ঢাকা: মাতৃভাষার দাবিতে তরুণ কয়েকজন ভাষা সৈনিকের ওপর পাকিস্তানি পুলিশের গুলিতে ওই শহীদের রক্তে ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত হয়েছিল। ১৯৫১ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারির এই ঘটনার পথ বেয়ে বাঙালি জাতির উন্মেষ ঘটে।
সামনে চলে আসে স্বাধীনতার দাবি। এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি তার স্বাধীনতা লাভও করে। যে কারণে ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙালির মননে উদ্দীপণা জাগায়।
এদিন ভোরে বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলা-উপজেলা-থানা-গ্রাম-গঞ্জে গড়ে ওঠা শহীদমিনারে ফুল দিয়ে সালাম-বরকতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। আগের দিন সন্ধ্যা থেকে পরের দিন রাত অবধি চলে নানা অনুষ্ঠান।
২১শে ফেব্রুয়ারি আসতে হাতে মাত্র একদিন বাকি। এবার ‘একুশের আলপনায় মাগুরা’ এই শিরোনামে দেশের দক্ষিণ জনপদ জেলা মাগুরায় প্রথমবারের মতো জেলা শহরে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোকে আলপনার রঙে সজ্জিত করা হয়েছে ।
মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য তথা ক্রিকেটের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের সহযোগিতায় মাগুরার চিত্রশিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মী, সাহিত্যিক-সাংবাদিকসহ এক ঝাঁক স্বেচ্ছাসেবক এর উদ্যোগে এ কর্মসূচিটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
শহরের প্রাণকেন্দ্র চৌরঙ্গীর মোড়সহ অধিকাংশ মোড় ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সামনে এ আলপনা চিত্র আঁকা হয়েছে। প্রবীণ শিল্পী থেকে শুরু করে শিশু-কিশোর আকিয়েরা গভীর রাত পর্যন্ত আলপনার রঙে রঙিন করছে পিচঢালা রাজপথ।
এ প্রসঙ্গে মাগুরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রবীণ আবৃত্তি শিল্পী পঙ্কজ কুণ্ডু বলেন, একটি উদার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে নতুন প্রজন্মের মধ্যে একুশের চেতনা জাগ্রত করতেই এ উদ্যোগ।
সে কারণেই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার মাগুরা-১ এর সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানের সহযোগিতায় নতুন প্রজন্ম এই আলপনা চিত্র এঁকেছেন। যা মাগুরাকে নতুন পরিচয়ে পরিচিত করেছে । মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর রেজভি জামান বলেন – আলপনা বাঙালি সংস্কৃতির প্রাচীন ঐতিহ্য।
এ ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত করার এমন উদ্যোগ- আসা জাগানিয়া। এই ধারাটি অব্যাহত রাখতে সবার সহযোগিতা চাই। মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ কলিমুল্লাহ বলেন -সংস্কৃতির চর্চার মধ্য দিয়ে মানুষের মনের মানবিক বিকাশ অপরাধ প্রবণতা কমাতে সাহায্য করে।
এ ধরণের শুভ কাজ নতুন প্রজন্মকে আরো বেশি আলোকিত করবে। মাগুরা জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আনিসুর রহমান খোকন বলেন – শুধু মাগুরা শহরই এ অঞ্চলে এই প্রথমবারের মতো রাজপথে বৃহৎ আঙ্গিকে আলপনা করা হলো। মানুষের মনে এই আলপনা চিত্র ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সমন্বয়কারী সংগঠন পরিবর্তনে আমরাই এর উপদেষ্টা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক খান শফিউল্লাহ বলেন, অমর একুশের চেতনা নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে আলপনা চিত্র অঙ্কনের এ দুরুহ কাজটি যারা সম্পন্ন করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
শিশু চিত্রশিল্পী আতিকা ইসলাম তিহা জানায়, বাবার সঙ্গে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এখানে আলপনা আঁকতে পেরে খুব আনন্দ লাগছে। আর এ কারণেই ঘুমও আসে না। একইভাবে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করছে কঙ্কনা, প্রথম, তুলিসহ প্রায় দেড়শ স্বেচ্ছাসেবী শিল্পী।
এছাড়া মাগুরা সাইক্লিস্ট, বিডি ক্লিন, ভলেন্টিয়ার্স ফর বাংলাদেশ, মাগুরা আর্ট ইনস্টিটিউট, অঙ্কিতা আর্ট স্কুল, জেলা শিল্পকলা আকাডেমির চিত্রশিল্প বিভাগ, মাগুরা আদর্শ বিতর্ক সংঘ, সুরধ্বনি সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্র, মাগুরা সংগীত একাডেমী, বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদ, সপ্তক সাহিত্য চক্র, স্পৃহা সাহিত্য চক্র, কবিতা পরিষদ- মাগুরা, নজরুল সংগীত শিল্পী পরিষদ, উচ্চাঙ্গ সংগীত সমন্বয় পরিষদ, রং ও তুলি আর্ট স্কুলসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
মহান একুশে’র মহত্ব নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে শহরের ভায়নার মোড় থেকে চৌরঙ্গীর মোড় হয়ে নোমানি ময়দান শহীদ বেদী পর্যন্ত এবং নতুন বাজার -কেশব মোড় থেকে চৌরঙ্গীর মোড় হয়ে ঢাকা রোড পর্যন্ত আলপনা আকার কর্মসূচি নেওয়া হয়।
এ কর্মসূচির পেইন্ট পার্টনার হিসেবে রয়েছে এশিয়ান পেইন্টস। কর্মসূচির মিডিয়া পার্টনার হিসেবে আছে মাগুরা জার্নালিস্ট নেটওয়ার্ক ও মাগুরা টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘পরিবর্তনে আমরাই’ কর্মসূচিটির সমন্বয় করছে।