ওপার বাংলা

Bangladeshএ নৌকাডুবিতে বাড়ছে লাশের সারি, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৭

ঢাকা: বাংলাদেশের পঞ্চগড়ে (bangladesh, panchagarh) বোদায় (boda) করতোয়া নদীতে গত রোববার দুপুরে নৌকাডুবির ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৭ জন হয়েছে। সোমবার বিকেল পর্যন্ত নদী থেকে আরও ২২ জনের লাশ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

গত রোববার ২৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সব মিলে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় এখনো নিখোঁজ রয়েছে ৪১ জন তীর্থযাত্রার মানুষ।

নৌকাডুবির ঘটনায় প্রতিনিয়তই বাড়ছে লাশের সারি। করতোয়া নদীর পাড়ে  নিহতদের স্বজনরা প্রিয়জনের লাশের জন্য অপেক্ষা করছেন। তাদের আহাজারিতে সেখানে এক হৃদয়বিদারক অবস্থা তৈরি হয়েছে।

প্রায় ২৪ ঘণ্টা পরেও লাশ না পেয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
জানা গেছে, পঞ্চগড়ে (panchagarh) করতোয়া নদীতে হিন্দু পুণ্যার্থীদের বহনকারী নৌকা ডুবে যাওয়ার ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১ জনে।

গতকাল সোমবার বিকেল পর্যন্ত পঞ্চগড় (panchagarh) ও দিনাজপুর (dinajpur) জেলার করতোয়া এবং আত্রাই নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে এসব মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এখনও ৫১ জন যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন। সোমবার বিকেলে বোদা (boda) উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপিত জরুরি তথ্য ও সহায়তা কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কর্মকর্তারা জানান, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আরো ২২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গত রোববার ২৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। সব মিলিয়ে শিশু ও নারীসহ ৪৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের তিনটি ইউনিট উদ্ধার কাজ চালালেও বেশিরভাগ মরদেহ উদ্ধার করেছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। স্বজনদের দাবি, এখনো ৪১ জন নিখোঁজ আছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, নৌকাটিতে দেড় শতাধিক যাত্রী ছিল।

কিছু মানুষ সাঁতরে নদীর তীরে ফিরতে পারলেও অনেকে নিখোঁজ থাকেন। নৌকাডুবির পরপরই স্থানীয়রা নৌকা নিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করেন। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা নামেন তল্লাশিতে।

পঞ্চগড় (panchagarh) ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক শেখ মাহবুব ইসলাম জানান, গত রোববার ২৫ জনের লাশ উদ্ধারের পর রাতে নদীতে তল্লাশি সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছিল, গতকাল সোমবার ভোর সাড়ে ৫টায় নতুন করে উদ্ধার অভিযান শুরু হয়।

রাজশাহী, (rajshahi) রংপুর ও কুড়িগ্রাম থেকে আসা ডুবুরি দলও এখন অভিযানে অংশ নিচ্ছেন। গতকাল সকালে করতোয়া এবং পাশের দিনাজপুরের আত্রাই নদীর বিভিন্ন স্থানে মরদেহ ভেসে উঠলে স্থানীয়রা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়।

পরে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয় বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা। নিহতদের স্বজনরা করতোয়া নদীর পাড়ে প্রিয়জনের লাশের জন্য অপেক্ষা করছেন।

তাদের আহাজারিতে সেখানে এক হৃদয়বিদারক অবস্থা তৈরি হয়েছে। প্রায় ২৪ ঘণ্টা পরেও লাশ না পেয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
আট মাস বয়সী শিশুসন্তান সম্পদ রায়কে সঙ্গে নিয়ে বেঁচে যাওয়া ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিপাশা চন্দ্র রায় (৩২) বলেন, নৌকাত ওঠার সময় দুলতে ছিল।

মাঝিরা কইছিল কিছুই হবে না। যাওয়া যাবে। অনেক চাপাচাপি করে নৌকাখান ছাড়ল। স্বামী, দুই সন্তান ও শাশুড়িসহ উঠছিলাম। দুলতে দুলতে মাঝখানে গিয়ে উল্টে গেল। আমার বুকে বাচ্চাটা ছিল।

বাম হাত দিয়ে বাচ্চাটা ধরে রাখছি আর ডান হাত দিয়ে নৌকা। আমার পুরো শরীর ডোবা। পানির নিচে অনেকক্ষণ ডুবেছিলাম। তারপর আর কিছু বলতে পারছি না। পরে ঘাটে এসে জ্ঞান আসে।

আমি আর বাচ্চাটা পড়ে আছি। কে ঘাটে নিয়ে আসছে কিছু বলতে পারছি না। কিন্তু আমার মেয়েটাকে এখনো খুঁজে পাইনি। আমার মেয়ের সন্ধান চাই। লাশটা হলেও আমাকে উদ্ধার করে দিন।

বোদা থানার ওসি সুজয় কুমার রায় বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, স্রোতের টানে হয়তো অনেক লাশ আশপাশের নদীতে ভেসে গেছে। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করছে।

বোদা উপজেলার পাশেই দেবীগঞ্জ উপজেলা; তার পরেই দিনাজপুরের খানসামা উপজেলা। সোমবার সেখান থেকে সাতটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ নিখোঁজদের উদ্ধার করে স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে বলেও জানান ওসি।

পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার তুষার কান্তি রায় বলেন, সোমবার ভোর ৬টা থেকে রংপুর, কুড়িগ্রাম ও রাজশাহীর তিনটি ডুবুরি ইউনিট উদ্ধার কাজ করে। ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

অতীত অভিজ্ঞতা ও নদীর প্রবাহ দেখে মনে হচ্ছে, ভুক্তভোগীদের কেউ দুর্ঘটনাস্থলে নেই। তারপরও প্রত্যেক ভুক্তভোগীকে উদ্ধারে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। গতকাল সকাল থেকে উদ্ধার হওয়া ১৬ মরদেহের নাম-পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি।

এর আগে গত রোববার নারীও শিশুসহ ২৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তারা হলেন-শ্যামলী রানী (১৪), লক্ষী রানী (২৫), অমল চন্দ্র (৩৫), শোভা রানী (২৭), দীপঙ্কর (৩), পিয়ন্ত (২.৫), রুপালী ওরফে খুকি রানী (৩৫), প্রমিলা রানী (৫৫), ধনবালা (৬০), সুনিতা রানী (৬০), ফাল্গুনী (৪৫), প্রমিলা দেবী (৭০), জ্যোতিশ চন্দ্র (৫৫), তারা রানী (২৫), সনেকা রানী (৬০), সফলতা রানী (৪০), হাশেম আলী (৭০), বিলাস চন্দ্র (৪৫), শ্যামলী রানী ওরফে শিমুলি (৩৫),  উষশী (৮), তনুশ্রী (৫), শ্রেয়শী, প্রিয়ন্তী (৮), সনেকা রানী (৬০) ও ব্রজেন্দ্রনাথ (৫৫)।
তদন্ত কমিটির প্রধান ও পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপঙ্কর রায় বলেন, এখন পর্যন্ত ৪১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

কয়েকজন বাদে বাকি সবার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গত রোববার নিখোঁজ ছিল ৬৫ জন। গতকাল সকাল থেকে ১৬ জনের লাশ পাওয়া গেছে। নিখোঁজ বাকিদের উদ্ধারে কাজ চলছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোলেমান আলী বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসবের মহালয়া উপলক্ষে শতাধিক মানুষ শ্যালো ইঞ্জিনচালিত একটি নৌকায় করে বদেশ্বরী মন্দিরের দিকে যাচ্ছিলেন।

ঘাট থেকে নৌকাটি কিছু দূর যাওয়ার পর দুলতে শুরু করে। এ সময় মাঝি নৌকাটি ঘাটে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে নৌকা ডুবে যায়। নৌকার যাত্রীদের অনেকেই সাঁতরে তীরে ওঠেন। তাঁদের চিৎকারে স্থানীয় লোকজন উদ্ধারকাজে যোগ দেন এবং পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে উদ্ধারকাজ শুরু করেন।

এদিকে গতকাল সোমবার দুপুরে পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য ও রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান, ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, মৃত ব্যক্তিদের সৎকার ও দাফন প্রক্রিয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া মৃত ব্যক্তিদের প্রতি পরিবারকে এক লাখ করে টাকা দেওয়া হবে।

এ ছাড়া ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে ২৫ হাজার করে টাকা দেওয়া হবে। দুর্ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত রোববার দুপুরে বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের আউলিয়ার ঘাট এলাকায় নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। মহালয়া উপলক্ষে মাড়েয়া বাজার এলাকার আউলিয়া ঘাট থেকে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে ৮০ জনের বেশি যাত্রী বড়শশী ইউনিয়নের বদেশ্বরী মন্দিরে (নদীর অপর পাড়ে) যাচ্ছিলেন। তবে মাঝ নদীতে নৌকাটি ডুবে যায়। এ সময় কয়েকজন সাঁতরে তীরে ওঠেন। ঘটনাস্থলেই ১৭ জনের মৃত্যু হয়।

হাবিবুর রহমান

Recent Posts

বাংলাদেশে হিটস্ট্রোকে উপজেলা মহিলা ভাইসচেয়ারম্যান প্রার্থীসহ  ৪ মৃত্যু, স্থগিত নির্বাচন

ঢাকা: বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে চলেছে। ইতিমধ্যে অতি গরমের ফলে হিটস্ট্রোকে ৩৭ জন মারা গিয়েছেন।…

1 week ago

বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহে রেললাইন বেঁকে ট্রেন চলাচল বিঘ্ন

ঢাকা: বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহে রেললাইন বেঁকে ট্রেন চলাচল বিঘ্ন ঘটছে। যাকে রেলের ভাষায় বলা হয়…

1 week ago

সাপ্তাহিক রাশিফল

মেষ রাশির জাতক জাতিকাদের জন্য সপ্তাহটি ভালোই হতে চলেছে। অর্থ উপার্জন হবে। সমাজে সম্মান বাড়বে।…

1 week ago

বাংলাদেশে তাপদাহে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুনঈশ্বরদীতে রেললাইনের পাত বেঁকে গেছে

ঢাকা: বাংলাদেশে চলতি বছর সীমাহীন তাপদাহে মানুষের জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশে সরবোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে…

1 week ago

আপনার আজকের দিনটি

সিংহ: আজকের দিনটি আপনার জন্য নতুন কিছু শেখার দিন হবে। ভাগ্যের দিক থেকে দিনটি ভালোই।…

1 week ago

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত

ঢাকা: বাংলাদেশে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে আবুল কালাম (২৫)…

2 weeks ago