমি বিশ্বাস করি না। সাদি মহম্মদের হয়তো কোনও মানসিক অবসাদ ছিল, ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার ছিল। মায়ের মৃত্যু হয়তো তাঁর ডিপ্রেশানকে ট্রিগার করেছে। ব্রেনের অর্ডার মতো মানুষ চলছে।
ডিসঅর্ডার হলেই মুশকিল, র্যাশনাল চিন্তাভাবনা সবসময় তখন কাজ করে না। অযৌক্তিক হতাশার কারণেই হয়তো সাদি অনুষ্ঠানাদিতে গান গাওয়া বন্ধ করেছিলেন। অন্য কারণও থাকতে পারে। শান্তিনিকেতন থেকে সঙ্গীতের ডিগ্রি নিয়ে এসে সতীর্থরা বিরাট বিরাট পুরস্কার পাচ্ছেন, তিনি পাচ্ছেন না, হতাশা এ কারণেও হতে পারে।
সঙ্গীহীনতা সবাইকে ভোগায় না, কাউকে কাউকে ভোগায়। তিনি হয়তো ভুগতেন। কত রকম যে কারণ থাকতে পারে! আমরা শুধু অনুমানই করতে পারি। নিশ্চিত হতে পারি না।
আত্মহত্যা ব্যাপারটা আমাদের ভাল না লাগতে পারে, কিন্তু এটিও একটি মানবাধিকার। যার জীবন, সে-ই সিদ্ধান্ত নেবে এ জীবনটি কতদিন সে যাপন করবে, অথবা আদৌ যাপন করবে কি না। তবে এই আত্মহত্যা যদি মানসিক অসুস্থতার কারণে হয়, যে অসুস্থতা চিকিৎসার মাধ্যমে সারানো সম্ভব ছিল, কিন্তু সারানো হয়নি, তাহলে আফসোস তো হবেই”।