ওপার বাংলা

শীতে কাঁপছে Bangladesh

ঢাকা: বাংলাদেশে (Bangladesh) ১৭ জেলায় বইছে শৈত্যপ্রবাহ। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

সারাদেশে জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। ঘন কুয়াশায় শনিবার সূর্যের দেখা মিলেনি। ফলে দিনের উত্তাপ কমছে, চারদিকে যেন জবুথবু অবস্থা। এরই মধ্যে হিমেল বাতাসের কারণে শীত যেন শরীরে আরও কামড় বসাচ্ছে।

শীতের তীব্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতজনিত রোগ। এ সময় শীতকালীন স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, হাঁপানি, টনসিলাইটিস, ব্রঙ্কিওলাইটিস, সাইনোসাইটিসসহ দেখা দেয় বিভিন্ন ধরনের রোগ। এসব রোগ থেকে সুরক্ষায় শীত এড়িয়ে চলতে হয়।

প্রয়োজনে নিতে হয় চিকিৎসকের পরামর্শ। তবে তীব্র শীতে সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগে সবচেয়ে অস্বস্তিতে আছে শিশুরা। অতিরিক্ত রোগীর চাপে Bangladesh শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের (ঢাকা শিশু হাসপাতাল) চিকিৎসকদের যেন দম ফেলার ফুরসত নেই।

শনিবার শনিবার Bangladesh আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, শনিবার সারাদেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গাতে ৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ঢাকাতে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

দিনের তাপমাত্রা তেমন বৃদ্ধি পায়নি। যার ফলে আজ রোববার থেকেই দিনের কুয়াশা অনেকটা কমে যাবে। তবে রাতের কুয়াশা থাকবে। মূলত আজ রোববার থেকে তাপমাত্রা একটু বাড়তির দিকে থাকলেও ১০ অথবা ১১ জানুয়ারি তাপমাত্রা ব্যাপকভাবে কমতে থাকবে। তার মানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রিতে নামতে পারে।

শৈত্যপ্রবাহের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ঢাকা, খুলনা, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ১৭টি জেলায় শৈত্যপ্রবাহ বইছে। ফরিদপুর, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, রাজশাহী, ঈশ্বরদী, বগুড়া, নওগাঁ, নাটোর, দিনাজপুর, নীলফামারী, পঞ্চগড়, সাতক্ষীরা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া এবং বরিশালের ওপর দিয়ে তীব্র শীতসহ শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

জানা গেছে, ঢাকা বিভাগের ঢাকায় ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি; টাঙ্গাইল ১১ ডিগ্রি; ফরিদপুর ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি; মাদারীপুর ৯ ডিগ্রি; গোপালগঞ্জ ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি; কিশোরগঞ্জ ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি। রাজশাহী বিভাগের রাজশাহীতে ৯ দশমিক ১ ডিগ্রি; পাবনার ঈশ্বরদীতে ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি; বগুড়ায় ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি; নওগাঁর বদলগাছী ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি; সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ১০ ডিগ্রি।

রংপুর বিভাগের রংপুরে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি; দিনাজপুরে ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি; নীলফামারীর সৈয়দপুরে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি; পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি; নীলফামারীর ডিমলায় ১০ ডিগ্রি; রাজারহাটে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি। ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহে ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রি; নেত্রকোনায় ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি।

সিলেট বিভাগের সিলেটে ১৫ ডিগ্রি; শ্রীমঙ্গলে ১৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি। চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রামে ১৪ ডিগ্রি, সন্দ্বীপে ১৪ দশমিক ৩ ডিগ্রি; সীতাকুণ্ডে ১৪ ডিগ্রি; কক্সবাজারে ১৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি; কুতুবদিয়ায় ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি; টেকনাফে ১৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি। কুমিল¬ায় ১৩ ডিগ্রি; চাঁদপুরে ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি, নোয়াখালীর মাইজদীকোর্টে ১৪ ডিগ্রি, ফেনীতে ১৩ ডিগ্রি; নোয়াখালীর হাতিয়ায় ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি।

খুলনা বিভাগের খুলনায় ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি; মংলায় ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি; সাতক্ষীরায় ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি; যশোরে ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি; চুয়াডাঙ্গায় ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি; কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি।

বরিশাল বিভাগের বরিশালের ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি, পটুয়াখালী ১২ ডিগ্রি, পটুয়াখালীতে খেপুপাড়া ১২ দশমিক ৩ ডিগ্রি; ভোলা ১১ ডিগি রের্কড করা হয়েছে। তবে সারাদেশে রাতের এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।

