• About
  • Privacy Policy
  • Copyright Policy
  • Disclaimer
  • Contact
Thursday, February 9, 2023
NorthEast Now (Bengali)
  • প্রচ্ছদ
  • অসম
  • ত্রিপুরা
  • পশ্চিমবঙ্গ
  • ওপার বাংলা
  • প্রবাসের খবর
  • বিনোদন
  • খেলা
  • জীবন শৈলী
  • স্বাস্থ্য
  • ভ্ৰমণ
No Result
View All Result
  • প্রচ্ছদ
  • অসম
  • ত্রিপুরা
  • পশ্চিমবঙ্গ
  • ওপার বাংলা
  • প্রবাসের খবর
  • বিনোদন
  • খেলা
  • জীবন শৈলী
  • স্বাস্থ্য
  • ভ্ৰমণ
No Result
View All Result
NorthEast Now (Bengali)
No Result
View All Result
Home ওপার বাংলা

বাংলাদেশ এখনো বাঁধা বুলি কপচিয়ে ব্যর্থতাগুলো ঢেকে রাখছেঃ মহান বিজয় দিবসে নির্বাসিত লেখক তসলিমা

সাগরিকা দাস by সাগরিকা দাস
December 16, 2019 3:22 pm
বাংলাদেশ এখনো বাঁধা বুলি কপচিয়ে ব্যর্থতাগুলো ঢেকে রাখছেঃ মহান বিজয় দিবসে নির্বাসিত লেখক তসলিমা
322
VIEWS
Share on FacebookShare on Twitter

“স্বাধীনতা শব্দটির অর্থ অনেক বড়। অর্থ না বুঝে শুধু স্বাধীনতা স্বাধীনতা বলে চেঁচালেই মানুষ স্বাধীন হয় না। দেশ ভর্তি ধর্মের, বৈষম্যের, পুঁজিবাদের, স্বৈরতন্ত্রের শেকলে বন্দি পরাধীন মানুষেরা আজ সারাদিন স্বাধীনতার গান গাইছে। গানগুলো বড় বেসুরো ।”

১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে নয় নয় করে ২০১৯ সাল। মাতৃভূমি থেকে নির্বাসিত তসলিমা নাসরিন। আজ ১৬ ডিসেম্বর। বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস সারা দেশজুড়ে উদযাপিত হচ্ছে। নেই কেবল তসলিমা। শূন্য সে আসন। সে ময়মনসিংহ।

পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে/ জ্বলন্ত ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে, নতুন নিশান উড়িয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক/ এই বাংলায়/ তোমাকে আসতেই হবে, হে স্বাধীনতা।

কবি শামসুর রাহমানের এই কবিতা একাত্তরের এই দিনে সত্যি হয়ে দেখা দিয়েছিল বাঙালি জাতির জীবনে।

৪৮ বছর আগে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এই ১৬ ডিসেম্বরে এসেছিল বাংলার স্বাধীনতা। এই দেশে উদিত হয়েছিল নতুন এক সূর্য। সে সূর্য কিরণে লেগে ছিল রক্ত দিয়ে অর্জিত বিজয়ের রঙ।

সেই রক্তের রঙ সবুজ বাংলায় মিশে তৈরি করেছিল বাংলার লাল সবুজ পতাকা। যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাত্তরের সাতই মার্চ ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বলে জাতিকে লড়াইয়ের ডাক দিয়েছিলেন সেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই পরাজয় মেনে নিয়ে মাথা নত করে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য অস্ত্র সমর্পন করেছিল বাঙালি জাতির বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে।

মহান বিজয় দিবস। বাঙালীর হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরব ও অহংকারের দিন।

অশ্রু এবং ক্ষোভ ঝরে পড়ছে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে মহান দেশপ্রেমিক, লেখক তসলিমার চোখ দিয়ে। সাড়া নেই অপরপক্ষের। তিনি মা-মা অবিরাম চিৎকার করে চলেছেন বুক ফাটিয়ে। সারা নেই মায়ের!

