বাংলাদেশে দ্বাদশ নির্বাচনে মাঠে খেলবে আওয়ামী লীগ-বিএনপি

ঢাকা: বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই নানা কৌশলে নির্বাচনী যুদ্ধের ডামাডোলে উপতপ্ত হচ্ছে রাজপথ। এরইমধ্যে সমসাময়িক নানা ইস্যুতে রাজনীতির মাঠ দখল করতে চেষ্টা করছে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি।

একইসাথে নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে দলটি। আজ বিএনপির কর্মসূচির বিপরীতে কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতারা। বিরোধী দলগুলো যেন ‘অযৌক্তিক’ ইস্যুতে মাঠ গরম করতে না পারে এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করতেনা পারে সেজন্য নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকে নিয়মিত কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে সক্রিয় থাকবে সরকারি দলটি। সারাদেশের নেতাকর্মীদের এ নিয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরের নেতাকর্মী ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের আরো সক্রিয় হতে বলেছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।
আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের নেতারা বলছেন, জ্বালানী ও দ্রব্যমূল্যের ইস্যুতে জনগণকে বিভ্রান্ত করে ফায়দা লুটতে চাচ্ছে বিএনপি।

এছাড়া কয়েকটি প্রভাবশালী দেশের রাষ্ট্রদূতদের সাথে যোগাযোগ করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চাচ্ছে। তাই আগামী নির্বাচনের আগে বিএনপিকে সংগঠিত হয়ে রাজপথ গরম করার সুযোগ দেবে না ক্ষমতাসীনরা। আগামী অক্টোবর মাসে জেলা ভিত্তিক তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সারাদেশের নেতাকর্মীদের এমন বার্তা দেবেন।

সর্বশেষ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, আমাদেরকে রাজপথের ভয় দেখান, রাজপথের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। নৈরাজ্যের পথ ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনের পথে হাঁটুন, নির্বাচনকে মোকাবিলা করুন। আগস্ট মাসটা যাইতে দেন তারপর টের পাবেন কত ধানে কত চাল।

শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে ‘‘ইতিহাস কথা কয়’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সরকার পতনে বিএনপি নেতাদের হুমকি-ধমকির প্রসঙ্গে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, মির্জা ফখরুল সাহেব নৈরাজ্যের পথ ছেড়ে দেন।

নৈরাজ্য সৃষ্টি করে শব্দবোমা ব্যবহার করে হুমকি-ধমকি দিয়ে এই আওয়ামী লীগকে ভয় দেখানো যাবে না। আওয়ামী লীগ আপনাদের প্রতিরোধ করেছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঘাড় ধরে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দিয়েছে। আর এই আওয়ামী লীগকে ভয় দেখান? নৈরাজ্যের পথ ছেড়ে দেন, নির্বাচনের পথে হাঁটুন। নির্বাচনকে মোকাবিলা করেন।

তিনি বলেন, নির্বাচন সংবিধান সম্মতভাবে হবে, সেই নির্বাচনে যদি আপনারা জয়লাভ করতে পারেন আপনাদের ফুলের মালা দিয়ে আমরা বরণ করে নেব। আপনাদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করব, তাই তো ইতিহাস বলে।

দলীয় সূত্র জানায়, সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর প্রথমে দিল্লি পরে লন্ডন ও যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়ার কথা। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেবেন তিনি। সেপ্টেম্বরে জেলা নেতাদের সঙ্গে তার বসার সুযোগ না-ও হতে পারে। তাই অক্টোবর মাসের হিসেবে কাজের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে অবস্থান করার সময়ে অপ্রীতিকর কিছু যেন না ঘটে সেজন্য নেতাকর্মীরা সতর্ক থাকবে। বিএনপিকে রাজপথেই মোকাবিলা করা হবে বলে দলটির প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আমরা রাজপথ থেকে ক্ষমতায় এসেছি। বিএনপি যেভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে মনে হচ্ছে আমরা মাঠে নেই।

অচিরেই রাজপথে দেখতে পাবেন। খেলা হবে, রাজপথে মোকাবেলা হবে। বৃহস্পতিবার বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে জরুরি সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ কর্মীরা মাঠে নামলে রাজপথ নয়, বিএনপি অলিগলিও খুঁজে পাবে না। রাজপথ কারো পৈত্রিক সম্পত্তি নয়, রাজপথ জনগণের সম্পদ, কাজেই অতীতের মত আবারও যদি রাজপথ দখলের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয় তাহলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগ দেশ থেকে পালিয়ে যাবে-বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা কোথায় পালিয়ে যাব।

পালানোর ইতিহাস আমাদের নেই। পালাবার দল আওয়ামী লীগ নয়, পালাবার দল আপনারা (বিএনপি)। আপনাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কোথায়? জরুরি সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়ে টেমস নদীর তীরে পালিয়ে গেছে। বিএনপি মহাসিব মির্জা ফখরুল ইসলামকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ময়ূর সিংহাসন সোনার হরিণ। বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন রঙিন খোয়াবের মতো।