দিন ও রাতের তাপমাত্রা পার্থক্য কমে যাওয়ার কারণে সারাদেশে মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভূতি থাকতে পারে। এছাড়া পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার শেষের দিকে তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে।

সূত্র জানায়, চুয়াডাঙ্গায় টানা তিন দিন ধরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে চলেছে। এর মধ্যে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই জেলায়। গতকাল শনিবার সকাল নয়টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

চুয়াডাঙ্গার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

হাটকালুগঞ্জ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমের মধ্যে এটাই চুয়াডাঙ্গার সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড। এর আগে গত ২৯ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে এর পর থেকে তাপমাত্রা ক্রমে বাড়তে থাকে। ৩ জানুয়ারি তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়।

৪ জানুয়ারি থেকে আবারও তাপমাত্রার পারদ নামতে শুরু করে। ৫ জানুয়ারি থেকে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যায়। দুই দিন ধরে চুয়াডাঙ্গায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে সূর্যের দেখা মিলছে না। সেই সঙ্গে উত্তরের হিমেল হাওয়ায় শীত জেঁকে বসেছে। এতে সব মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।

হাটকালুগঞ্জ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান বলেন, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমে আসা এবং উত্তরের হিমেল হাওয়ার কারণে মূলত শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান বলেন, ইতিমধ্যে জেলার শীতার্ত মানুষের মধ্যে সরকারিভাবে ২২ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আরও ৩ হাজার কম্বল বিতরণের কাজ প্রক্রিয়াধীন।

এ ছাড়া আরও ৩০ হাজার কম্বল চেয়ে চিঠি লেখা হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কম্বলসহ শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু করেছে। শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সমাজের আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

সূত্র আরো জানায়, শীতের প্রকোপে কাহিল উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। জেলা জুড়ে দুদিন ধরে বইছে শৈত্যপ্রবাহ। শনিবার সকালে তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত শুক্রবার তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ তাপমাত্রা রেকর্ডের তথ্যটি জানিয়েছেন।

দুদিন ধরে ১০ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রার রেকর্ডে প্রবাহমান শৈত্যপ্রবাহ। সপ্তাহ জুড়ে হিম বাতাসে ঠান্ডায় কাঁপছে এ জনপদের মানুষ। ভোর থেকেই বেলা অবধি ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকছে জেলার চারপাশ। প্রয়োজন ছাড়া অনেকে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। এ অবস্থায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শ্রমজীবী-কর্মজীবী গরিব অসহায় মানুষ। এতে করে স্থবির হয়ে পড়েছে উত্তরের জেলার জীবনযাত্রা।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘার পাদদেশে জেলাটির অবস্থান থাকায় এই মৌসুমে তীব্র শীতের মুখে পড়েছেন এ অঞ্চলের সর্ব সাধারণ মানুষেরা।

বিকেল গড়ালেই উত্তর-পূর্বকোণ থেকে বইতে থাকে ঠান্ডা বাতাস। নিম্নবিত্ত মানুষগুলো শীতবস্ত্রের অভাবে ফুটপাতের দোকানগুলোতে সাধ্যমত কিনছে গরমের কাপড়। শীতের তীব্রতায় দুর্ভোগের শেষ নেই খেটে খাওয়া মানুষের। ভোর-সকালে শীতের তীব্র প্রকোপের কারণে কাজে যেতে পারছেন না অনেকে।

তবুও পেটের তাগিদে কাউকে নদীতে পাথর তুলতে, কাউকে চা-বাগানে আবার কাউকে দিনমজুরের কাজ করতে যেতে দেখা গেছে। শীতের দূর্ভোগ বেড়েছে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে। এসব মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য সরকার যে ত্রাণ দিয়েছে তা একেবারেই অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। গত শুক্রবার থেকে তাপমাত্রা শনিবার আরও কমেছে। শনিবার সকাল ৯টায় ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। গত শুক্রবার ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। উত্তর-পূর্বকোণ থেকে ৩ নটিক্যাল গতিতে বয়ে যাওয়া হিমেল বাতাসের কারণে ঠান্ডা অনুভব হচ্ছে। সামনে আরও তাপমাত্রা কমবে বলে জানান তিনি।

এদিকে, শীতের তীব্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতজনিত রোগ। জ্বর, সর্দি-কাঁশি, শ্বাসকষ্ট, ডায়েরিয়া, নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগ নিয়ে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে রোগীর চাপ বেড়েছে।