বুক ভেসে যায়, ভেঙে যায় তাঁর “আমার জন্যে অপেক্ষা করো মধুপুর, নেত্রকোনা” পাঠ করলে!

মহান বিজয় দিবসের এ দিনে স্বভূমি থেকে নির্বাসিত লেখক তসলিমা কি ভাবছেন, কিভাবে আজ ব্যক্ত করলেন তাঁর অব্যক্ত কান্না?

লিখছেনঃ

“বিজয় দিবস নিয়ে প্রতিবছরের মতো আদিখ্যেতা শুরু হয়ে গেছে বাংলাদেশে। ৩০ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে একটি স্বাধীন দেশ তারা পেয়েছে। মরি মরি! যে দেশে মেয়েদের সমানাধিকার পাওয়ার স্বাধীনতা নেই, যে দেশে দরিদ্রের দারিদ্র মোচনের স্বাধীনতা নেই, সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা পাওয়ার স্বাধীনতা নেই,, যে দেশে বাক স্বাধীনতা নেই, ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই, ইসলামের সমালোচনা করার স্বাধীনতা নেই, সরকারের ভুলকে ভুল বলার স্বাধীনতা নেই, সে দেশ আবার কেমন স্বাধীন। পতাকা উড়িয়ে আর বাঁধা কিছু বুলি কপচিয়ে ব্যর্থতাগুলো ঢেকে রাখা হচ্ছে বছরের পর বছর । পাকিস্তান আর বাংলাদেশে সত্যিই কি কোনও পার্থক্য আছে? ও দেশের মুক্তচিন্তকরা নির্বাসনে, এ দেশেরও। ওদেশে ইসলামতন্ত্র গণতন্ত্রের চেয়েও জনপ্রিয়। ‍এ দেশেও। মসজিদ মাদ্রাসা, টুপি দাড়ি বোরখা হিজাবে, অজ্ঞতায়, অন্ধতায় ছেয়ে গেছে দেশ। পাকিস্তানের সংগে হয়তো এইটুকুই পার্থক্য, ওখানকার লোকগুলো লম্বা লম্বা আর ফর্সা ফর্সা। এখানকারগুলো কালো আর বেঁটে।

আজও দেশটিতে কে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল, কে বিপক্ষে ছিল তা হিসেব করা হয়। ৪৮ বছর ধরে তাই হচ্ছে। কারও কারও মতে, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো, সুতরাং সব ভালো। অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো বলে কি দরিদ্রের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো? পাটকল শ্রমিকেরা তো মরছে। এক শ্রেণীর হাতে চিরকালই টাকা, এক শ্রেণী চিরকালই আনন্দে আহ্লাদে জীবন যাপন করে, এক শ্রেণী যে সরকারই আসুক, সে সরকাররই ঘরের লোক বনে যায়। স্বাধীনতা শব্দটির অর্থ অনেক বড়। অর্থ না বুঝে শুধু স্বাধীনতা স্বাধীনতা বলে চেঁচালেই মানুষ স্বাধীন হয় না। দেশ ভর্তি ধর্মের, বৈষম্যের, পুঁজিবাদের, স্বৈরতন্ত্রের শেকলে বন্দি পরাধীন মানুষেরা আজ সারাদিন স্বাধীনতার গান গাইছে। গানগুলো বড় বেসুরো ।”

তসলিমা নাসরিন! সারা বিশ্বেখ্যাত  একটি নাম। মুক্তচিন্তকের প্রতীক। কিন্তু সেই দিন থেকে একবিংশ শতাব্দীর আজকের দিন পর্যন্ত মনে তিলমাত্র শান্তি নেই। যুগে যুগে মানবতার পক্ষে লড়ে যাওয়া লেখক নাসরিনের সেই স্বপ্নের দেশটা আজও মুক্তচিন্তার অধিকারি হতে পারেনি।