সরকারের পতনের জন্য আন্দোলন করবেন আমরা কোনো বাধা দেব না। কিন্তু শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে জনগণের জানমাল রক্ষায় আওয়ামী লীগ কঠোরভাবে দমন করবে। যতই স্বপ্ন দেখুন সরকারের পতনের আওয়ামী লীগ যখন মাঠে নামবে সেই স্বপ্ন কর্পুরের মতো উড়ে যাবে।

এ বিষয়ে আওয়াশী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়, বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে সন্ত্রাসী দেশ হিসেবে প্রমাণ করতে চায়। তারা আরেকটি ১৫ আগস্ট ঘটাতে চায়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বেঁচে থাকতে তাদের এ আশা কোনো দিন পূরণ হবে না।

একইদিন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, আন্দোলনের নামে কেউ হামলা-ভাঙচুর ও বোমাবাজি করে জনজীবন অতিষ্ঠ করার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আন্দোলন গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু এই অধিকারের নামে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তোলার অধিকার কারো নেই। এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানান মন্ত্রী।

বিএনপি নেতারা বলছেন, জনসমাগম বাড়লেও আগামী দিনের কর্মসূচি ও তার ধরন নিয়ে সতর্ক বিএনপি। এই মুহূর্তে বড় ধরনের কোনো কর্মসূচিতে যাবে না দল। কারণ, আগামী নির্বাচনের এখনও প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় আছে। ফলে এই মুহূর্তে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দিয়ে দীর্ঘ সময় টেনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।

আর এ ধরনের কর্মসূচি দিলে সরকারের দমন-নিপীড়নও বাড়বে। তাই চলতি বছর জনবান্ধব সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, লিফলেট বিলি এই ধরনের কর্মসূচি দিয়ে বছর পার করবে। তারপর আগামী বছরের শুরু থেকে নিরপেক্ষ সরকারের দাবি, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন, সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবিতে অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে বিএনপি।

এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, হঠাৎ করে বিএনপির সমাবেশে জনসমাগম বৃদ্ধি পেয়েছে এটা আমি মনে করি না। আমাদের ধারাবাহিক কর্মসূচি চলছে। ছাত্রদল, কৃষক দল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল কর্মসূচি পালন করেছে। তিনি বলেন, সরকারের দুর্নীতির কারণে মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে।

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি, সবকিছুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এসবের প্রতিবাদে বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি কর্মসূচি পালন করছে। ফলে সেখানে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও অংশ নিয়েছে। তাই সমাবেশ বেশি ভালো হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, আগের চাইতে দল ও অঙ্গ-সংগঠনগুলো অনেক সুসংগঠিত।

আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘদিন চেষ্টা করে এই অবস্থায় নিয়ে এসেছেন।এছাড়া আওয়ামী লীগের দুর্নীতির কারণে মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ, আমাদের অঙ্গ-সংগঠনগুলোর ওপর সরকারের যে নির্যাতনের চিত্র, তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে সমাবেশে। এখন মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিএনপির সমাবেশে যোগ দিচ্ছে।

হাবিবুর রহমান

Recent Posts

বাংলাদেশে হিটস্ট্রোকে উপজেলা মহিলা ভাইসচেয়ারম্যান প্রার্থীসহ  ৪ মৃত্যু, স্থগিত নির্বাচন

ঢাকা: বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে চলেছে। ইতিমধ্যে অতি গরমের ফলে হিটস্ট্রোকে ৩৭ জন মারা গিয়েছেন।…

3 days ago

বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহে রেললাইন বেঁকে ট্রেন চলাচল বিঘ্ন

ঢাকা: বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহে রেললাইন বেঁকে ট্রেন চলাচল বিঘ্ন ঘটছে। যাকে রেলের ভাষায় বলা হয়…

4 days ago

সাপ্তাহিক রাশিফল

মেষ রাশির জাতক জাতিকাদের জন্য সপ্তাহটি ভালোই হতে চলেছে। অর্থ উপার্জন হবে। সমাজে সম্মান বাড়বে।…

4 days ago

বাংলাদেশে তাপদাহে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুনঈশ্বরদীতে রেললাইনের পাত বেঁকে গেছে

ঢাকা: বাংলাদেশে চলতি বছর সীমাহীন তাপদাহে মানুষের জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশে সরবোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে…

5 days ago

আপনার আজকের দিনটি

সিংহ: আজকের দিনটি আপনার জন্য নতুন কিছু শেখার দিন হবে। ভাগ্যের দিক থেকে দিনটি ভালোই।…

5 days ago

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত

ঢাকা: বাংলাদেশে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে আবুল কালাম (২৫)…

5 days ago