ওপার বাংলা

বায়ুমণ্ডলের অস্বাভাবিকতার ঝুঁকিতে Bangladesh

ঢাকা: ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখ সারির দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। প্রতি বছর ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, বজ্রপাত ও খরাসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলা করতে হয় এক লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গ কিলোমিটারের দেশটিকে।

এসব বিষয়ে সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও দিন দিন বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রবণতা বাড়ছে। গত ১০ বছরে বজ্রপাতে ২ হাজার ৭৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। সাধারণ জনগণ সচেতন না হওয়ায় প্রতি বছরই প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটছে।
জানা গেছে, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপে পড়ছে বাংলাদেশ (bangladesh)।

বঙ্গোপসাগরের উপকূলের দেশ হওয়া বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহানি বাড়ছেই। প্রাণহানি ছাড়াও ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে হচ্ছে। তবে, গত কয়েক দশক ধরে দুর্যোগ মোকাবেলায় সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহানি এবং ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

তবে রুদ্র প্রকৃতিকে বাগে আনার সাধ্য বাংলাদেশের (bangladesh) নেই। ২০০৭ সালে আঘাত হানা সবচেয়ে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর। আঘাত হানা ওই ঝড় এবং তার প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। ১৯৮৮ সালের নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড় লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে যায় যশোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর এবং বরিশাল ও খুলনা অঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায়। বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৬২ কিলোমিটার।

এই ঘূর্ণিঝড়ে পাঁচ হাজার ৭০৮ জন প্রাণ হারান। ১৯৯১ এর ঘূর্ণিঝড়ে ভারত মহাসাগরে উৎপত্তি হওয়া প্রবল এই ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতি ছিল ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার। এটি মূলত চট্টগ্রাম ও বরিশাল উপকূলে আছড়ে পড়েছিল। ঝড়ের প্রভাবে ১২ থেকে ২২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়।

২৯-৩০ এপ্রিলের এই ঘূর্ণিঝড়কে আখ্যা দেওয়া হয় ‘শতাব্দীর প্রচণ্ডতম ঘূর্ণিঝড়’ হিসেবে। এতে প্রায় এক লাখ ৩৮ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল বলে জানা যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এক কোটির বেশি মানুষ। ১৯৯৭ সালের ১৯ মে বাংলাদেশের (bangladesh) সীতাকুণ্ড ও এর আশেপাশের এলাকায় আরেকটি ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ে। ঘণ্টায় ২৩২ কিলোমিটার বেগের বাতাসের সঙ্গে ১৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয়৷

এরপর আরো কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছিল। তবে সেগুলো বাতাসের গতিবেগ ছিল কম। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর দেশের দক্ষিণ উপকূলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় সিডর প্রায় ছয় হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। যদিও রেডক্রিসেন্টের হিসাব মতে প্রাণহানির সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। উত্তর ভারত মহাসাগরে আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কাছে সৃষ্ট এ ঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ছিল ২৬০ থেকে ৩০৫ কিলোমিটার।

সিডর খুলনা ও বরিশাল এলাকায় তাণ্ডব চালায়। সমুদ্র থেকে উঠে আসা ১৫ থেকে ২০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে সব কিছু ভেসে যায়। ঝড়ে তিন হাজরের বেশি মানুষ মারা যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৩২টি জেলার ২০ লাখ মানুষ। উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ছয় লাখ টন ধান নষ্ট হয়ে যায়। সুন্দরবনের প্রাণীদের পাশাপাশি অসংখ্য গবাদিপশু মারা যায়।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ (west bengal) ও খুলনা উপকূলে ২০০৯ সালে ২৫ মে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আইলা। এই ঘূর্ণিঝড় ভারতের ১৪৯ জন ও বাংলাদেশের (bangladesh)১৯৩ জনের প্রাণ কেড়ে নেয়। বাংলাদেশের (bangladesh) দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে উপকূলে প্রায় তিন লাখ মানুষ গৃহহীন হয়। ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’ ২০১৩ সালের ১৬ মে নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানে। এটির বাতাসের গতি ছিল ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার।