ধর্মের, বৈষম্যের, পুঁজিবাদের, স্বৈরতন্ত্রের শেকলে আজও বন্দি জনগণ।

নারীবাদী ধর্মনিরপেক্ষ লেখক তসলিমা নাসরিন ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসের গৌরবোজ্জ্বল দিনে হাতে তেরঙ্গা পতাকা নিয়ে পালন করেছেন স্বাধীনতা দিবস।

সে দিনও বারংবার স্মরণ করেছেন ১৬ ডিসেম্বরের দিনটিকে। পদ্মা-মেঘনার বাংলা নির্বাসিত জীবনে তাঁর শয়নে-স্বপনে। বিজয় উৎসবকে স্মরণ করে নিজস্ব ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কান্নাভেজা অক্ষরে লিখেছেন, যা পড়লে যে কোন সহৃদয় পাঠকের অন্তর ভারাক্রান্ত হতে বাধ্য।

“১৬ই ডিসেম্বর এলে ছোটবেলায় বাড়ির ছাদে পতাকা ওড়াতাম। পাকিস্তানি শাসকের অত্যাচার থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পতাকা। সে পতাকা ছিল সবুজ, সবুজের ভেতর লাল সূর্য।

আজ ১৫ অগস্ট সকালে বাড়ির ছাদে পতাকা ওড়ালাম। ব্রিটিশের অত্যাচার থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পতাকা।

আমরা কি স্বাধীনতার মূল্য বুঝি? অধিকাংশই তো বুঝিনা। আমাদের দিশি শাসকেরা সেই শাসকদেরই অনুকরণ করেন, যাদের বিরুদ্ধে আমরা একসময় যুদ্ধ করেছিলাম।

তারপরও স্বাধীনতার পতাকা ওড়াও। শোষণ আর বঞ্চনার বিরুদ্ধে যে যার ঝাণ্ডা ওড়াও”।

মাতৃভূমিতে ফেরার আকূতি জানাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তসলিমা নাসরিন। খোলা চিঠি দিয়ে লিখেছেনঃ

‘মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,

আর ক’দিন পর আমার নির্বাসনের ২৫ বছর পূর্ণ হবে। ২৫ বছর! আপনি কি কল্পনা করতে পারেন এই ২৫ বছর কতটা দুঃসহ? আপনি আপনার পরিবারের সকলকে হারিয়েছেন, বিশ্বসুদ্ধ লোক সে কারণে দুঃখ করে, চোখের জল ফেলে আজও। আমিও এই দীর্ঘ নির্বাসনে আমার বাবা মা ভাই দাদা কাকা মামা খালা সবাইকে হারিয়েছি, যাদের কাছে যাওয়ার আমার কোনও অধিকার ছিল না গত ২৫ বছর। আজও নেই আমার নিজের দেশে ফেরার অধিকার। আমার এই বেদনার কথা বিশ্বের মানুষ জানে না, আমার জন্য তাই কেউ দুঃখও করে না, চোখের জলও ফেলে না।

অচেনা মানুষ হিসেবে এই চিঠি আপনাকে লিখছি না। আমাকে চেনেন আপনি। দেশে থাকাকালীন বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছিল আপনার সঙ্গে। তখন, নব্বই-একানব্বই সালে আপনাকে শুভাকাঙ্খী হিসেবেই আমি বিশ্বাস করতাম। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে মৌলবাদীদের মিছিল হওয়া, আমার মাথার দাম ঘোষণা হওয়া, লোকের ধর্মানুভূতিতে আঘাত করেছি এই অভিযোগে আমার বিরুদ্ধে খালেদা-সরকারের মামলা করা, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়া, দেশ ত্যাগ করতে আমাকে বাধ্য করার পর আমি অপেক্ষা করতাম আপনি কবে প্রধানমন্ত্রী হবেন।

