ওপার বাংলা

Bangladeshএ মহামারি আকারে ছড়াচ্ছে Dengue, চিকিৎসা খরচ জোগাতে হিমশিম নিম্নবিত্তরা

ঢাকা: বাংলাদেশে Bangladesh বর্ষা শেষে শীত কড়া নাড়ছে দুয়ারে। আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের মধ্যেও তীব্র আকার ধারণ করেছে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু Dengue। এখন পর্যন্ত সারা বাংলাদেশে ৫১ জেলায় ডেঙ্গু Dengue আক্রান্তের খবর মিলেছে।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। সরকারের স্বাস্থ্যবিভাগ বলছে-প্রতিদিন অসংখ্য ডেঙ্গুরোগী Dengue বেসরকারি হাসপাতালে ছুটছেন। রোগীর চাপে রাজধানীর কোনো হাসপাতালেই বিছানা ফাঁকা নেই।

আবার বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু Dengue রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল। ফলে চিকিৎসা নিতে হিমশিম খাচ্ছে নিুবিত্ত পরিবারগুলো। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত দেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৩২ হাজার ৭১৬ জন।

এর মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ২৯ হাজার ৪৬৬ জন রোগী। আর ডেঙ্গু Dengue আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১১৮ জন। ডেঙ্গুরোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে সরকারি হাসপাতালগুলো। বেসরকারি হাসপাতালগুলোও চিকিৎসা দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারছে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অক্টোবরে এসে ডেঙ্গুর Dengue এই বাড়বাড়ন্ত একটু অস্বাভাবিক। শীত নামলেই কমে যাবে।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকার সরকারি হাসপাতালগুলো সামর্থ্যরে বাইরেও রোগী ভর্তি করতে বাধ্য হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কোভিড হাসপাতালটিতে এখন ডেঙ্গুরোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

প্রতিদিন এক হাজার বা এর কাছাকাছি মানুষ এডিস মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আক্রান্তদের বড় একটি অংশ আবার শিশু। ডেঙ্গু Dengue আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক আসাদ শিকদার মারা গেছেন।

সরেজমিনে রাজধানীর বাড্ডা এলাকার লাজ ফার্মাসহ বিভিন্ন ফার্মেসিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জ্বরের ওষুধ নিতে আসা ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই ডেঙ্গু Dengue আক্রান্তের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে আসছেন।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ঢাকা মেডিকেল, সোহরাওয়ার্দী ও বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোর কোনোটিতেই শয্যা খালি নেই।

কিন্তু আমরা রোগীদের ফেরত পাঠাতে পারি না। যেভাবেই হোক চিকিৎসা দিচ্ছি। আমরা চাই না ২০১৯ সালের মতো গুরুতর পরিস্থিতি তৈরি হোক। এজন্য হাসপাতালগুলোতে আলাদা ডেঙ্গু ইউনিট চালু করতে হবে। পর্যাপ্ত ফ্লুইড সরবরাহ করতে হবে।

প্রতিটি ওয়ার্ডে মশারি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। রোগী যদি মশারি না নিয়ে আসে, তাহলে হাসপাতাল থেকেই ব্যবস্থা করতে হবে।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক ডেঙ্গুর ভয়াবহতা জানিয়ে বলেন, এখন প্রত্যেক জেলায় ডেঙ্গুরোগী পাওয়া যাচ্ছে। হাসপাতালে তিন হাজারের বেশি রোগী ভর্তি। আমরা চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি।

কিন্তু রোগীর সংখ্যা না কমলে মৃত্যুর সংখ্যা কমানো কঠিন। তাই মানুষকে সচেতন হতে হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, শিগগির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার বিকল্প নেই।

যেসব এলাকায় মশা বেশি সেসব এলাকায় স্থানীয় প্রশাসনকে অ্যাকটিভ হতে হবে। যেন মশা কমে আসে, আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যতটা সম্ভব সহযোগিতা করা হবে।

রোগীর স্বজনরা বলছেন, রাজধানীতে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গু। প্রতিদিনই শত শত মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন এ ভাইরাসে। আর চিকিৎসাব্যয় মেটাতে আর্থিকভাবে সর্বস্বান্ত হচ্ছে বহু নিুবিত্ত ও নিুমধ্যবিত্ত পরিবার।

