নয়াদিল্লি: কবির সুমনকে নিয়ে চলছে হৈচৈ। তিনি যে এমন দাবি করে বসলেন, যা নিয়ে এখন সমালোচনা চলছে। কারণ কবির সুমন এমনিতেই বিতর্কিত চরিত্র।
তাঁকে নিয়ে এবার মুখ খুললেন তসলিমা নাসরিন।
“কয়েকজন হিন্দু তাঁকে কবীর না ডেকে সুমন ডাকেন, এই দুঃখে, এই রাগে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ ত্যাগ করবেন, বাংলাদেশে বাকি জীবন কাটাবেন।
বাংলার পূর্ব পশ্চিম সব আছে তাঁর, আজ তিনি পশ্চিমবঙ্গে বাস করতে পারেন, কাল তিনি বাংলাদেশেও বাস করতে পারেন। বাস করার জন্য তাঁর যেটা দরকার হয়, সেটা হলো ইচ্ছে। তাঁর লাইফ আমার চোখে বেশ একখানা লাক্সারি লাইফ। আমি শত ইচ্ছে করলেও না পারবো পশ্চিমবঙ্গে বাস করতে, না পারবো বাংলাদেশে বাস করতে।
অন্যায় কী করেছি? লিখেছি। খুন করিনি, ধর্ষণ করিনি, লুঠ করিনি, দুর্নীতি করিনি, মিথ্যে বলিনি। তাঁর মতো রাজনীতি করিনি, রাষ্ট্রের টাকা পয়সা নিইনি। আমি লেখাপড়া নিয়ে থেকেছি, নীরবে নিভৃতে থেকেছি, আজও থাকছি। কেউ আমাকে আমার নামে না ডেকে অন্য যত নামেই ডাকুক, আমার কোনও রাগ হয় না, দুঃখও হয় না। ফুলের ঘায়ে আমি মুর্চ্ছা যাই না। তিনি যান।
অথচ তাঁর মতো আমারও জন্ম বঙ্গে। হিন্দুরা তাঁকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে তাড়ায়নি। কিন্তু তিনি রাগ করে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়তে চাইছেন। মুসলমানরা তাঁকে সাদর আমন্ত্রণ জানাচ্ছে বাংলাদেশে। তাঁর জন্য দুই বঙ্গের দুয়ার খোলা, আর আমার জন্য দুই বঙ্গের দুয়ার বন্ধ।
হিন্দু মুসলমান দুই সরকারই দুই বঙ্গ থেকে আমাকে তাড়িয়েছে। কোনও অপরাধ না করেও দুই বঙ্গের দুয়ার আমার জন্য বন্ধ। দুই বঙ্গে যাঁর অবাধ যাতায়াত, কেবল রাগ করে বা অভিমান করে তিনি আজ এই বঙ্গ থেকে ওই বঙ্গে চলে যান, ওই বঙ্গ থেকে এই বঙ্গে চলে আসেন, তাঁর পক্ষে বোঝা সম্ভব হয় না, দুয়ার যদি বন্ধ থাকে, তাহলে কী অবস্থা হয় একজন আপাদমস্তক বাঙালির, মনে প্রাণে যে একশো ভাগ বাঙালি, তার? বোঝা সম্ভব হয় না বলেই কি তিনি আমার চরম বিরোধিতা করেছিলেন?
বাংলাদেশের দুয়ার আমার জন্য বন্ধ হওয়া সত্ত্বেও তিনি আমাকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিতাড়িত করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলেন? তিনি চেয়েছিলেন বাংলাদেশের দুয়ার আমার জন্য যেমন বন্ধ, তেমন পশ্চিমবঙ্গের দুয়ারও যেন বন্ধ হয়!
যে লোক নিজের জন্য চলাফেরার সবটুকু স্বাধীনতা চান, কিন্তু অন্যের জন্য তা চান না, না চেয়েও কী করে তিনি বড় মাপের একজন মানুষ হিসেবে পরিচিত হন, আমি জানি না। আমি তাঁর মতো বিশাল নই, আমি ক্ষুদ্র। এই ক্ষুদ্র আমি কায়মনোবাক্যে তাঁর ইচ্ছে পুরণ হোক, চাই। যে কোনও দেশে তাঁর যাওয়ার আর বাস করার স্বাধীনতা তিনি পাক, চাই। বাংলার পূর্ব পশ্চিম –যে কোনও অঞ্চলেই তাঁর অবাধ বসবাসের স্বাধীনতা তিনি উপভোগ করুন, চাই”।