আমি ভাবতাম আপনি প্রধানমন্ত্রী হলেই আমি দেশে ফিরতে পারবো। ঠিকই একদিন আপনি প্রধানমন্ত্রী হলেন। আমি অধীর আগ্রহে আপনার দিকে তাকিয়ে আছি, কিন্তু দেশে তো আমাকে ঢুকতে দিলেনই না, উল্টে ভয়ংকর একটি কাজ করলেন। নামে আমার আত্মজীবনী গ্রন্থ ‘আমার মেয়েবেলা’ নিষিদ্ধ করলেন। নিষিদ্ধ করার কারণ, আপনি জানালেন, বইটি অশ্লীল। আমার মেয়েবেলা আমার শৈশবের কাহিনী। এটিকে আপনি ছাড়া আর কেউ অশ্লীল বলেনি। বিদেশের অনেক ভাষায় বইটি ছাপা হয়েছে। গ্রন্থ-সমালোচকদের প্রশংসা পেয়েছে, পাঠকপ্রিয়তাও প্রচুর পেয়েছে, এমনকী বইটি বাংলা ভাষার অন্যতম একটি সাহিত্য পুরস্কারও পেয়েছে। বইটি আজও বাংলাদেশে নিষিদ্ধ।

সাধারণত যেসব সরকার মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, তারা বই নিষিদ্ধ করে। তখন বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাসী মানুষেরা সেইসব সরকারের বই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে মামলা করে। গণতান্ত্রিক দেশে মানুষ তাই করে। কিন্তু বাংলাদেশের গণতন্ত্র এমনই অদ্ভুত যে, আমার বই থেকে নিষিদ্ধকরণ তুলে নেওয়ার জন্য সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করার সাহস কারওর নেই। নাৎসিরা যখন বই পোড়াতো, তাদের বই পোড়ানোয় কেউ বাধা দিতে পারতো না। নাৎসি সরকারের বিরুদ্ধে কারও বুকের পাটা ছিল না মামলা করে। কিন্তু আপনি তো নাৎসি সরকার নন, কেন মানুষ আপনার সরকারকে ভয় পায়!

আপনি সম্ভবত বই নিষিদ্ধ করাটা শিখেছেন খালেদা জিয়ার কাছে। আপনি বই নিষিদ্ধ করার আগে খালেদা জিয়া আমার ‘লজ্জা’ বইটি নিষিদ্ধ করেছিলেন। খালেদা জিয়ার মতো আপনিও আমার বই পড়ার অধিকার থেকে বাংলাদেশের পাঠকদের বঞ্চিত করছেন। আপনি ‘আমার মেয়েবেলা’ বইটি নিষিদ্ধ করার পর খালেদা জিয়াও ক্ষমতায় এসে পরম উৎসাহে আমার আত্মজীবনী সিরিজের অনেকগুলো বই পর পর নিষিদ্ধ করলেন।

লক্ষ করার বিষয় যে, অন্য কারও বই নিষিদ্ধ করলে সরকারকে সামান্য হলেও ঝামেলা পোহাতে হয়। অন্যরা মামলা করে, হাইকোর্ট থেকে বইকে মুক্ত করিয়ে আনে। কিন্তু আমার বই নিষিদ্ধ করলে আপনাদের কোনও ঝামেলা পোহাতে হয় না। এই একটি মানুষ যাকে নিয়ে যা ইচ্ছে তাই করা যায়, যাকে অকারণে অপবাদ দেওয়া যায়, যাকে যত খুশি অসম্মান করা যায়, জঘন্য অপমান করা যায়—নিশ্চিত, কেউ টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করবে না।

আমার বেলায় দেশের অমৌলবাদীরাও মুহূর্তে মৌলবাদী হয়ে ওঠে। আমাকে কখনও আর দেশে ফিরতে না দিলেও, আপনি ভালো জানেন, খালেদা জিয়াও জানেন, আপনাদের কোনও অসুবিধে হবে না, আপনাদের জনপ্রিয়তায় কোনও আঁচড় পড়বে না।