এমনিতে শীত মৌসুমে আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় বাতাসে জীবাণুর পরিমাণ বেড়ে যায়। শীতজনিত রোগ হিসেবে সর্দি-কাঁশি, শ্বাসকষ্ট বেশি হয়ে থাকে। আর শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। তাই এ সময়টাতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে পারলে কিছুটা হলেও সুরক্ষা মিলবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে শীতকালীন স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, হাঁপানি, টনসিলাইটিস, ব্রঙ্কিওলাইটিস, সাইনোসাইটিসসহ দেখা দেয় বিভিন্ন ধরনের রোগ। এসব রোগ থেকে সুরক্ষায় শীত এড়িয়ে চলতে হয়। প্রয়োজনে নিতে হয় চিকিৎসকের পরামর্শ।

ঢাকা শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গুরুতর নিউমোনিয়া নিয়ে দৈনিক ১৫-২০ শিশু নতুন করে হাসপাতালটিতে ভর্তি হচ্ছে। গত পাঁচ দিনে ৮০ নিউমোনিয়ারোগী ভর্তি হয়েছে। নভেম্বর মাসে যেখানে নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩০৮, ডিসেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩৭ জনে। চলতি মাসেও (জানুয়ারি) যা বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে।

বিশ্বজুড়ে একক রোগ হিসেবে পাঁচ বছরের নিচের শিশুমৃত্যুর প্রধান কারণ নিউমোনিয়া। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন আইসিইউ ও সিসিইউ-এর জন্য গড়ে ১৫ থেকে ২০ শিশু অপেক্ষমাণ থাকে। তবে, শয্যার চেয়ে চাহিদা অনেক বেশি থাকায় প্রতি বছর এক বছরের নিচের ৪৮ শতাংশ শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মারা যায়।

২০১৯ সালের পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশুর মৃত্যুর সংখ্যা ১৮ হাজার।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সারাবন তহুরা বলেন, সারাবছরই আমাদের হাসপাতালে নিউমোনিয়ার রোগী থাকে। তবে, শীতের সময়ে একটু বেড়ে যায়।

শুধু যে নিউমোনিয়া বেড়ে যায় তা নয়; ব্রঙ্কিওলাইটিস নামে আরেকটা ভাইরাল রোগ আছে, সেটিও বেড়ে যায়। ফলে শিশুদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। অ্যাজমা রোগীর সংখ্যাও এ সময় বাড়ে। এমনকি শীতকালীন একটা ভাইরাল ডায়রিয়া আছে সেটিও বেড়ে যায়। শিশু হাসপাতালে সবসময়ই রোগী একটু বেশি থাকে।

সাড়ে ৭০০ বেডের হাসপাতালটিতে কোনো সময়ই শয্যা খালি থাকে না। আমি রেসপেরেটরি (শ্বাস-প্রশ্বাস সম্পর্কিত) ইউনিটের চিকিৎসক। আমাদের ইউনিট সবসময়ই রোগীতে ভর্তি থাকে। শীতের সময়ে রোগী বেড়ে যায়।

শিশু হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. কামরুজ্জামান বলেন, শীতের কারণে বর্তমানে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। গত দুই দিন হলো ঢাকার বাইরে থেকেও প্রচুর রোগী আসছে। কারণ, গ্রামাঞ্চলে এখন প্রচুর শীত। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এছাড়া অ্যাজমা, অ্যালার্জি, শীতজনিত ডায়রিয়াসহ নানা রোগ নিয়ে শিশুরা হাসপাতালে আসছে।

ডা. কামরুজ্জামান বলেন, শিশু হাসপাতালে রোগী বাড়ার ঢেউ কেবল শুরু হয়েছে। পুরো শীতজুড়ে ঠান্ডাজনিত রোগীদের আসা-যাওয়া চলবে। তবে, এ সময়ে অন্যান্য রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে।

আমাদের যে নিউমোনিয়া রিসার্চ সেন্টার, সেখানে ১৬টি স্পেশাল শয্যা আছে। কোনোটি এখন খালি নেই। এর বাইরে হাসপাতালের অন্যান্য ওয়ার্ড, কেবিন, পেয়িং বেডগুলোতেও নিউমোনিয়া রোগী চিকিৎসাধীন। সবমিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১২০০ থেকে ১৫০০ রোগী শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছে। তাদের অধিকাংশই নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ শীতকালীন নানা রোগে আক্রান্ত।

