৭১ এর মুক্তিযোদ্ধা বারিকের জীবন চলছে জুতা সেলাই করে ! দেশ স্বাধীন করার এই পুরস্কার ! শুধু এখানেই কাহিনি শেষ নয়। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁর স্বীকৃতির জন্যে প্রয়োজন উপযুক্ত নথি ও সাক্ষী ! তবেই তিনি হবেন মুক্তিযোদ্ধা !
বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে আজ ৪৫ বছর। কিন্তু বীর কাজী আব্দুল বারিকের কপালে জোটেনি কোন মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি। জীবন কোথায় নিয়ে গেছে। জীবনের যাপন চলছে বড্ড নিষ্ঠুর লড়াই করে। আজ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে লাভ করেননি কোন আর্থিক সাহায্য !
যোদ্ধা বারিক থাকেন কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার পৌর শহরের দেশোয়ালি পাড়ার রামচরণ চৌধুরি রোডে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে। আপনারা ভাবছেন তিনি থাকেন নিজস্ব কোন ছাউনিতে ! না তা নয়। সেই ছাউনিও নেই তাঁর। তিনি থাকেন মেয়ের বাড়িতে। তাঁর ৫ মেয়ে ১ ছেলে। সকলেই যে যার সংসারে ব্যস্ত। মা–বাবাকে দেখার মতো মন কারোরই নেই। এদিকে তাঁর স্ত্রীও অসুস্থ ! যোদ্ধাকেও বার্ধক্য গ্রাস করছে। কিন্তু তাতে কী ? জীবন যুদ্ধে তো তিনি হার মানতে শেখেননি! তাই জুতো সেলাই করেই দিন গুজরান করছেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এই যোদ্ধা সরাসরি ৮ নং সেক্টর থেকে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ভারতের বিহার প্রদেশের চাকুলিয়া থেকে ক্যাপ্টেন গৌর সিং এর কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। মহাযোদ্ধা বারিক কমাণ্ডার আমীর আলির অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন।
এদিকে আর এক ঘটনাও সংঘটিত হয় মুক্তিযুদ্ধ শেষে। বারিককে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত করা হয় না। কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে যে, যুদ্ধ শেষে তিনি কুষ্টিয়া পুলিশের টিয়াই ওয়ান আজিজ মিয়াঁর কাছে অস্ত্র জমা করেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কুষ্টিয়া জেলা ইউনিট কমাণ্ড ও প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে, যোদ্ধা বারিকের কাছে তিনি যে মুক্তিযোদ্ধা তার সকল প্রমাণ পত্র নেই । তাই তাঁকে ,মুক্তিযোদ্ধা’র আখ্যা থেকে বঞ্চিত করা হয় !
এরপর ২০০৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর মাসে জেলা প্রশাসক ও মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সভাপতির কাছে আব্দুল বারিক তাঁর কাছে যে সমস্ত মুক্তিযুদ্ধের কাগজপত্র রয়েছে সেগুলোসহ একটি লিখিত আবেদন জানিয়েছিলেন। আবেদনের ভিত্তিতে এক বছর পর ২০০৮ সালের ২৭ নভেম্বর তাঁকে কমিটির পক্ষ থেকে একটি নোটিশ পাঠানো হয়। এবং ২০০৯ সালের ৯ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে সকাল ১০ টায় যোদ্ধা বারিককে উপস্থিত হতে বলা হয়। কিন্তু যিনি ক্ষুন্নিবৃত্তি নিবারণের জন্যে জুতা সেলাই করছেন ! সকাল ১০ টায় যিনি জুতা সেলাইতে মগ্ন থাকেন, তিনি হাজিরা দেবেন কি করে ?
মুক্তিযোদ্ধা কেবল দেশ স্বাধীনই করলেন ! স্বীকৃতি পেলেন না। সেদিন দেরিতে হাজিরা দেওয়ায় তাঁকে জানানো হয় সময়ে না আসার জন্যে কিছু করা হবে না । হায়রে যোদ্ধা !
এরপরও তিনি আবেদন জানিয়েছেন, কিন্তু সবাই চুপ !
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা খোদেজা খাতুন বলেছেন, তাঁকে যদি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি নিতে হয়, তাহলে অবশ্যই সমস্ত কাগজ ও সাক্ষী যোগাড় করে আনতে হবে।
মানুষের আশা তো মরে না। তাই মুক্তিযোদ্ধা বারিকের আশাও মরে নি। সে আশা মৃত্যুর আশা !
যোদ্ধার স্বীকৃতি পান বা না পান, বর্তমানের স্বপ্ন শুধু সাদা কাফনের উপর এক টুকরো লাল সবুজের পতাকা !