আমি দেশে ফিরতে চেয়েছি। আপনি সোজা বলে দিয়েছেন, দেশে যেন না ফিরি। কেন নিজের দেশে আমি ফিরতে পারবো না, তার কোনও কারণ আপনি অবশ্য দেননি। ঠিক খালেদা জিয়া যেভাবে আমাকে দেশে ফিরতে দেননি, একই পদ্ধতিতে আপনিও আমাকে দেশে ফিরতে দেননি। আমার মা’ যখন মৃত্যুশয্যায়, আমি কত যে অনুরোধ করেছি মা’র শেষ দিনগুলোয় মা’র পাশে যেন কিছুদিন আমাকে থাকার অনুমতি দেন। আপনি অনুমতি দিলেন না।

শেষ পর্যন্ত আপনার রক্তচক্ষু অমান্য করে আমি দেশে ফিরেছিলাম। ভাগ্যিস আমার পাসপোর্টের তখনও বৈধতা ছিল। আমি দেশে ফিরেছি জানতে পেরে আপনি আমার ওপর এত ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন যে ঠিক খালেদা জিয়ার মতো আমার বিরুদ্ধে মামলা করে, আমার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে, একইরকম নাটক করে আমাকে দেশ থেকে তাড়ালেন। খালেদা জিয়া আর আপনার মধ্যে চুলোচুলি থাকলেও আমাকে লাঞ্ছিত করার ব্যাপারে আপনারা দু’জন কিন্তু একশ’ ভাগ এক।

আমার বাবা যখন দেশে মৃত্যুশয্যায়, তখন তাঁকে অন্তত দু’দিনের জন্য হলেও দেখতে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে কেঁদেছি, কিন্ত আপনি অনুমতি দেননি, আমার পাসপোর্ট পূনর্নবীকরণ করেননি। আমি ভেবেছিলাম, যেহেতু নিজের বাবাকে আপনি খুব ভালোবাসেন, আপনি হয়তো বুঝবেন, কোনও কন্যাকে একবার শেষবারের মতো তার বাবাকে দেখতে বাধা দেওয়া কতবড় অন্যায় কাজ। আমার বাবা মারা গেছেন, আমাকে তাঁর কাছে যেতে দেওয়া হয়নি।

আমাকে ২৫ বছর দেশে ফিরতে দিচ্ছেন না। সম্ভবত ফিরতে দেবেনও না কোনওদিন। বিদেশ বিভুঁইয়েই আমাকে বাকি জীবন পার করতে হবে। দেশে ফেরার আশা আজকাল আর করিও না। আমার সমস্ত আশা চূর্ণ হতে হতে হতে এখন অবশিষ্ট কিছু নেই। বিদেশে কী করে বাস করতে হচ্ছে আমাকে, তা, আমি জানি না, কতটুকু জানেন। তবে নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারেন যে, আমি ভালো নেই। বাংলাভাষার একজন লেখক বাংলার বাইরে বসে বাংলা ভাষায় বই লিখে বেঁচে থাকতে পারে না।

বিশেষ করে, সেসব বই যখন একের পর এক নিষিদ্ধ হয়, সরকারের ভয়ে যখন প্রকাশকরা বই ছাপানো বন্ধ করে দেয়, যখন বই ছাপায় জাল-বইএর প্রকাশকেরা অর্থাৎ চোরেরা, বই বিক্রির কোনও সম্মানী যখন লেখকের হাতে পৌঁছোয় না। আমার জায়গায় আপনি হলে, ধরুন আপনি কোনও বাঙালি লেখক হলে, আপনাকে যদি জোরজবরদস্তি নির্বাসন দেওয়া হতো, আপনারও অবস্থা কিন্তু আমার অবস্থার মতোই করুণ হতো। কখনও কি আমার জায়গায় আপনাকে কল্পনা করে দেখেছেন? মনে হয় না।

