ঢাকা: Bangladeshএ Corona পরিস্থিতি এখন অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে। সংক্রমণ কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে কমেছে মৃত্যুও। এতে এই রোগ নিয়ে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-আশঙ্কা কমেছে।
বেশির ভাগ মানুষ প্রাণঘাতী এ ভাইরাস নিয়ে এখন এতটা নিঃশঙ্ক যে মাস্ক ব্যবহার ও হাত ধোয়া কমে গেছে ব্যাপক। ঠিক এমন সময় বাংলাদেশজুড়ে বাড়ছে dengue র প্রকোপ।
আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। ঢাকায় dengue আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। প্রতিদিন ১২-১৫ জন আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। এর বাইরেও অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন, যারা এখনো বুঝে উঠতে পারেননি, তাদের সংখ্যা বহুগুণ।
Dengue প্রতিরোধ, বংশবিস্তার ও প্রজনন ধ্বংস করতে না পারলে এবার ভয়ংকর রূপ নেবে ডেঙ্গি। এ বছর আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর এই পরিস্থিতির জন্য আমাদের দায়িত্বহীনতাই দায়ী। এবার বছরের শুরু থেকেই বিশেষজ্ঞরা বলে আসছিলেন যে এবার Dengue ভয়বহ হবে। কারণ এডিস মশার উপস্থিতি অনেক বেশি পাওয়া যাচ্ছিল।
কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ডেঙ্গু মশার চার ভাগের তিন ভাগই হচ্ছে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত স্থাপনায়। আর এক ভাজ বাসাবাড়িতে। নগরবাসিকে সচেতন হতে হবে। কিন্তু বাকি তিন ভাগ মশার দায় কার? মেয়র নগরবাসীকে দায়ী করছেন।
কিন্তু তারা কি দায়িত্ব পালন করেছেন? বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন করোনা এবং Dengueর উপসর্গ প্রায় একই রকম হওয়ায় বিভ্রান্তি বাড়ছে। তাই এখন করোনা এবং Dengue র টেস্ট একই সঙ্গে করানো জরুরি।
Dhaka য় দুই সিটির ৯৮টি ওয়ার্ডের ১১০টি স্থানে ডেঙ্গির প্রকৃত অবস্থা নিয়ে মাঠপর্যায়ে সমীক্ষা চালিয়েছে সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা। জরিপে উত্তর সিটির ৬৩টি এবং দক্ষিণ সিটির ৯৬টি বাড়িতে এডিস মশা অতিরিক্ত মাত্রায় চিহ্নিত হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে প্লাস্টিক ড্রামে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায় ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ, সেখানে ২০২২ সালে মৌসুম পূর্ব জরিপে লার্ভার পরিমাণ দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ২৩ দশমিক ৯৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
সারা বাংলাদেশে গত একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নতুন করে ৯১৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া Dengue রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৭৫ জনে।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছে আরও ৬ জন। এ নিয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত Dengue তে ১৯৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার সারা বাংলাদেশে পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত Dengue বিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, Dengue আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে নতুন ভর্তি হওয়াদের মধ্যে ৫৩০ জন ঢাকার বাসিন্দা। ঢাকার বাইরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৮৮ জন। বর্তমানে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২ হাজার ২৪ জন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি আছেন এক হাজার ২৫১ জন।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে শনিবার পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৭ হাজার ৬৭০ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৪৪ হাজার ১৯৬ জন।
এ দিকে, সারা দেশে করোনা শনাক্ত অনেক কমেছে। সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় ২২ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৩৬ হাজার ১৩১ জনে। এ সময়ে করোনায় কারও মৃত্যু হয়নি।
ফলে মৃতের সংখ্যা ২৯ হাজার ৪২৬ জনে অপরিবর্তিত রয়েছে। শনিবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ১৫৪ জন। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৯ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মোশতাক আহমেদ বলেন, কভিড বিদায় নিয়েছে, এটা বলা যাবে না। কারণ রোগতাত্ত্বিকভাবে এটা এখনো মহামারি পর্যায়ে রয়ে গেছে। ভাইরাসটির তীব্রতা কমেছে। একই সঙ্গে মানুষ পরীক্ষা করা কমিয়ে দিয়েছে, যে কারণে শনাক্তের সংখ্যা কমে এসেছে।
যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড ইউনিভার্সিটির সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট খোন্দকার মেহেদী আকরাম বলেন, কভিড রোগী কমে যাওয়া, এতে মৃত্যু কমে আসার পেছনে কারণ হলো টিকা গ্রহণ ও ভাইরাসের মিউটেশন। এতে ভাইরাসটি একদিকে দুর্বল হচ্ছে, অন্যদিকে টিকা নেওয়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়েছে।
তিনি বলেন, করোনা এখন হয়তো মৌসুমি রোগের মতো হবে। যুক্তরাজ্যে শীতের দিকে সংক্রমণ বাড়ে। বাংলাদেশে হয়তো মৌসুমি ফ্লুর সময় সংক্রমণ বাড়বে। তবে আগের মতো মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি করার আশঙ্কা নেই।
কভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, কভিড থাকবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
বর্তমানে ভাইরাসটি প্যান্ডামিক নয়। এমন পরিস্থিতি হলেও আমাদের মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। মাস্ক অন্যান্য রোগ থেকেও বাঁচাবে। যেমন এবার অ্যাজমা রোগী কমেছে। অনেকের নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করায় এবার অ্যাজমা হয়নি।
কভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, কভিডের ওমিক্রন ধরন থাকলে হয়তো নতুন কোনো ঢেউ আসবে না। এলে হয়তো ওমিক্রনের সাব-ভ্যারিয়েন্ট আসতে পারে। কিন্তু সেটা এখনো বলার সময় হয়নি।
জানা যায়, গত বছরের পুরো ১২ মাসের সঙ্গে এই বছরের জুলাই মাসের ১৮ দিন তুলনা করলে আক্রাস্ত প্রায় সমান। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ১২ মাসে আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৩৯২ জন।