ঢাকা: রোহিঙ্গারা (Rohingya) এখন বাংলাদেশের বিষফোঁড়া। তারা যে কোনো প্রলোভনে প্রলুব্ধ হয়ে যে কোনো অঘটন করতে পিছপা হয়না বলে উল্লেখ করলেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
তিনি অভিযোগ এনে জানান, রোহিঙ্গারা প্রতিনিয়ত অপরাধজগতের সঙ্গে যুক্ত হয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইয়াবার ব্যবসা করে। নিজেদের মধ্যে প্রতিদিন তারা মারামারি-গুলিযুদ্ধ করছে।
শুধু তাই নয়- ডিজিএফআইয়ের এক আধিকারিককে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। বুধবারও সেখানে গুলিযুদ্ধ হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকায় বাংলা একাডেমিতে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
কামাল আরও বলেন, রোহিঙ্গারা বিভিন্ন গ্রুপ-সাবগ্রুপে বিভক্ত হয়ে অপরাধ সংঘটিত করছে। তারা কাঁটাতারের বেষ্টনী কেটে মায়ানমারে গিয়ে yaba নিয়ে আসছে। কাজেই সেখানে আমাদের নরমাল পুলিশ তো আছেই এপিবিএন দেওয়া হয়েছে। কারণ সেখানে রক্তপাত হচ্ছে।
সম্প্রতি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক প্রতিবেদনে এপিবিএন’র বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ করা হয়। মন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, এপিবিএন সম্পর্কে হিউম্যান ওয়াচ যা বলছে এটা তথ্যভিত্তিক নয়। তাদের আরও বেশি দেখে এসে রিপোর্ট করা উচিত।
Myanmar সেনাবাহিনীর হাত থেকে জীবন বাঁচাতে পাঁচ বছর আগে সাত লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়।তারও আগে এসেছিল চার লাখ।এদের ভীড়ে চলে আসে তস্কর রোহিঙ্গারাও।এরমধ্যে দুই লাখ শিশু জন্মগ্রহণ করায় এখন Rohingya র সংখ্যা ১৩ লাখ।
এদিকে শুধু রাতে নয়, দিনেও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলছে অস্ত্রের ঝনঝনানি। গত পাঁচ বছরে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ১১৫টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। ধর্ষণ মামলা হয়েছে শতাধিক।
উখিয়া-টেকনাফে ৩৪টি ক্যাম্পেই একাধিক রোহিঙ্গা সশস্ত্র গ্রুপ এখন মুখোমুখি অবস্থানে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই ক্যাম্পগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খুনাখুনি, অপহরণ, গুম, লুটপাট স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে রূপ নিয়েছে। এমনকি ক্যাম্পের পাহাড়ি এলাকায় অবৈধ অস্ত্র তৈরির কারখানা রয়েছে বলেও একাধিক গোয়েন্দা সূত্র দাবি করেছে।
এর প্রভাবে কক্সবাজার-চট্টগ্রামে নিরাপত্তার ঝুঁকিতে পড়েছে স্থানীয়রা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে শতাধিক দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে। গত পাঁচ বছরে ২ হাজার ৪ শতাধিক মামলায় আসামি হয়েছে ৫ হাজার ২২৬ জন। সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রধারীদের নাম স্থান পেয়েছে।
টেকনাফ-উখিয়ায় ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সক্রিয় আট গ্রুপের মধ্যে ১৯২ জনের হাতে রয়েছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। এর মধ্যে মোহাম্মদ নবী হোসেন গ্রুপ অন্যতম। এই গ্রুপের সদস্যরা সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অপহরণ, মুক্তিপণ, খুন ও নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ড করে আসছে।
অস্ত্রধারীদের নামের তালিকায় রয়েছে- বালুখালী ক্যাম্পের নুরুল আমিন, শহিদুল ইসলাম, জাফর আলম, হামিদ হোসেন, তোফায়েল হোসেন, মৌলভী হাবিবুল্লাহ প্রমুখ। আরসা গ্রুপের সদস্যরা মায়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। এই গ্রুপের সদস্যরা হচ্ছে- কমান্ডার মৌলভী আয়াছ, মুছা, সানাউল্লাহ, আরমান, বাইলা প্রমুখ।
দীল মোহাম্মদ ওরফে মার্স গ্রুপের হাতেও অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। এ গ্রুপের অস্ত্রধারীরা হল—মোহাম্মদ রফিক, আব্দুল মাবুদ, আবু বক্কর, ওস্তাদ খালেক, হাফেজ, হেড মাঝি জহিরুল, কেফায়েত উল্লাহ প্রমুখ।
এছাড়া হিট পয়েন্ট গ্রুপের কলিম উল্লাহ, জাহিদ হোসেন, ফরিদ, ইউসুফ, মো. জামাল, মাস্টার দিল মোহাম্মদ প্রমুখের হাতে রয়েছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র।