ঢাকা: বাংলাদেশে বান্দরবানে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান সমন্বয়ক চেওসিম বমকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। রোববার বিকেল সাড়ে ৩টায় বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১৫ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন এ তথ্য জানান।
গ্রেফতারকৃত চেওসিম বম (৫৫) বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের ৬ নাম্বার ওয়ার্ড শারন পাড়া এলাকার মৃত রোয়াল খুব বমের ছেলে। তার বাড়ি থেকে দুটি বন্দুক উদ্ধার করা হয়েছে।
তবে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বান্দরবানে আমাদের অভিযান শুরু হয়ে গেছে। কেএনএফ যখন তাদের সবকিছু জাহির করে ফেলেছে তখন তারা ধীরে ধীরে সন্ত্রাসী বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আমরা কম্বাইন্ড অপারেশন শুরু করেছি।
র্যাব-১৫ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চেওসিম বমের বাড়ি ঘেরাওয়ের পর ভেতরে প্রবেশ করে র্যাব। কিন্তু কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। একপর্যায়ে ঘরের স্টিলের আলমারির ভেতর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আলমারিতে লুকিয়ে ছিলেন।
তার কাছ থেকে দুটি বন্দুক উদ্ধার করা হয়েছে। চেওসিম বম কেএনএফের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক।
কেএনএফ প্রধান নাথান বমের সঙ্গে চেওসিম বমের আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে জানিয়ে এইচ এম সাজ্জাদ বলেন, বান্দরবানে কেএনএফের সশস্ত্র হামলা ও ব্যাংক লুটের বিষয়ে আমরা চেওসিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। একইসঙ্গে কেএনএফ প্রধান নাথান বম কোথায় আছে, তাও জানার চেষ্টা করবো।
কারা হামলা করেছে, কাদের সহযোগিতা ছিল তাও জিজ্ঞাসাবাদ করবো।পাশাপাশি তার সহযোগীদের অবস্থান ও পরিকল্পনা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।
চেওসিম বম বান্দরবান জেলায় প্রথম কেএনএফের কমিটি গঠন করেছিলেন উল্লেখ করে এইচএম সাজ্জাদ আরও বলেন, জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার নেতা শামীম মাহফুজ এবং নাথান বমের সঙ্গে অর্থের বিনিময়ে দুই সংগঠনের সদস্যদের প্রশিক্ষণের চুক্তি নিজ বাড়িতে বসে করেছিলেন চেওসিম।
এখনও নাথান বমের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয় বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন র্যাব-১৫-এর উপ-অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ শরীফুল আহসান এবং কোম্পানি অধিনায়ক সিপিসি-৩ স্কোয়াড্রন লিডার তৌহিদুল মুবিন খানসহ র্যাব কর্মকর্তারা।
এর আগে শনিবার থেকে বান্দরবানে সন্ত্রাসী সংগঠনটির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে র্যাব। অভিযানে অংশ নেন এলিট ফোর্সটির শতাধিক সদস্য। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন গত শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযানের কথা জানান। রবিবার থেকে বান্দরবানের থানচি ও রুমা উপজেলায় শুরু হয় যৌথ অভিযান।
তবে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বান্দরবানে আমাদের অভিযান শুরু হয়ে গেছে। কেএনএফ যখন তাদের সবকিছু জাহির করে ফেলেছে তখন তারা ধীরে ধীরে সন্ত্রাসী বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আমরা কম্বাইন্ড অপারেশন শুরু করেছি।
গতকাল রবিবার বেলা সাড়ে ১২টার সময় সদর সেনা জোনের মাঠে এক মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যে দায়িত্বগুলো বিশেষ করে যৌথ অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া তা পেশাদারিত্বের সঙ্গে পালন করবো।
আমাদের অলরেডি পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে অভিযান চালিয়ে কয়েকজন সন্ত্রাসীকে আটক এবং ২টি অস্ত্র উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। তবে এ অস্ত্রগুলো লুটে নেওয়া অস্ত্র কিনা তা জানতে পারিনি। সরকার আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে আমরা সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছি। এখানে পুলিশের কাজ পুলিশ, র্যাবের কাজ র্যাব এবং সেনাবাহিনীর কাজ সেনাবাহিনী আলাদাভাবে করে যাচ্ছে। কিন্তু পরে আমরা এগুলো একত্রিত করছি।
সেনাপ্রধান বলেন, আমরা যা করছি তা কিছু দৃশ্যমান; যা আপনারা স্বচক্ষে দেখতে পারবেন। আবার কিছু কাজ আপনারা পরবর্তী সময়ে দেখতে পাবেন। আগে থেকে কেএনএফ’র ব্যাংকে হামলা, লুট কিংবা ম্যানেজারকে অপহরণের ব্যাপারে কোনও তথ্য ছিল না। গত ৩১ মার্চ বমদের বিভিন্ন গীর্জায় সহায়তা দেওয়া হয়। এতে তারা খুশিও ছিল। হঠাৎ ২ এপ্রিল রাতে তারা হামলা চালায়, যা বিশ্বাস করার মতো নয়।
এ ব্যাপারে সরকারের নির্দেশমতো কাজ করে যাবেন বলেও জানান তিনি। এ সময় সেনাপ্রধানের সঙ্গে বান্দরবান সেনা কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার রাতে এবং গত বুধবার দুপুরে রুমা ও থানচি উপজেলার কৃষি ও সোনালী ব্যাংকের তিনটি শাখায় হামলা চালায় পাহাড়ের সন্ত্রাসী গ্রুপ কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) শতাধিক অস্ত্রধারী। তারা টাকা লুট করে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধর করে, একজন ব্যাংক ব্যবস্থাপককে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে ওই ব্যাংক কর্মকর্তাকে উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ ও আনসারের ১৪টি অস্ত্র ও গুলি লুট করে নিয়ে যায়। এসব ঘটনায় কেএনএফ জড়িত বলে নিশ্চিত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।