ওপার বাংলা

স্বাধীন কলমের সৈনিক তসলিমা, অধিকারের আন্দোলন চলছে, চলবেঃ আমেরিকার বাংলাদেশ হিন্দু কোয়ালিশনের বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানে নাসরিন

তসলিমা নাসরিন। একজন স্বাধীন কলমের সৈনিক। পদে পদে তাঁকে হোঁচট খেতে হয়েছে, হচ্ছে স্বাধীন মত প্রকাশ করতে গিয়ে।

ভ্রষ্ট মানুষের তিরস্কারে অনিরুদ্ধ তসলিমা নাসরিন সত্যব্রতী হতে ছেড়েছেন সমাজ, এমনকি দেশও। সূর্য পূর্ব দিকে ওঠে, সুতরাং তা পূর্বে দিকেই ওঠে। এমনই সত্য লেখক নাসরিনের কন্ঠে।

অত্যাচার স্বাধীন সত্ত্বাকে দমাতে পারে না। বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত ২৫ বছর। কিন্তু নানা প্রতিকূলতায়ও দমে যাননি এক মুহূর্ত। বরং সোচ্চার হয়েছেন আরও।

বছরের পর বছর কূটকৌশলী জটিলতা পেরিয়ে মজবুত রেখেছেন নিজের ভীত।

বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট লেখক নবনীতা দেবসেনের মৃত্যুতে নস্টালজিক হয়ে পড়েন তসলিমা। প্রকাশ করেছেন কলকাতায় থাকতে না পারার বেদনা, প্রকাশ করেছেন আরো একটু যদি নবনীতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ পেতেন! “এমন প্রচন্ড রসবোধ যাঁর, তাঁর সংগে আমার সখ্য হয়নি। কলকাতায় সাড়ে তিন বছর বাস করেছি। কত কত মানুষের সংগে বন্ধুত্ব হয়েছে। তাঁর সংগে হলে সমৃদ্ধ হতে পারতাম আরও।”

“নবনীতা দেবসেনের মৃত্যুর খবর শুনে বড় বিষন্ন আমি। তাঁর সংগে আমার সখ্য ছিল না খুব। তবে মাঝে মধ্যে দেখা হয়েছে। একবার তাঁর বাড়ি আমি গিয়েছি, একবার তিনি এসেছেন আমার বাড়ি। ওই একবারই। অম্ল মধুর একটা সম্পর্ক ছিল আমাদের । নবনীতা দেবসেনের সংগে সবচেয়ে চমতকার যে সময়টি কাটিয়েছি আমি, সেটি কোনও জলে নয়, স্থলে নয়, সেটি অন্তরীক্ষে। দিল্লিতে নারীবাদী এক অনুষ্ঠান শেষ করে দুজনে একসংগে ফিরেছিলাম কলকাতায়। দিল্লি থেকে কলকাতা যাওয়ার পথে উড়োজাহাজে পাশাপাশি বসেছিলাম। নবনীতা দেবসেন তাঁর জীবনের অনেক গল্পই সেদিন আমাকে বলেছেন। গল্পের উপস্থাপনায়, বর্ণনায় এত সূক্ষ্ম কারুকাজ, এত প্রচণ্ড রসবোধ — অসাধারণ প্রতিভা থাকলেই সম্ভব। প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করেছি আমি। প্রাণ খুলে হেসেছি।
আমরা এক এক করে সবাই পৃথিবী ছাড়বো। এমন নয় যে তিনি একাই চলে গেছেন। নবনীতা দেবসেন জীবনে স্নেহ শ্রদ্ধা ভালোবাসা প্রচুর পেয়েছেন। নিজের মতো করে জীবন তিনি যাপন করেছেন। মৃত্যুর সময় পাশে প্রিয় প্রিয় মানুষদের পেয়েছেন। সার্থক জনম তাঁর।

আমারই শুধু একটু আক্ষেপ রয়ে গেল। এমন প্রচন্ড রসবোধ যাঁর, তাঁর সংগে আমার সখ্য হয়নি। কলকাতায় সাড়ে তিন বছর বাস করেছি। কত কত মানুষের সংগে বন্ধুত্ব হয়েছে। তাঁর সংগে হলে সমৃদ্ধ হতে পারতাম আরও। আমাকে আরও একটু জানলে, আরও একটু বুঝলে তিনি হয়তো আরও একটু ভালোবাসতে পারতেন, আরও একটু কাছে আসতেন আমার।

যা হয়নি, তা হয়নি। একটু আক্ষেপ না হয় থেকেই যাক।”

অপ্রিয় শুনতে মনে হলেও যা সত্য তা অস্বীকার করার উপায় নেই। অধিকাংশ মানুষ মেনে নিতে পারেন না, আবার ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া যায় না। তসলিমার মতো জীবনকে যূপকাষ্ঠে দাঁড় করিয়ে এমন সত্য অমন করে আগে বা পরে কেউ বলার সাহস দেখাতে পারেনি।

বর্তমানে মুক্তমনা, ধর্মনিরপেক্ষ, মানবতাবাদী তসলিমা ব্যস্ত রয়েছেন আমেরিকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। আমেরিকার বাংলাদেশ হিন্দু কোয়ালিশনের বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানে তিনি অংশগ্রহণ করেছেন।

