লেখাপড়া ! মাত্র দুই ক্লাস। পেশায় কাঠমিস্ত্রী। কিন্তু মন ? আকাশের মত উদার, ফুলের মত কোমল। বড় মনের অধিকারী হবার জন্যে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন হয় না, প্রমাণ করলেন বাংলাদেশের জসিমুদ্দিন। ৩৫ বছর বয়সী মানুষটিকে সকলে এক নামে চেনে ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ হিসেবে ।
তিনি ২০১৬ সালে নিজের প্রচেষ্টায় বাড়িতে গড়ে তোলেন একটি গ্রন্থাগার। নাম দিয়েছেন ‘কমিউনিটি লাইব্রেরি’। গ্রন্থাগারে বইয়ের সংখ্যা ১০০০, সদস্য সংখ্যা তিন শতাধিকের ওপর। জসিমুদ্দিনের লাইব্রেরি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বই পড়ার সুযোগ দিয়েছে গ্রামের মানুষদের। তিনি সমাজের জন্যে কাজ করছেন, অথচ তাঁর প্রতিবন্ধী ভাইয়ের জন্যে কোন ভাতার ব্যবস্থা নেই বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ।
‘এই ধরনের ব্যতিক্রম একটা কাজ কেন তিনি করলেন’ ? প্রশ্নের উত্তরে ফেরিওয়ালা যে কথা বলেন তাতে চোখে জল আসে। ‘ছোটবেলায় আমার পড়ার প্রতি খুব আগ্রহ ছিল, কিন্তু বাবা চলে যাওয়ায় তা হয়নি। তবে আমি মাঝে মাঝে বিভিন্ন সূত্র থেকে বই সংগ্রহ করে পড়তাম, ধীরে ধীরে এর পরিমাণ বাড়তে থাকে, একসময় এ রকম একটা লাইব্রেরি গড়ার সিদ্ধান্ত নিই’। তাঁর পাঠাগারে বই পড়তে আসে স্কুল কলেজের ছাত্র থেকে শুরু করে খেটে খাওয়া মানুষরা পর্যন্ত। পাঠক জানিয়েছেন, তাঁদের জীবনে আলোর দিশারী জসিমুদ্দিন।
কেউ বলে পাগল, কেউ গাঁজাখোর ! কিন্তু জসিমুদ্দিন নিজের কর্মে অবিচল।
নিজে পড়তে না পারলেও গ্রামের অর্ধশিক্ষিত মানুষগুলো বইপড়ে নিজেদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে পারবে, গ্রামের উন্নতি হবে, এই তাঁর নিঃস্বার্থ আশা ।