হাসপাতালটির এপিডেমিওলজিস্ট (দায়িত্বপ্রাপ্ত) ডা. এ বি এম মাহফুজ হাসান আল মামুন জানান, গত অক্টোবর মাস থেকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে শিশু নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। ওই মাসে ৩২০ শিশু ভর্তি হয়। নভেম্বরে ৩০৮ জন এবং ডিসেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩৭ জনে। তবে, করোনাকালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা কম ছিল বলেও জানান এ চিকিৎসক।

ডা. কামরুজ্জামান বলেন, শীতের সময়টাতে শিশুদের খুবই সতর্কতার সঙ্গে রাখতে হবে। বিশেষ করে তাদের মাথাটা ঢেকে রাখতে হবে, কাপড় পরিয়ে রাখতে হবে। ছোট বাচ্চা, বিশেষত ছয় মাসের কম বয়সী শিশুর ঠান্ডা লাগলেই ঘন ঘন বুকের দুখ খাওয়াতে হবে। তার নাকটা সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। ছয় মাসের ওপরে যেসব বাচ্চা আছে, তাদের বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার এবং কুসুম গরম পানিও খাওয়াতে হবে।

অতি-সতর্কতা প্রসঙ্গে ডা. সারাবন তহুরা বলেন, বাবা-মায়েরা অনেক সময় হালকা শীতে অতি-সতর্কতায় শিশুদের বেশি কাপড় পরিয়ে রাখেন। এমন অবস্থা হয় যে তাদের ভেতর থেকে প্রচুর ঘাম হয়। ঘাম থেকে বাচ্চাদের অ্যাজমা হয়। এ কারণে বিষয়টা খুবই গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে। আবার অনেক সময় শীত চলে গেলে কাপড়গুলো তুলে রাখা হয়।

শীত ফের এলে কাপড়গুলো না ধুয়ে ব্যবহার করা হয়। ফলে বাচ্চাদের অ্যালার্জিজনিত সর্দি-কাশি, এমনকি নিউমোনিয়াও হয়ে থাকে।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রতি বছরই শীত আসা ও যাওয়ার সময় সর্দি, ঠান্ডা, কাশি ও জ্বর দেখা যায়। একইসঙ্গে হাঁপানি, গলাব্যথা বা টনসিলাইটিস ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ে। গত বৃহস্পতিবার ১৮ নিউমোনিয়ারোগী ভর্তি হয়।

এ সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। শীতে কেন বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ বাড়ে জানতে চাইলে ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, যখন শীত আসে বা শীত যায় তখন বেশকিছু ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়।

এগুলো শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করে। এছাড়া আমাদের দেশের বাতাসে প্রচুর ধূলিকণা থাকে। এটা শীতজনিত রোগের অন্যতম কারণ। ধূলিকণার আশ্রয়ে ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া বেঁচে থাকে।

হাবিবুর রহমান

Recent Posts

বাংলাদেশে হিটস্ট্রোকে উপজেলা মহিলা ভাইসচেয়ারম্যান প্রার্থীসহ  ৪ মৃত্যু, স্থগিত নির্বাচন

ঢাকা: বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে চলেছে। ইতিমধ্যে অতি গরমের ফলে হিটস্ট্রোকে ৩৭ জন মারা গিয়েছেন।…

5 days ago

বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহে রেললাইন বেঁকে ট্রেন চলাচল বিঘ্ন

ঢাকা: বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহে রেললাইন বেঁকে ট্রেন চলাচল বিঘ্ন ঘটছে। যাকে রেলের ভাষায় বলা হয়…

6 days ago

সাপ্তাহিক রাশিফল

মেষ রাশির জাতক জাতিকাদের জন্য সপ্তাহটি ভালোই হতে চলেছে। অর্থ উপার্জন হবে। সমাজে সম্মান বাড়বে।…

6 days ago

বাংলাদেশে তাপদাহে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুনঈশ্বরদীতে রেললাইনের পাত বেঁকে গেছে

ঢাকা: বাংলাদেশে চলতি বছর সীমাহীন তাপদাহে মানুষের জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশে সরবোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে…

7 days ago

আপনার আজকের দিনটি

সিংহ: আজকের দিনটি আপনার জন্য নতুন কিছু শেখার দিন হবে। ভাগ্যের দিক থেকে দিনটি ভালোই।…

1 week ago

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত

ঢাকা: বাংলাদেশে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে আবুল কালাম (২৫)…

1 week ago