এই ঝড় বাংলাদেশে (bangladesh) ১৭ জনের প্রাণ কেড়ে নেয়। ঘূর্ণিঝড় কোমেন ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে আঘাত হানে। বাতাসের গতি ছিল ৬৫ কিলোমিটার। কোমেনের প্রভাবে মিয়ানমার, বাংলাদেশ (bangladesh) ও ভারতে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়েছিল। রোয়ানু একটি ছোট ঘূর্নিঝড়, যা ২০১৬ সালে ২১ মে বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলে এবং ভারতে আংশিক অঞ্চলে আঘাত হানে। ধারণা করা হয়, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর ব্যাপ্তি ছিল দুটি বাংলাদেশের সমান আকৃতির।

রোয়ানু-র আঘাতে চট্টগ্রামে ২৬ জনের মৃত্যু হয়।উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোরা ২০১৭ সালের ৩০ মে ১৪৬ কিলোমিটার বাতাসের গতিতে কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানে। ঝড়ের তাণ্ডবে হাজার হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। কক্সবাজারে বিদ্যুৎব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। জমির ফসল এবং লবন চাষীদের জমাকৃত লবন নষ্ট হয়ে যায়। দুজন নারীসহ তিনজন মারা যায়।

২০১৯ সালের ৩ মে বঙ্গপোসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে বাংলাদেশে নয় জনের মৃত্যু হয়। তবে প্রাণহানি কম হলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ছিল অনেক বেশি। সরকারি হিসাব মতে, ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে ঘরবাড়ি, বাঁধ, সড়ক ও কৃষিতে ৫৩৬ কোটি ৬১ লাখ ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়। বার বার দিক বদল করে ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর অতিপ্রবল এই ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সাগর দ্বীপ উপকূলে আঘাত হানার পর স্থলভাগ দিয়ে বাংলাদেশে আসায় ক্ষয়ক্ষতি আশঙ্কার চেয়ে কম হয়।

ঝড়ে মারা যায় ২৪ জন। ৭২ হাজার ২১২ টন ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়, যার আর্থিক মূল্য ২৬৩ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। ক্ষতি হয়েছে সুন্দরবনেরও। ১৯৬০ সালে অক্টোবরে ঘণ্টায় ২১০ কিলোমিটার গতির প্রবল ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, বাকেরগঞ্জ, ফরিদপুর, পটুয়াখালী ও পূর্ব মেঘনা মোহনায়। ঝড়ের প্রভাবে ৫ থেকে ৬ মিটার উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়। এতে মারা পড়েন প্রায় ১০ হাজার মানুষ।

পরের বছর ১৯৬১ সালের ৯ মে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে বাগেরহাট ও খুলনা অঞ্চলে। বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৬১ কিলোমিটার। প্রায় সাড়ে ১১ হাজার মানুষ মারা যান ওই ঝড়ে। ১৯৬২ সালে ২৬ অক্টোবর ফেনীতে তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় হাজারখানেক মানুষের মৃত্যু হয়। ১৯৬৩ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত হয় চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কক্সবাজার এবং সন্দ্বীপ, কুতুবদিয়া, হাতিয়া ও মহেশখালী উপকূলীয় অঞ্চল। এই ঝড়ে প্রাণ হারান ১১ হাজার ৫২০ জন।

১৯৬৫ সালে মে মাসে ঘূর্ণিঝড়ে বারিশাল ও বাকেরগঞ্জে প্রাণ হারান ১৯ হাজার ২৭৯ জন। সে বছর ডিসেম্বরে আরেক ঘূর্ণিঝড়ে কক্সবাজারে মৃত্যু হয় ৮৭৩ জনের। পরের বছর অক্টোবরে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে সন্দ্বীপ, বাকেরগঞ্জ, খুলনা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও কুমিল্লায়। এতে মারা যান ৮৫০ জন। ১৯৭০ সালের ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার উপর দিয়ে বয়ে যায় প্রলয়ঙ্করী ‘গ্রেট ভোলা সাইক্লোন’।