ভাষণ দিচ্ছেন তসলিমা নাসরিন

বাংলাদেশে হিন্দুদের বিরুদ্ধে যে ভয়ানক বৈষম্য, নারী নির্যাতন প্রভৃতি বিষয়ে তিনি ভাষণ প্রদান করেন। লিখছেন “অধিকারের আন্দোলন চলছে, চলবে।”

প্রসঙ্গত, জুলাই মাসে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহার মিথ্যা অভিযোগ প্রসঙ্গে তসলিমা তীব্র ভাষায় নিন্দা করেছিলেন নোংরা রাজনীতির।

“ট্রাম্পকে প্রিয়া সাহা যা বলেছেন, কমই বলেছেন। খুব মাপা সময়। ভয়াবহতা বর্ণনা করার সময় তাই পাননি। মিলিয়নকে লক্ষ ভেবেছেন নাকি মিসিংকে ডিস্যেপিয়ার্ড বলেছেন, সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হলো হিন্দুদের বিরুদ্ধে বৈষম্য বাংলাদেশে চলছে, নির্যাতন চলছেই। সে কারণে নিরাপত্তার অভাবে হিন্দুরা দেশ ছাড়ছে। এটা মানুষ জানুক। হাসিনা এসেও যে সংখ্যালঘুকে নিরাপত্তা দেননি, এটাও জানুক মানুষ।”

তিনি আরো লেখেন, “হিন্দুর কথা হিন্দু ভাবে, মুসলমানের কথা মুসলমানরা ভাবে, খ্রিস্টানদের কথা খ্রিস্টানরা ভাবে, ইহুদিদের কথা ইহুদিরা ভাবে — এটা ভুল কথা। সেই হিন্দুরাই দেশের এবং দেশের বাইরের হিন্দুরা ভালো আছে না কি মন্দ আছে, এ নিয়ে ভাবে, যারা হিন্দু নিয়ে রাজনীতি করে, বা সরাসরি রাজনীতি না করলেও সেই রাজনীতি দ্বারা যাদের মগজধোলাই হয়েছে । একই রকম মুসলমানরাও, কোনও মুসলমানই মুসলমানের জন্য ভাবে না, যদি মুসলমান নিয়ে রাজনীতি না করে বা সেই রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত না হয়। একই রকম খ্রিস্টান ইহুদি বৌদ্ধ বাহাই রাও।

মানুষ নিজেকে নিয়ে ভাবে, নিজের স্বার্থ নিয়ে। ভালো থাকতে হলে, আরামে আহলাদে স্বছন্দে বা প্রাচুর্যে থাকতে হলে, যাদের সংগে সম্পর্কটা ভালো রাখতে হয়, তাদের সংগে রাখে, যাদেরকে খাতির করতে হয়, তাদের করে, তারা অন্য ধর্মের হলেও, অন্য জাতের হলেও, অন্য বর্ণের হলেও, অন্য বিশ্বাসের হলেও।

আমি হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, ইহুদি অনেককেই জিজ্ঞেস করে দেখেছি, তাদের সম্প্রদায় দেশে বা দেশের বাইরে দুঃখে কষ্টে আছে এ নিয়ে তাদের কোনও দুর্ভাবনা নেই। খুব অল্প সংখ্যক মানুষই সব মানুষকে নিয়ে ভাবে, সব মানুষের দুর্দশা ঘোচাতে চায়। সেই অল্প সংখ্যক মানুষের আসলে কোনও ধর্ম, বর্ণ, জাত থাকে না, তারা এসবের উর্দ্ধে উঠে যায় বলেই উদার হতে পারে, নিঃস্বার্থ হতে পারে।”

 

সাগরিকা দাস

Recent Posts

বাংলাদেশে হিটস্ট্রোকে উপজেলা মহিলা ভাইসচেয়ারম্যান প্রার্থীসহ  ৪ মৃত্যু, স্থগিত নির্বাচন

ঢাকা: বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে চলেছে। ইতিমধ্যে অতি গরমের ফলে হিটস্ট্রোকে ৩৭ জন মারা গিয়েছেন।…

4 days ago

বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহে রেললাইন বেঁকে ট্রেন চলাচল বিঘ্ন

ঢাকা: বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহে রেললাইন বেঁকে ট্রেন চলাচল বিঘ্ন ঘটছে। যাকে রেলের ভাষায় বলা হয়…

5 days ago

সাপ্তাহিক রাশিফল

মেষ রাশির জাতক জাতিকাদের জন্য সপ্তাহটি ভালোই হতে চলেছে। অর্থ উপার্জন হবে। সমাজে সম্মান বাড়বে।…

5 days ago

বাংলাদেশে তাপদাহে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুনঈশ্বরদীতে রেললাইনের পাত বেঁকে গেছে

ঢাকা: বাংলাদেশে চলতি বছর সীমাহীন তাপদাহে মানুষের জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশে সরবোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে…

6 days ago

আপনার আজকের দিনটি

সিংহ: আজকের দিনটি আপনার জন্য নতুন কিছু শেখার দিন হবে। ভাগ্যের দিক থেকে দিনটি ভালোই।…

6 days ago

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত

ঢাকা: বাংলাদেশে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে আবুল কালাম (২৫)…

7 days ago