স্বর্গে সুরাসুরের যুদ্ধ, মর্তে রাম-রাবণের যুদ্ধ। সবেতেই যুদ্ধ আর দখলদারি। এবার দখলদারি থেকে বাদ গেল না গণকবরও। বাংলাদেশে ১৯৭১ এ একই গ্রামে মর্মান্তিক ভাবে ব্রাশফায়ারে হত্যা করা ৪২ জন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে। এখন সেই কবরস্থান দখল হয়ে গড়ে উঠেছে ‘পির সাহেবের খানকাহ শরিফ’।
বিশ্বে বিভিন্ন ‘এন্সাইক্লপিডিয়া’য় ৩০ লাখ বীর শহিদের কথা উল্লেখিত হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে। স্বপ্নের স্বাধীনতা রক্তের বিনিময়ে এসেছে। দখলের ঘটনায় মর্মাহত ‘যুগীশো গ্রামে’র শহিদ বিভারণ চন্দ্র প্রামাণিকের ছেলে বীরেন্দ্রনাথ প্রামাণিক। তথ্যানুযায়ী, এলাকার রুস্তম আলি ‘আওয়ামী লিগ’নেতা নির্বিকার ভাবে গণকবর দখল করে ‘খানকাহ শরিফ’ নির্মাণ করান।
১৯৭১ এর ২২ অক্টোবর ‘যুগিশো’ ও ‘পালশা’ গ্রামের কালা দিন। কাল হয়ে হঠাৎই দুপুর সাড়ে ১২ টায় হানা দেয় রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় পাক-বাহিনি। এই কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের কিছু ঘাতক দোসর পাকিস্তান বাহিনিকে সাহায্য করে। ‘শান্তি কমিটি’র ইউনিয়ন সমন্বয়কারি আব্দুল আজিজ সরকারের ডাকে গ্রামবাসীরা সরল বিশ্বাসে একটি বাঁশ ঝাড়ের নিচে জমায়েত হয়। পাক বাহিনি নিজস্ব ছন্দে হিন্দু-মুসলিম কে আলাদা করে এবং মুসলিম সম্প্রদায়কে সে স্থান ত্যাগ করতে বলেন। হিন্দুদের মাটিতে উপুড় করে শুইয়ে নির্বিচারে মেশিনগান দিয়ে ব্রাশফায়ার করা শুরু করে। এক এক করে ৪২টি নিরীহ প্রাণ শরীর ছাড়ে। নারকীয় ঘটনায় উল্লাস বোধ করে অসুররা। নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হওয়া ২২ অক্টোবরেই বাঁশঝাড়ের নিচে ৪২ জনকে কবর দেওয়া হয়। শুক্রবার সকালে জানা যায়, নিরীহ ৪২ জনের গণ কবরের ওপর ‘খানকাহ শরিফ’ নির্মাণ করা হয়, তার নাম দেওয়া হয় ‘শাহ সুফি হযরত তৈয়ব আলি’র ‘’খানকাহ শরিফ’। স্থানীয় সূত্রে খবর, পালশা গ্রামের ‘আওয়ামি লিগ’ নেতা রুস্তম আলি নাটোরের তৈয়ব আলির একান্ত ভক্ত। গুরুর নামানুসারে এই নামকরণ করেন তিনি। তৈয়ব আলি ১০ বছর আগেই মারা গেছেন। আওয়ামি নেতা রুস্তম আলি বিশেষ ক্ষমতাশালি হয়ে ওঠেন ১৯৯৬ সালে আওয়ামি লিগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর. ৪-৫ শতক জায়গার ঐ গণকবরে মোটে ৬০ হাজার টাকা খরচ করে এক হাত মতো উঁচু একটি প্রাচির তৈরি হয় এবং সাথে শহিদ ৪২ জনকে সম্মান জানিয়ে নামফলক বসানো হয়। যেখানে জেলা পরিষদ গণকবর সংরক্ষণের জন্য এক লাখ টাকা সাহায্য দিয়েছিলেন। রুস্তমের জমি সীমানার কাছাকাছিই ছিল,পরে সেখানে বসতি গড়ে তোলা হয় যদিও শহিদ দিবসে ৪২ শহিদকে শ্রদ্ধার্ঘ জানানোর কোন ব্যাবস্থা রাখা হয় না। সেজন্য জেলা পরিষদের অনুদানে আরেকটি শহিদ মিনার গড়ে তোলা হয়।উদ্বোধন করেন সেসময়ের সাংসদ সদস্য নাদিম মোস্তাফা।
২০০১ সালে সংসদ নির্বাচনে ‘বিএনপি-জামায়েত জোট’ সরকার হিসেবে এলে রুস্তমের হম্বিতম্বি কিছু কমে।কিন্তু ২০০৮ সালে ‘আওয়ামি লিগ’ আবার ক্ষমতায় এলে পরে তিনি আওয়ামি লিগের সহ সভাপতি নিযুক্ত হয়ে আরো নিষ্ঠুর হয়ে ওঠেন। নির্মম ভাবে ৪২ হিন্দু শহিদের নাম ফলক ভেঙে পুরো এলাকা নিজের দখলে নিয়ে নেন। গ্রামের মাসুদ জানান প্রতি মাসের শেষ বৃহস্পতিবারের রাতে গানের আসর, গাঁজার হাট বসান বেপরোয়া রুস্তম। গ্রাম-বাসিরা ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। যদিও কিছুটা গ্রাম-বাসির চাপে ৪২ হিন্দুর নাম ফলক দেওয়ালে আট্কানো মাত্র রয়েছে।
রীতিমতো পির সেজে ভক্ত আশেকান্দের নিয়ে রাজত্ব কায়েম রেখেছেন তিনি, অভি্যোগ বীরেন্দ্রনাথ বাবুর। রুস্তমের দাবী, তিনি গণকবর কিনে নিয়েছেন। কিন্তু কার কাছ থেকে কিনেছেন তার সত্যতা প্রমাণ করতে এখনো পারেননি। ৭১ এর ৪২ হিন্দু শহিদের শ্রদ্ধার গণকবর রুস্তম দখল মুক্ত করার জন্য সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন, বীরেন্দ্র প্রামাণিকের এখন এটাই একমাত্র আশা।