এই ঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২২২ কিলোমিটার।এই ঘূর্ণিঝড়ে চট্টগ্রাম, বরগুনা, খেপুপাড়া, পটুয়াখালী, ভোলার চর বোরহানুদ্দিনের উত্তর পাশ ও চর তজুমুদ্দিন এবং নোয়াখালীর মাইজদি ও হরিণঘাটার দক্ষিণপাশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ঝড়ে প্রাণ হারায় প্রায় সাড়ে ৫ লাখ মানুষ। চার লাখের মতো বসতভিটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সূত্র জানায়, গত এক দশকের মধ্যে বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে ২০১৬ সালে। ২০১৯ ও ২০২০ সালে কিছুটা কমলেও বাকি বছরগুলোতে তিনশোর ওপরে ছিল মৃত্যুর সংখ্যা।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২০১১ সালে ১৭৯ জন মারা গেছেন। ২০১২ সালে ২০১ জন, ২০১৩ সালে ১৮৫, ২০১৪ সালে ১৭০, ২০১৫ সালে ২২৬, ২০১৬ সালে ৩৯১, ২০১৭ সালে ৩০৭, ২০১৮ সালে ৩৫৯, ২০১৯ সালে ১৯৮, ২০২০ সালে ২৫৫ এবং ২০২১ সালে বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে ৩১৪ জনের। গত ১০ বছরে দেশে শুধু বজ্রপাতেই মৃত্যু হয়েছে দুই হাজার ৭৮৫ জনের।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর জানায়, ২০২২ সালে বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে ২৬৭ জনের এবং আহত হয়েছেন ৭৫ জন। চলতি বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫৫টি জেলায় বজ্রপাতে এসব মানুষ মারা যান। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হবিগঞ্জে ১৮ জন, সুনামগঞ্জে ১৭ জন এবং সিরাজগঞ্জে মারা যান ১৬ জন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর জানায়, ২০২২ সালে বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে ২৬৭ জনের এবং আহত হয়েছেন ৭৫ জন। চলতি বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫৫টি জেলায় বজ্রপাতে এসব মানুষ মারা যান। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হবিগঞ্জে ১৮ জন, সুনামগঞ্জে ১৭ জন এবং সিরাজগঞ্জে মারা যান ১৬ জন বজ্রপাত কমাতে হলে সবার আগে বায়ুমণ্ডলের অস্থিরতা কমাতে হবে বলে মনে করেন আবহাওয়াবিদরা।

তারা বলছেন, বজ্রপাতের অন্যতম কারণ হিসেবে দায়ী অস্থির বায়ুমণ্ডল। এজন্য বায়ুমণ্ডল শান্ত রাখতে বিশ্বনেতাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন বা বায়ুমণ্ডলের অস্থিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. আবদুল মান্নান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারা পৃথিবীতে অস্থির অবস্থা চলছে। তাপমাত্রা বাড়লে বায়ুমণ্ডল অস্থির হয়ে পড়ে। তখন এর স্বাভাবিক আচরণ থাকে না, অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে। বায়ুমণ্ডল উষ্ণ হলে এবং সেখানে জলীয়বাষ্পের জোগান পেলে তৎক্ষণাৎ তা বায়ুমণ্ডলের উপরে উঠে যায়। তৈরি হয় এক ধরনের মেঘ।

যেগুলোকে আমরা বজ্র মেঘ বলি। এ বজ্র মেঘ বজ্রপাতের জন্য দায়ী। এ ধরনের মেঘ সৃষ্টির প্রবণতা বাংলাদেশের মতো অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। এর কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশের যেখানে-সেখানে জলভাগ আছে। ফলে মেঘগুলো বিচ্ছিন্নভাবে তৈরি হয়। ৫০০ মিটার থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে এ মেঘ তৈরি হয়। উৎপত্তি ঘটে বজ্রপাতের।

