প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশের নারীর মৃত্যুর হার অধিক থেকে অধিকতর হচ্ছে। সমীক্ষা তাই বলছে। তবে এই মৃত্যু কোন স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। প্রবাসি বাংলাদেশি নারীদের মধ্যে বৃদ্ধি পাচ্ছে আত্মহত্যার মাত্রা।
ব্র্যাকের এক সমীক্ষা বলছে, গত তিন বছরে ৪৪ জন নারী শ্রমিকের বিদেশে আত্মহত্যার খবর রয়েছে। এছাড়া পথ দুর্ঘটনায় ৫০ জন, স্ট্রোকে মারা গেছেন ১১০ জন, স্বাভাবিক মৃত্যুর সংখ্যা মাত্র ৫৯ জনের ! এর মধ্যে ২০১৬ সালে আত্মহত্যা করেছেন ১ জন নারী, ২০১৭ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ জনে, ২০১৮ সালে ২৩ জন, আর ২০১৯ সালে বর্তমান সময় পর্যন্ত আত্মহত্যার সংখ্যা ৮ জন। আত্মহত্যা করা নারীদের মোট সংখ্যা যদি আমরা ২০০৫ সাল থেকে হিসেব করি, তাহলে দেখব যে, ২০০৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৭৯৩ জনের নিথর দেহ বাংলাদেশে ফিরে এসেছে।
সম্প্রতি, আরেকটি মর্মান্তিক ঘটনা সংঘটিত হয়। মৌসুমি আক্তার পরিবারের মুখে দু–মুঠো অন্ন তুলে দেবার জন্যে পাড়ি দিয়েছিলেন জর্ডানে ২০১৭ সালে। কাজ নিয়েছিলেন গৃহকর্মীর। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে দুই বছরের মধ্যে তাঁর নশ্বর দেহ দেশে ফিরে আসে। মৌসুমির ডেথ সার্টিফিকেটে উল্লেখ করা ছিল তিনি স্ট্রোক করেছেন। মৌসুমির পরিবার তাঁর মৃত্যুকে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারেনি। পরিবার জানিয়েছে, মৌসুমি নির্যাতন পেয়ে অথবা অন্য কোন গুরুতর কারণে মারা গেছেন।
আশ্চর্যজনক বিষয়টি হল, যাঁদেরই নশ্বরদেহ ভিনদেশ থেকে স্বদেশে এসে পৌঁছচ্ছে, তাঁদের অধিকাংশের ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ স্ট্রোক বলে উল্লেখ করা থাকছে। বেশিরভাগ মৃতদেহ এসেছে মধ্য প্রাচ্যের মত দেশগুলো থেকে। বিশেষ করে সৌদি আরব থেকে।
অন্যদিকে ব্র্যাকের এক প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে ২০১৬ সালে ৫৭ জন নারী শ্রমিক, ২০১৭ সালে ১০২ জন, ২০১৮ সালে ১১২ জন, ২০১৯ এর ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ২৩ জন নারী শ্রমিকের লাশ ঘরে ফিরে এসেছে। এর কারণ এখনো অতল অন্ধকারে !
বাংলার নারীরা ভিনদেশে যাচ্ছে জীবন বাঁচাতে, ফিরছে লাশ হয়ে !