বাংলাদেশে আর যেন কাউকে নতুন কোনও ‘লজ্জা’ লিখতে না হয়। দেশে শান্তি, সম্প্রীতি বজায় রাখার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সমাজের বুদ্ধিজীবিদের কড়া বার্তা দিলেন লেখক তসলিমা নাসরিন।
কোন প্রকার ধর্মীয় বিবাদ দেশে কাম্য নয়। তসলিমা লিখেছেন, ভারতের দাঙ্গার জন্যে বাংলাদেশের হিন্দুরা দায়ী নয়। তাঁদের গায়ে যেন একটি আঁচও না লাগে, সেদিকে সুতীক্ষ্ণ নজর দিন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। যে কোন প্রতিকূল পরিস্থিতি কঠোর হাতে দমন করা উচিৎ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর।
নয়া দিল্লির কাণ্ড অত্যন্ত ঘৃণ্য। এবং এর জন্যে বাংলাদেশের হিন্দুরা কোনভাবেই দায়ী নয়। সে দেশের মুসলমানদের অবশ্যই সেখানে কোনও হিন্দুকে আক্রমণ করা উচিত নয়। তাঁদের বাঁচান শেখ হাসিনা।
“বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার পর বাংলাদেশে হিন্দুর ওপর আক্রমণ করেছিল মুসলিম মৌলবাদিরা। ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে। আমি তখন বাংলাদেশে। নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা ভীত সন্ত্রস্ত হিন্দুর পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। লিখেছিলাম লজ্জা। গত ক’দিনে ভারতে যে দাঙ্গা হলো, তার পেছনে বাংলাদেশের হিন্দুর কোনও ভূমিকা নেই। বাংলাদেশে কোনও ধর্মান্ধ প্রতিশোধপরায়ণ মুসলমান যেন একজন হিন্দুর ওপরও হামলা না চালায়। সরকার এবং বোধবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ যেন রোধ করে নিরীহ সংখ্যালঘুর ওপর যে কোনও ধরণের আক্রমণ। আর যেন কাউকে নতুন কোনও ‘লজ্জা’ লিখতে না হয়।”
নয়া দিল্লির ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের কোন মুসলমানের আক্রমণাত্মক হওয়া উচিৎ নয়। ধর্মের বিবাদ নয়। মানবতার বার্তা ছড়াক চারদিকে। জীবনের থেকে, শান্তির থেকে ধর্ম বড় নয়। এটি বুঝতে শিখুক মানুষ।
উল্লেখযোগ্য যে, ভারতের দিল্লির হিংসার পরিপ্রেক্ষিতে মুজিব বর্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে কোনমতেই আসতে পারবেন না বলে প্রবল প্রতিবাদী কার্য চলছে।
রবিবার, মোদিকে আমন্ত্রণ না জানানোর দাবিতে রাজপথে নেমেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা।
ক্যাম্পাসের ভাস্কর্য চত্বরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে সমাবেশ করে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ ও ইসলামি শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন।
এদিকে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরের গলায় শোনা যাচ্ছে প্রবল প্রতিবাদ, “মোদি বাংলাদেশে এলে ছাত্রসমাজের রক্তের গঙ্গা বয়ে যাবে।”
সমাজের বুদ্ধিজীবি, মুক্তচিন্তকরা এমন প্রতিবাদের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘সমাজ রক্তের গঙ্গা চায় না। শান্তি চায়। ধর্মীয় বিবাদ বন্ধ হোক। মানুষের চেয়ে ধর্ম বড় নয় কোনদিন।’
এদিকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কড়া বার্তা দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন,
“মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সাহায্যকারী এবং সবচাইতে বড় মিত্র দেশ হলো ভারত। বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে ভারতের প্রতিনিধিত্বকে আমরা বাদ দেবো-এটাতো চিন্তাও করা যায় না।”
তসলিমা আরো লিখছেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু যখন অত্যাচারিত হয়, তখন সংখ্যাগুরুরা চেয়ে চেয়ে দেখে। জমিজমা দখল করে, নিজেরাই সংখ্যালঘুর বাড়ি, উপাসনালয় পুড়িয়ে দেয় — তারা যে এখন কী ভীষণ উদবিগ্ন ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতা কেন রক্ষা হচ্ছে না, ভারতে কেন সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করছে সংখ্যাগুরুরা — এ নিয়ে। তুই যেটা করিস, সেটা অন্যরা করলে সহ্য করতে পারিস না কেন? এই প্রশ্নটা কে করবে? করলেই কুৎসিত গালি।
“তুমি যেটা নিজের ওপর চাও না, সেটা তুমি অন্যের ওপর কোরো না। সভ্য হওয়ার এটিই তো প্রথম শর্ত।”
শুধু নেতিবাচক, অশান্তির বার্তা কেন ছড়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায়? ছড়াক সম্প্রীতির বার্তাও ! যখন হিন্দু মুসলমানের মসজিদ পাহার দেয়, এবং মুসলমান হিন্দুর মন্দির।
একই গলি। মসজিদের কিছু দূরেই মন্দির। (নয়া দিল্লি) অশান্তির উত্তাপের রেশ টের পেতেই মন্দির আগলালেন মুসলিমরা, হিন্দুরা পাহারা দিলেন মসজিদ।
এলাকার বাসিন্দা ফয়জান বলেন, “আমাদের এই অঞ্চলে হিন্দু-মুসলমানের কোনও বিভেদ নেই। আমাদের শৈশব মন্দির এবং মসজিদেই কেটেছে। খবরটি ছড়িয়ে পড়ার কিছুক্ষণ পরে, এক দল জনতা মন্দিরের পাশ থেকে গলিতে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল। উভয় উপাসনালয়ে আক্রমণ করতে চেয়েছিল তাঁরা। তবে আমরা প্রতিরোধ করেছি।”