আজ বৃহস্পতিবার ৭১ এর নারী যোদ্ধা হেলেন করিমের দ্বিতীয় প্রয়াণ দিবস। দুঃসাহসী যোদ্ধাকে চোখের জলে স্মরণ করবে টাঙ্গাইল বাসী । এতিমখানা ও মিরপুর বুদ্ধিজীবি কবরস্থানে হেলেন স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে ।
‘নহি দেবী,নহি সামান্যা নারী’ । দেবীও নন, সামান্যও নন । অথচ অসামান্যতার পরিচয় রেখেছেন ইতিহাসের পাতায়।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকা ছিল সক্রিয় । অস্ত্র হাতে বীর বিক্রমে যুদ্ধ করেছেন তাঁরা । কাজ করেছেন দলে চিকিৎসক হিসেবে, সেবিকা হিসেবে।
মির্জা হেলেন করিম ৩ মাসের দুধের শিশুকে ঘরে রেখে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বুকে বল নিয়ে। গয়লাহোসেন চরে ছেলেদের পাশাপাশি সমান তালে প্রশিক্ষণ নেন বীরাঙ্গনা হেলেন। বিভিন্ন কৌশলে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছেন ।
পুরুষ যোদ্ধাদের সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে অস্ত্র নিয়ে চর অঞ্চল এবং নদী তীরবর্তী এলাকায় সতর্ক পাহারা দিতেন হেলেন এবং আরো কয়েকজন নারী মুক্তিযোদ্ধা। এরপর রাজাকারেরা জেনে ফেলায় বেল্কুচি আর্মি ক্যাম্পের পাক সেনাবাহিনী হামলা চালায় তাঁদের ওপর। ঘটনায় ধর্ষিতা হন একজন মুক্তিযোদ্ধা। হেলেন দায়িত্ব পান মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রেনেড সরবরাহের। তিনি পাতিলের ভেতর গ্রেনেড রেখে ওপরে ডিম চেপে নিয়ে যেতেন দূর দূরান্তে !
বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের মেয়ে হেলেন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর কালে বদরুন্নেসা মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন। সে সময় থেকেই ছাত্র–সংগঠনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে পড়েন ।
বংগবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণই তাঁর জীবন পালটে দেয়। অগ্নিতেজে পূর্ণ সেই ভাষণ তাঁর বুকের ছাইচাপা আগুনে অক্সিজেন যোগায়। হয়ে ওঠেন তেজস্বী।
যোদ্ধা হেলেন খেলাঘর আসর ছাড়াও নানা রকম সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্য ছিলেন।
২০১৭ সালের ২ মে বীরাঙ্গনা হেলেন ইহলোক ত্যাগ করেন। মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় নশ্বর দেহ দাফন করা হয়। তাঁর চার পুত্রের মধ্যে মেজ পুত্র মির্জা মেহেদি তমাল বাংলাদেশ প্রতিদিন এর রিপোর্টিং বিভাগের প্রধান পদে রয়েছেন।
কঠিন ব্রতে অংশ নিয়ে বিশ্ববাসীর হৃদয়ে নিজের পরিচিতি দিয়ে গেছেন যোদ্ধা হেলেন ।