কারণ একসঙ্গে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় ডেঙ্গু চিকিৎসা ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে। তাদের অভিযোগ, দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ঘুরেও ভর্তির সুযোগ মিলছে না। কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে অসংখ্য ডেঙ্গুরোগী বহির্বিভাগ বা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

যেখানে তাদের চিকিৎসাব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেক হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা করাতে গেলে নানা শর্ত ও পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। মূলত চিকিৎসকের ফি, একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ওষুধের খরচ, যাতায়াত খরচ, হাসপাতালের বিছানা বা কেবিন ভাড়া, ইনটেনসিভ করোনারি কেয়ার ইউনিট (আইসিসিইউ), হাইডিপেন্ডেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ), ভেন্টিলেশন সাপোর্টে (লাইফ সাপোর্ট) বিল মেটাতে হচ্ছে। যা নিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন নিুবিত্ত ও নিুমধ্যবিত্ত পরিবারগুলো।

অধিকাংশ রোগীর পরিবার জানিয়েছে, সাধারণ অবস্থায় একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর জন্য প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার সিবিসি টেস্ট, ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা বেড ভাড়া ও ৫০০ থেকে ৭০০ টাকার ওষুধ কিনতে হয়। যদি রোগীর পরিস্থিতি অবনতি হলে এ খরচ কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

ডেঙ্গুর চিকিৎসা খরচের বিষয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গত বছরের তথ্য বলছে, একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় ব্যয় হচ্ছে গড়ে ৩৩ হাজার ৮১৭ টাকা।

তবে সরকারি হাসপাতালগুলোয় এ চিকিৎসায় খরচ করতে হয় ২২ হাজার ৩৭৯ টাকা আর বেসরকারি হাসাপাতালে রোগীপ্রতি গড় খরচ ৪৭ হাজার ২৩০ টাকা।

চিকিৎসকের ফি, পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ, ওষুধের খরচ, যাতায়াত খরচ, হাসপাতাল বিল ইত্যাদি, সম্মিলিত ব্যয়কে একজন রোগীর মোট খরচ হিসেবে দেখানো হয়েছিল ওই গবেষণায়।

তাতে দেখা গেছে, এক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালের রোগীপ্রতি ৬ হাজার ৭৬ টাকা খরচ হয়। নিুবিত্ত ও নিুমধ্যবিত্ত পরিবারগুলোকে তাদের মোট আয়ের ১৩৯ শতাংশ পর্যন্ত ডেঙ্গু চিকিৎসায় ব্যয় করেছিল।

সংশ্লিষ্ট পারিবার তাদের সঞ্চয়, বন্ধুবান্ধব এবং আÍীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ঋণ বা সম্পদ বিক্রি করে এ ব্যয়ের অর্থ জোগান দিয়েছে।

সরেজমিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত বেশ কয়েকটি পরিবারের কথা বলে এমনটাই জানা গেছে। অন্যদিকে রাজধানীর নামি বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এ খরচ লাখের কাছাকাছি পৌঁছেছে।

সেখানে বেড ভাড়াসহ সবখরচ তুলনামূলক বেশি। আর ডেঙ্গু রোগীর শরীরে প্লাটিলেট দেওয়া বা আইসিইউতে রাখার প্রয়োজন হলে খরচ কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

টানা নয়দিন রাজধানীর হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ছেলে সমুজ্জ্বল সামুকে চিকিৎসা করিয়েছেন সাবিনা ইয়াসমিন। চিকিৎসা বাবদ তাকে গুনতে হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা।

যা এ পরিবারের একমাত্র সঞ্চয় ছিল। সাবিনা ইয়াসমিন জানান, হাসপাতালে থাকাবস্থায় এ খরচ তার বড়ভাই দিয়েছিলেন। পরে পরিবারের একমাত্র ডিপিএসটি (সঞ্চয়) ভেঙে তা পরিশোধ করেন। খরচের ভয়ে প্রথমে তিনি ছেলেকে নিয়ে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন।

কিন্তু কোথাও সিট (বিছানা) না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে ছেলেকে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ভর্তি করেছেন।

