ঢাকা: বাংলাদেশে কি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ছেলে মেয়েদের মন উঠিয়ে নেয়া হচ্ছে? অভিভাবকরা কি করছেন? কী মতামত তাঁদের? কারণ সাম্প্রতিক যে ফলাফল সামনে এলো তা উদ্বেগজনক।
চার বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে (উচ্চ বিদ্যালয়) ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে! সংখ্যাটা কম নয়!
আর এই একই সময়ে মাদ্রাসায় বেড়েছে আড়াই লাখ শিক্ষার্থী।
বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য। ‘‘বাংলাদেশ শিক্ষা পরিসংখ্যান-২০২৩’’-এর খসড়া প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গিয়েছে।
খসড়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সালে সারাদেশে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ছিল ৯২ লাখের বেশি, যা ২০২৩ সালে এসে কমে দাঁড়িয়েছে ৮১ লাখ ৬৬ হাজারে। দেশে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৮ হাজার ৯৬৮টি। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশি ছাত্রী। মোট শিক্ষার্থীর ৪৫% ছাত্র এবং ৫৫% ছাত্রী।
তথ্য বলছে, একই সময়ে (২০১৯-২০২৩) মাদ্রাসাগুলোতে (দাখিল ও আলিম) আড়াই লাখের বেশি শিক্ষার্থী বেড়েছে। ২০২৩ সালের তথ্যানুযায়ী- মাদ্রাসায় অধ্যয়ন করছেন শিক্ষার্থী ২৭ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি। এর মধ্যে ছাত্রী প্রায় ৫৪%।
এদিকে যা জানা খেল, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে ৫ হাজার ৩৯৫টি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষার্থী প্রায় সাড়ে ৭ লাখ।
এই বিষয়ে লেখক তসলিমা নাসরিন লিখেছেন:
“বাংলাদেশের একটা খবর দেখে চমকে উঠলাম। ”হাইস্কুলে শিক্ষার্থী কমছে, বাড়ছে মাদ্রাসায়।” এক সময় মাদ্রাসায় পাঠানো হতো দু’ধরণের ছেলেকে, বাড়ির সবচেয়ে গাধা ছেলেকে, অথবা মাথায় কুবুদ্ধি গিজগিজ করছে এমন ছেলেকে। মাদ্রাসা অনেকটা ছিল শিশু কিশোর সংশোধনী কেন্দ্রের মতো, আশা করা হতো ছেলেদের গাধাত্ব কিছুটা কমবে, এবং কুবুদ্ধির পরিমাণও হ্রাস পাবে। এসব কতটা কমতো তা মেপে দেখা হয়নি।
তবে মাদ্রাসা পাশ করে তারা বেকার বসে থাকতো, বাপের হোটেলে খেত, আর বাবা মা ভাই বোনদের ফুটফরমাশ খাটতো। সেই মলিন মাদ্রাসার রমরমা অবস্থা এখন! এটা হাসিনার কল্যাণেই সম্ভব হয়েছে। দেশ ছেয়ে ফেলেছেন মাদ্রাসা আর মসজিদে, মাদ্রাসা থেকে পাশ করে আসা চতুর ব্যবসায়ীদের সামিয়ানা টাঙিয়ে দিয়েছেন ওয়াজ করার জন্য।
তারা মাদ্রাসার পক্ষে এবং হাইস্কুলের বিপক্ষে ওয়াজ করেছেন, মানুষের মগজধোলাই করেছেন। এতদিনের ওয়াজের ফল এখন পেতে শুরু করেছে জাতি। হাসিনার কল্যাণে মাদ্রাসা পাশ করে নামী দামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে যখন পারছেই, তখন মাদ্রাসায় পড়বে না কেন?
মাদ্রাসার পড়লে বিরাট নম্বর পাবে পরীক্ষায়, কারণ মাদ্রাসার পরীক্ষায় নকল চলে, ছাত্রদের হাতে শিক্ষকদের নকল ধরিয়ে দেওয়া চলে, প্রশ্নের উত্তর বলে দেওয়া চলে, শিক্ষার্থীরা না লিখতে পারলে শিক্ষকদের লিখে দেওয়া চলে”।