তিনি বলেন, যত দিন পর্যন্ত বিশ্ব উষ্ণায়ন থাকবে, তত দিন এটা অব্যাহত থাকবে। যেমন, শীতকালে বায়ুমণ্ডলে এ ধরনের চিত্র দেখা যায় না। কারণ, এ সময় বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত থাকে না। আমাদের অঞ্চলে বর্ষা ও গ্রীষ্মকালে জলভাগ থেকে জলীয় বাষ্প পেলেই বায়ুমণ্ডল অস্থির হয়ে উপরে উঠে যায়। পরে তা মেঘের সৃষ্টি করে এবং মেঘের কণাগুলো বড় হয়ে কঠিন আকার ধারণ করে।

এগুলো নিজেদের মধ্যে ঘর্ষণের ফলে এক ধরনের আয়ন বা চার্জ জেনারেট করে। এ চার্জ যখন আকস্মিকভাবে অনেক বেশি পরিমাণে হয়, তখনই বজ্রপাতের মতো ঘটনা ঘটে। তার মানে, চলমান বিশ্বের উষ্ণায়ন প্রক্রিয়ার কারণে শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এ ধরনের ঘটনা বাড়ছে।

এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (কাবিখা-১) মো. নূরুজ্জামান বলেন, বজ্রপাতপ্রবণ ১৫টি জেলায় সাড়ে ১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। ১৫ জেলার ১৩৫টি উপজেলাতে ৩৩৫টি লাইটনিং অ্যারেস্টার (বজ্রপাত নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র) স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া, গ্রামীণ রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচি নামে সরকারের একটি প্রকল্প আছে, যেটা গ্রামে টিআর প্রকল্প নামে চিনে। এ কর্মসূচির টাকা দিয়েও বজ্রপাত নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র স্থাপন করা যাবে।

বজ্রপাতের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে উঁচু জায়গায় আঘাত করা— উল্লেখ করে মো. নূরুজ্জামান বলেন, আমাদের ব্যবস্থাপনার ফলে বজ্রপাত ভূপৃষ্ঠের দিকে না এসে যন্ত্রটা যেখানে স্থাপন করা আছে সেখানে চলে যায়। আমাদের যন্ত্রটা বজ্রপাতের গতিপথ বদলে দেয়।

অপরদিকে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভয়াবহ আবহাওয়া বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। আশঙ্কাজনক হারে কমছে বৃষ্টিপাত। ভরা মৌসুমেও দেখা মিলছে না বৃষ্টির। বাড়ছে তাপমাত্রা। যে সময়গুলোতে রাত দিন অঝরে বৃষ্টি হওয়ার কথা, খালে বিলে মাঠে-ঘাটে পানি থইথই করার কথা, সেই সময় মৌসুমি ফসলও চাষ করতে হচ্ছে সেচের পানি দিয়ে। ভরা বর্ষাকালে ফসলের মাঠে ধুলা উড়ছে।

আবহাওয়া অধিদফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ বছরে জুলাই মাসের গড় বৃষ্টিপাতের তুলনায় এ বছর জুলাইয়ে ৫৭ দশমিক ৬ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ বছর জুলাইয়ে গড় বৃষ্টিপাত ছিল ২১১ মিলিমিটার (মি.মি.), যা ১৯৮১ সালের পর সর্বনিম্ন। অন্যদিকে গত ৩০ বছরের গড় বৃষ্টিপাত ছিল ৪৯৬ মি.মি.।

২০২০ সালে গড় বৃষ্টিপাত হয়েছিল ৫৫৩ মি.মি., যা অন্যান্য বছরের তুলনায় ১১ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালে গড় বৃষ্টিপাত হয়েছিল ৪৭১ মি.মি., যা অন্যান্য বছরের তুলনায় ৫ দশমিক এক শতাংশ কম।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, আগস্ট মাসে সারাদেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা ৩৬ দশমিক ৪ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে।

