ওপার বাংলা

বাংলাদেশের চট্টগ্রামে খোদ পুলিশ বক্সে জঙ্গী বোমা হামলাঃ শিশু-পুলিশসহ আহত ৫

বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রামের একটি পুলিশ বক্সে শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী।তবে এ বোমা হামলার জন্য শনিবার( ২৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় পুলিশ একটি মামলা দায়ের করলেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। গত শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে নয়টার দিকে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ষোলশহর দুই নম্বর গেইট এলাকায় ট্রাফিক বক্সে বিস্ফোরণে কমপক্ষে পাঁচজন আহত হন।

আহতরা হলেন- ট্রাফিক সার্জেন্ট আরাফাত, পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আতাউদ্দিন, স্থানীয় দুই যুবক জাহিদ বিন জাহাঙ্গীর ও মো. সুমন এবং আনুমানিক ১০ বছর বয়সী এক শিশু। তদন্তকারি সংস্থাগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো এই বোমা বিস্ফোরনের জন্য কোন জঙ্গী সংগঠনকে দায়ী না করলেও অনানুষ্ঠাকিভাবে বোমা বিশেষজ্ঞরা বলছেন এটি কোন জঙ্গী সংগঠনেরই নাশকতা। কারন গত ২০১৯ সালে রাজধানী ঢাকাতে পুলিশের ওপর যে ধরনের বোমা বিস্ফোরনের ঘটনা ঘটেছিল সেসব বিস্ফোরনে যেসব আলামত পাওয়া গিয়েছিল চট্টগ্রামেও প্রায় একই ধরনের আলামত পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন তারা।

চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহরে ট্রাফিক পুলিশ বক্সে বিস্ফোরণের ঘটনাটি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ( সিএমপি) প্রশাসনকে মারাত্মকভাবে উৎকন্ঠিত করে তুলেছে। হঠাৎ করে খোদ পুলিশ বক্সেই এই বোমা হামলার পর সিএমপি কর্তৃপক্ষ তাদের সব স্থাপনাতে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা জারি করেছে নতুন করে যে কোন নাশকতা বা জঙ্গী হামলা ঠেকাতে। বিস্ফোরনটি যে শুধুমাত্র সাধারন সন্ত্রাসী নাশকতা নয় সে বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত হলেও ঘটনা তদন্তে জড়িত কোন কর্মকর্তা বা সংস্থাই বলছেন না যে বিস্ফোরনটি কোন জঙ্গি সংগঠন ঘটিয়েছে। যতক্ষন পর্যন্ত কোন জঙ্গী সংগঠন এই বিস্ফোরনের দায় স্বীকার করবেনা ততক্ষন পর্যন্ত পুলিশ কর্মকর্তারাও নিশ্চিত করে কিছু বলবেন না যে এটি জঙ্গীদের পরিকল্পিত হামলা- এমনটাই বললেন তারা অনানুষ্ঠানিকভাবে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রামের এই বিস্ফোরণের সঙ্গে গত বছর ঢাকায় পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলার ‘ বেশ কিছুটা’ মিল আছে। ঢাকায় পুলিশের ওপর হামলাকে জঙ্গী হামলা হিসেবেই চিহ্নিত করেছিল পুলিশ।

এটি কি দেশীয় না আন্তর্জাতিক কোন জঙ্গী সংগঠনের স্থানীয় সহযোগী সংগঠন তাও তদন্তকারি সংস্থার কর্মকর্তারা তদন্ত করে দেখছেন। তারা আপাতত: বলছেন , উদ্ধার করা আলামত পর্যালোচনা করে সেখানে স্থানীয়ভাবে তৈরি ‘বোমার’ বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে বলে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। তবে দুর নিয়ন্ত্রিত বা অন্য কোন পদ্ধতিতে এই বিস্ফোরন ঘটানো হয়েছে সে বিষয়ে এখনও অন্ধকারে রয়েছে আছে পুলিশ। নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেইট এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সে বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্ত করছে ঢাকা থেকে আসা এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের ১১ সদস্যের দল। তাদের কাছে উদ্ধার হওয়া বিভিণœ আলামতও দেয়া হয়েছে বলে জানান সিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আমেনা বেগম। স্থানীয়ভাবে সিএমপি, নগর গোয়েন্দা পুলিশ, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন, সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটও তদন্ত করছে।

সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান বলেছেন, নাশকতার উদ্দেশে এই বিস্ফোরণের বিষয়ে আমরা মোটামুটি নিশ্চিত হলেও কি পদ্ধতিতে এই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে সেটা নিশ্চিত হতে পারিনি, কিছুটা সময় লাগবে। তবে শুক্রবার রাতেই সিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম জানান, জব্দ আলামত পর্যালোচনায় দেখা গেছে- নাশকতার জন্য ইম্প্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস বা নিজস্ব উদ্ভাবনী কৌশল ও প্রযুক্তি প্রয়োগ করে তৈরি বোমা ব্যবহার করা হয়েছে। এটি স্থানীয়ভাবে তৈরি করা। ঘটনাস্থলে জিআই পাইপ ও বেয়ারিং বল জাতীয় পদার্থের টুকরা পাওয়া গেছে। দূর নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতি ব্যবহার করে নাকি বক্সের ভেতরে আগে থেকে রাখা বোমাটি অন্য কোনো সার্কিটের সঙ্গে সংযুক্ত করে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে সে বিষয়ে অারো তদন্তের প্রয়োজন বলে মনে করছেন তদন্তকারি সংস্থাগুলো।

তবে তদন্ত সংশ্লিষ্ট নগর পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল থেকে আলামত হিসেবে পাইপ সদৃশ যে বিস্ফোরকের আলামত উদ্ধার করা হয়েছে, একই ধরনের আলামত এর আগেও বিভিন্ন জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধার হয়েছে। ঢাকায় পুলিশের যেসব স্থাপনায় হামলা হয়েছিল, সেখানেও একই ধরনের বিস্ফোরক ব্যবহার হয়েছিল বলে জানা গেছে পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছ থেকেই। গত বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্নস্থানে পুলিশ বক্স ও পুলিশের গাড়িতে অন্তত: পাঁচদফা বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। সব বোমাই দূর নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল বলে জানিয়েছিল পুলিশ। ঢাকায় হামরার ঘটনায় প্রথমে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস দায় স্বীকার করেছে বলে খবর প্রকাশ হলেও পরে পুলিশ জানিয়েছিল, ওই হামলা নব্য জেএমবির।

এদিকে ঘটনা তদন্তে শনিবার সকালে ঢাকা থেকে সহকারি পুলিশ সুপার শাওন কুমার সরকারের নেতৃত্বে রাজধানী ডাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়া এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থলে যান। তারা বিস্ফোরণের পর আলামত সংগ্রহকারী কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে কেউই সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।

এন ই নাও নিউজ

Recent Posts

বাংলাদেশে হিটস্ট্রোকে উপজেলা মহিলা ভাইসচেয়ারম্যান প্রার্থীসহ  ৪ মৃত্যু, স্থগিত নির্বাচন

ঢাকা: বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে চলেছে। ইতিমধ্যে অতি গরমের ফলে হিটস্ট্রোকে ৩৭ জন মারা গিয়েছেন।…

1 week ago

বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহে রেললাইন বেঁকে ট্রেন চলাচল বিঘ্ন

ঢাকা: বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহে রেললাইন বেঁকে ট্রেন চলাচল বিঘ্ন ঘটছে। যাকে রেলের ভাষায় বলা হয়…

1 week ago

সাপ্তাহিক রাশিফল

মেষ রাশির জাতক জাতিকাদের জন্য সপ্তাহটি ভালোই হতে চলেছে। অর্থ উপার্জন হবে। সমাজে সম্মান বাড়বে।…

1 week ago

বাংলাদেশে তাপদাহে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুনঈশ্বরদীতে রেললাইনের পাত বেঁকে গেছে

ঢাকা: বাংলাদেশে চলতি বছর সীমাহীন তাপদাহে মানুষের জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশে সরবোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে…

1 week ago

আপনার আজকের দিনটি

সিংহ: আজকের দিনটি আপনার জন্য নতুন কিছু শেখার দিন হবে। ভাগ্যের দিক থেকে দিনটি ভালোই।…

1 week ago

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত

ঢাকা: বাংলাদেশে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে আবুল কালাম (২৫)…

1 week ago