আপনি নিজে নারী, নারীর অধিকারের কথা আপনিও বলেন, আর আপনার শাসনামলেই কত নারীর মানবাধিকার কতভাবে লঙ্ঘন করা হচ্ছে! উত্তরাধিকার দাবি করতে গেলে, যেহেতু আমাকে দেশে যেতে দিচ্ছেন না, কাউকে আম-মোক্তারনামা নিয়োগ করতে হয়। কিন্তু সেটি কি করতে দিচ্ছেন? শান্তিনগরে আমার নিজের কেনা বাড়িটি বিক্রি করে বিদেশে থাকার খরচ চালানোর চেষ্টা আজ অনেক বছর ধরে করছি কিন্তু পারছি না। না পারার কারণ হলো সরকারি বাধা।

আমার ছোট বোনকে আম-মোক্তার নামা দিয়ে — আম-মোক্তার নামার জন্য যেসব নথিপত্র চাওয়া হয়, তার সব কিছু নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশ দূতাবাসে নিজে গিয়ে ডেপুটি কনসুলার জেনারেল শহিদুল ইসলামের হাতে দেওয়ার পরও তিনি কিছুই প্রত্যয়ন করেননি। না করার কারণ, আমার নাম। আমার নামটি ওঁর পছন্দ নয় অথবা আমার নামে ওরঁ ভয়। আপনার অনুমতি না নিয়ে উনি কোনও সই করবেন না। একই ঘটনা ঘটেছে দিল্লির বাংলাদেশ দূতাবাসেও। স্টকহোমের বাংলাদেশ দূতাবাসেও। প্যারিসের বাংলাদেশ দূতাবাসেও। সর্বত্র। দূতাবাসের লোকেরা আপনার ভয়ে তটস্থ। আমার কোনও রকম কাজ করলেই তাঁরা ভেবে নেন, আপনি তাঁদের চাকরি খেয়ে নেবেন , বা প্রমোশন দেবেন না।

দূতাবাস থেকে অ্যটেস্টেড বা প্রত্যয়ন করা না হলে আমার আম-মোক্তারনামার কোনও মূল্য বাংলাদেশে নেই, দেশে আমার বাড়ি বিক্রি করা যাবে না। মুশকিল হল, আমার নামটি দেখে দূতাবাসের কোনও প্রাণী আমার কোনও ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেন না। সিদ্ধান্তের জন্য আমার আবেদনপত্র পাঠিয়ে দেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র বা স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ে, যেসব মন্ত্রণালয় থেকে কখনও কোনও উত্তর আসে না। গত কুড়ি বছর আমাকে উপেক্ষা করার মন্ত্র ছাড়া আর কোনও মন্ত্র উচ্চারিত হয়নি বাংলাদেশের কোনও মন্ত্রণালয়ে। আমার পাসপোর্ট পূনর্নবীকরণের এবং আমার আমমোক্তারনামার অগুনতি আবেদনপত্র পড়ে আছে মণ্ত্রণালয়ের ময়লা ফেলার বাক্সে।

আমার দেশে ফেরার অধিকার থেকে আমাকে বঞ্চিত করছেন। আপনার বিবেক কী করে বলছে আমি যেন আমার দেশের সম্পত্তি থেকেও বঞ্চিত হই? এতটা অমানবিক কী করে হতে পারে মানুষ! কী অন্যায় করেছিলাম, কার কী ক্ষতি করেছিলাম যে আমাকে জীবনভর ভুগতে হবে, ঘুরতে হবে এক দেশ থেকে আরেক দেশে শুধু একটু আশ্রয়ের আশায়? আমার আজ পায়ের নিচে মাটি নেই। আমার মাথার ওপর ছাদ নেই।