মুদিদোকানি এজাজুল হক জানান, তার এক ছেলে ও এক মেয়ে ডেঙ্গু আক্তান্ত হয়েছিল। সপ্তাহখানেক আগে ডেঙ্গু থেকে সেরে উঠেছেন মেয়ে।

তিনদিন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ হওয়া খরচ কিছুটা কম হয়েছে। তিনি আরো জানান, ছেলেকে প্রথমে তিনি বাড়িতেই চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরে মুগদা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করান।

সেখানে তিনদিনে প্রায় ১১ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে তার। আর আগে বাড়িতে চারদিনে খরচ হয়েছে আট হাজার টাকা। তবে, খরচের বেশিভাগ রক্তের সিবিসি পরীক্ষা ও চার ব্যাগ রক্ত সংগ্রহের পেছনে ব্যয় হয়। এছাড়া তরল ও ফলমূল খাওয়ার পেছনেও অর্থের বড় একটি অংশ ব্যয় হয়।

বিআইডিএসের গবেষক ড. আব্দুর রাজ্জাক সরকার বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সবধরণের চিকিৎসার ব্যয় কষ্টসাধ্য। এর মধ্যে ডেঙ্গুর খরচ বেশি ভোগাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে একই পরিবারের একাধিক সদস্য এ রোগে ভুগছে। এমন হচ্ছে তারা আর্থিক সামর্থ্য হারিয়ে ফেলছেন। তিনি বলেন, এ জন্য সরকারের ডেঙ্গু বিস্তাররোধ কার্যক্রমের পাশাপাশি হতদরিদ্র মানুষের চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। এ রোগে প্রচুর তরল খাবার প্রয়োজন, যেগুলো খুব বেশি ব্যয়বহুল, সেসব খাবারের ব্যবস্থা করা গেলে ভালো।

অন্যদিকে, ২০১৯ সালে ডেঙ্গু রোগ শনাক্তের জন্য সবধরনের পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ব্যয় নির্ধারণ করেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সে সময় রাজধানীর সব বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে সরকার নির্ধারিত খরচের মধ্যে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী-ডেঙ্গুর মূল পরীক্ষা এনএসওয়ানের জন্য সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা, আইজিজি ও আইজিএম এই দুটি পরীক্ষার জন্য ৫০০ টাকা। এ ছাড়া সিবিসি পরীক্ষার জন্য ৪০০ টাকা নেওয়া যাবে। তবে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া কিছু রোগীর স্বজন অভিযোগ করেন, তারা আইজিজি ও আইজিএম পরীক্ষায় ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা খরচ করেছেন।

হাবিবুর রহমান

Recent Posts

বাংলাদেশে হিটস্ট্রোকে উপজেলা মহিলা ভাইসচেয়ারম্যান প্রার্থীসহ  ৪ মৃত্যু, স্থগিত নির্বাচন

ঢাকা: বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে চলেছে। ইতিমধ্যে অতি গরমের ফলে হিটস্ট্রোকে ৩৭ জন মারা গিয়েছেন।…

4 days ago

বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহে রেললাইন বেঁকে ট্রেন চলাচল বিঘ্ন

ঢাকা: বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহে রেললাইন বেঁকে ট্রেন চলাচল বিঘ্ন ঘটছে। যাকে রেলের ভাষায় বলা হয়…

5 days ago

সাপ্তাহিক রাশিফল

মেষ রাশির জাতক জাতিকাদের জন্য সপ্তাহটি ভালোই হতে চলেছে। অর্থ উপার্জন হবে। সমাজে সম্মান বাড়বে।…

5 days ago

বাংলাদেশে তাপদাহে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুনঈশ্বরদীতে রেললাইনের পাত বেঁকে গেছে

ঢাকা: বাংলাদেশে চলতি বছর সীমাহীন তাপদাহে মানুষের জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশে সরবোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে…

6 days ago

আপনার আজকের দিনটি

সিংহ: আজকের দিনটি আপনার জন্য নতুন কিছু শেখার দিন হবে। ভাগ্যের দিক থেকে দিনটি ভালোই।…

6 days ago

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত

ঢাকা: বাংলাদেশে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে আবুল কালাম (২৫)…

6 days ago