এই মাসে স্বাভাবিকভাবে বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা ছিল ১৫ হাজার ৬৪ মিলিমিটার। সেখানে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত রেকর্ড হয়েছে নয় হাজার ৬৫৯ মিলিমিটার। এ মাসে গড় বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ২৫৬ মিলিমিটার। অথচ স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৪০২ মিলিমিটার। যা গত ৪২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

চলতি সেপ্টেম্বর মাসেও দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। আগস্ট মাসে সবচেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে ঢাকায়, যা গড় ১৯৮ মিলিমিটার। আর সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে সিলেটে, গড় ৪১০ মিলিমিটার।
দেশের প্রধান খাদ্যশস্য ধানের কিছু জাতের ফলন বৃষ্টিপাতের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।

ফলে এ বছর কম বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের ধান উৎপাদনে প্রভাব পড়েছে। আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য মতে, অন্যান্য বছরের তুলনায় জুলাইয়ে গড় তাপমাত্রা বেড়েছে। জুলাইয়ে গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যেখানে গত ৩০ বছরের গড় তাপমাত্রা ৩১ দশমিক এক ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, বর্তমান এই আবহাওয়া বিপর্যয়ের একমাত্র কারণ হচ্ছে ক্লাইমেট চেঞ্জ, গ্লোবাল ওয়ার্মিং। এখন বিভিন্ন কারণে গ্লোবাল ওয়ার্মিং হচ্ছে। কিছুটা হচ্ছে প্রাকৃতিক কারণ। আর কিছুটা হচ্ছে মানবসৃষ্ট কারণে। গ্লোবাল ওয়ার্মিংটায়ের কারণে আমাদের গ্রিন হাউজে গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিভিন্ন শিল্পায়ন বা ইন্ডাস্ট্রিয়ালের ফলে গ্রিন হাউজের গ্যাস নিঃসরণ বাড়ছে। গ্রিন হাউজের কাজ হচ্ছে তাপ আটকে রাখা। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের ফলে আইস গলে যাচ্ছে। সমুদ্রের পৃষ্টতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমুদ্রের পানি প্রসারিত হয়ে তার আয়তন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাপমাত্রা যদি বাড়ে তবে পানির ভলিয়ম বাড়ে। এটাকে বলে থার্মাল এক্সপানশন।

এবং সমুদ্রের বিশাল জলরাশির ওপর পানি বাস্পায়নের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়ছে। বিভিন্ন এলাকায় আবহাওয়া ও জলবায়ু রিলেটেট বিপর্যয়গুলোর পরিমাণও বাড়ছে।

হাবিবুর রহমান

Recent Posts

বাংলাদেশে হিটস্ট্রোকে উপজেলা মহিলা ভাইসচেয়ারম্যান প্রার্থীসহ  ৪ মৃত্যু, স্থগিত নির্বাচন

ঢাকা: বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে চলেছে। ইতিমধ্যে অতি গরমের ফলে হিটস্ট্রোকে ৩৭ জন মারা গিয়েছেন।…

7 days ago

বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহে রেললাইন বেঁকে ট্রেন চলাচল বিঘ্ন

ঢাকা: বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহে রেললাইন বেঁকে ট্রেন চলাচল বিঘ্ন ঘটছে। যাকে রেলের ভাষায় বলা হয়…

1 week ago

সাপ্তাহিক রাশিফল

মেষ রাশির জাতক জাতিকাদের জন্য সপ্তাহটি ভালোই হতে চলেছে। অর্থ উপার্জন হবে। সমাজে সম্মান বাড়বে।…

1 week ago

বাংলাদেশে তাপদাহে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুনঈশ্বরদীতে রেললাইনের পাত বেঁকে গেছে

ঢাকা: বাংলাদেশে চলতি বছর সীমাহীন তাপদাহে মানুষের জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশে সরবোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে…

1 week ago

আপনার আজকের দিনটি

সিংহ: আজকের দিনটি আপনার জন্য নতুন কিছু শেখার দিন হবে। ভাগ্যের দিক থেকে দিনটি ভালোই।…

1 week ago

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত

ঢাকা: বাংলাদেশে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে আবুল কালাম (২৫)…

1 week ago