জানিনা এসব খবর আপনাকে কোনও আনন্দ দেয় কি না। আমি আজ এই কথা বলতেই চিঠিটি লিখছি, যে, আমার দেশের বাড়িটি বিক্রি করার দায়িত্ব যে আমি আমার বোনকে দিতে চাইছি, তা যদি না দিতে পারি, তবে বাড়িটি যে কেউ এসে যে কোনওদিনই দখল করে নিতে পারে, যেমন নিচ্ছে গত কয়েক বছর। আপনার মনে হতে পারে সম্পত্তি হিসেবে ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকা শান্তিনগরে বহুতল বাড়ির ভেতর পুরোনো একটি অ্যাপার্টমেন্ট বা বাসা নিতান্তই তুচ্ছ এবং মূল্যহীন। আমার কাছে কিন্তু ওটি তুচ্ছ এবং মূল্যহীন নয়। আমার বাড়িটি বেদখল হয়ে গেলেও আমি জানি আপনার কিছু যাবে আসবে না। আমি যে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছি, তাতেই বা কার কী যায় আসে!

তারপরও আমি আপনার ওপর ছেড়ে দিচ্ছি বিষয়টি। মৌলবাদীরা চায় না বলে আমাকে আমার নিজের দেশে ফিরতে দেবেন না জানি। এখন প্রশ্ন, আমার আম-মোক্তারনামা বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে প্রত্যয়ন বা সত্যায়িত করার জন্য আপনি কি অনুমতি দেবেন নাকি আমাকে বুঝে নিতে হবে কাউকে আম-মোক্তারনামা নিয়োগ করার অধিকার দুনিয়ার আর সবার থাকলেও আমার থাকতে পারে না, কারণ আমার অপরাধ আমি কিছু বই লিখেছিলাম, যেসব বই দেশের মৌলবাদীর পছন্দ হয়নি!

মৌলবাদীদের দোসর হিসেবে আপনাকে দেখতে চাই না বলেই এই চিঠিটি লিখলাম। আমি এখনও বিশ্বাস করতে চাই ওই নারীবিদ্বেষী মৌলবাদীদের মতো আপনি নন। এখনও মনুষ্যত্ব বলে আপনার কিছু অবশিষ্ট আছে।’

শ্রদ্ধাসহ

তসলিমা নাসরিন

নির্বাসন’

 

 

No Result
View All Result

Recent Posts

  • বিয়ে সেরে দিল্লিতে লাল পোশাকে পাপারাৎজিদের সামনে ধরা দিলেন সিড- কিয়ারা
  • সংসদে ভাষণে আদানি ইস্যু এড়িয়ে গেলেন প্ৰধানমন্ত্ৰী নরেন্দ্ৰ মোদী
  • পূর্ব জয়ন্তিয়া পাহাড়ে ৫ কোটি টাকা মূল্যের হেরোইন উদ্ধার
  • ভ্যালেনটাইন ডে তে গরুকে আলিঙ্গন করার আহ্বান পশু কল্যাণ বোর্ড-এর
  • খুব শীঘ্ৰই ইউনেসকোর তরফে ‘লিভিং হেরিটেজ ইউনিভার্সিটি’র তকমা পেতে চলেছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়
 
Our Properties
 
  • ⚪ NORTHEAST NOW
  • ⚪ NORTHEAST NOW ASSAMESE
  • ⚪ NORTHEAST JOBS
  • ⚪ NORTHEAST TENDERS
  • ⚪ INNFINITY
  • About
  • Privacy Policy
  • Copyright Policy
  • Disclaimer
  • Contact

© 2022 - Maintained by EZEN Software & Technology Pvt. Ltd

No Result
View All Result
  • প্রচ্ছদ
  • অসম
  • ত্রিপুরা
  • পশ্চিমবঙ্গ
  • ওপার বাংলা
  • প্রবাসের খবর
  • বিনোদন
  • খেলা
  • জীবন শৈলী
  • স্বাস্থ্য
  • ভ্ৰমণ

© 2022 - Maintained by EZEN Software & Technology Pvt. Ltd