ওপার বাংলা

মা ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্নে Bangladeshএ ২২দিন শিকার নিষিদ্ধ

ঢাকা: মা ইলিশের প্রজনন মৌসুমটি নির্বিঘ্ন রাখতে ও খোকা ইলিশ hilsha (জাটকা) সংরক্ষণের জন্য বৃহস্পতিবার মধ্যরাত ১২ টার পর থেকে বাংলাদেশের সাগর ও নদীতে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিনের জন্য ইলিশ hilsha ধরা বন্ধ করে দেওয়া হলো। নিষেধাজ্ঞার কারণে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া মৎস্যজীবীরা নৌকা নিয়ে উপকূলে ফিরে এসেছেন।

নিষেধাজ্ঞা চলাকালে সমুদ্রে ও নদীতে ইলিশ আহরণ, পরিবহন ও বিপণন বন্ধ থাকবে। সেই হিসেবে বৃহস্পতিবার ছিল ইলিশ বিক্রি ও ক্রয়ের শেষ দিন।

কিন্তু শেষ দিনে মাছ কিনতে এসে অনেকটা হতাশা নিয়ে ফিরেছেন ক্রেতারা। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম সামুদ্রিক মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বাগেরহাটের কেবি মাছ বাজারে দীর্ঘক্ষণ ঘুরেও দাম নাগালের বাইরে থাকায় মাছ না কিনেই ফিরতে হয়েছে বেশিরভাগ মানুষকে।

অন্যান্য সময়ের চেয়ে আজ খুচরা ক্রেতাদের যেমন ভিড় ছিল, তেমনি মাছের দাম ছিল অনেক বেশি। প্রতি কেজি মাছ অন্যান্য দিনের তুলনায় ১০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। এক কেজি থেকে ১২০০ গ্রাম মাছ ১৫০০-১৬০০ টাকা কেজি, ৮০০-৯০০ গ্রামের দাম ১২০০ টাকা, ৬০০-৭০০ গ্রাম ৯০০ টাকা, ৩০০-৫০০ গ্রামের ইলিশ hilsha কেজিতে বিক্রি হয়েছে ৬০০-৮০০ টাকা।

সর্বশেষ ২০০ গ্রামের নিচের মাছ বিক্রি হয়েছে ৪৫০ টাকা কেজিতে। যা অন্যান্য সময় বিক্রি হত ২০০-৩০০ টাকা কেজি। ইলিশ hilsha ধরার নৌকার মালিক নজরুল ইসলাম বলেন, কাল থেকে শুরু হয়ে গেল ইলিশ hilsha শিকার। এবার তেমন ইলিশও hilsha পাইনি।

যা পাইছি, তা বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। বেশি দামে বিক্রির পরও ঠিকঠাক খরচ উঠবে কিনা বলা যাচ্ছে না। সাগর থেকে ফেরা মৎস্যজীবী রফিকুল আমিন বলেন, সাগরে যাওয়ার পর থেকে কয়েকবার ঝড়ের কবলে পড়ে জাল ফেলতে পারিনি।

তারপরও যে কয়বার ফেলেছি তেমন মাছ পাইনি। আজ মধ্যরাত থেকে আবার ২২ দিনের অবরোধ।ক্রেতা মাসুদ মোল্লা বলেন, কাল থেকে ইলিশ বিক্রি বন্ধ হওয়ার কারণে মাছ কিনতে এসেছি। ভেবেছিলাম দাম কম হবে। কিন্তু খুচরা বাজারের থেকেও দাম বেশি।

কেবি বাজার মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি শেখ আবেদ আলী বলেন, অবরোধ শুরু হওয়ার কারণে সবাই চাচ্ছে মাছ কিনে রাখতে। চাহিদা বেশি হওয়ায় দাম বেড়ে গেছে। এছাড়া সমুদ্রে মাছ কম পাওয়ার কারণেও দাম কিছুটা বেশি।

আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার আগে-পরে মিলিয়ে মোট ১৫-১৮ দিন মা ইলিশের hilsha ডিম ছাড়ার উপযুক্ত সময়। এ সময় সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ নদীতে ছুটে আসে। এই সময়কে বিবেচনায় নিয়ে প্রতিবছরের মতো এ বছরও মোট ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।

এদিকে নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে প্রত্যেক মৎস্যজীবীর জন্য ২০ কেজি চাল খাদ্য সহায়তা হিসেবে বরাদ্দ হয়েছে। মৎস্যজীবীদের মাঝে এই চাল বিতরণ করা হবে। তবে মৎস্যজীবীরা সহায়তা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।

তাঁরা বলছেন,২২ দিন কোনো আয় হবে না। শুধু চাল দিয়েই তো আর পেট চলে না, চালের সঙ্গে আরও অনেক কিছুর দরকার হয়। সরকারের পক্ষ থেকে আরো বেশি সহযোগিতা পেলে আমাদের সংকট দূর হতো। বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে মৎস্যজীবীদের ইলিম না ধরায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য মাইকিং করা হয়েছে।

এদিকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম আজ বৃহস্পতিবার বলেছেন, চলতি বছর ১ হাজার ৩৫২ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি করে আয় হয়েছে ১ কোটি ৩৬ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার (১৪১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা)।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় তাঁর মন্ত্রকে সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২২ বাস্তবায়ন উপলক্ষে এ কথা বলেন।মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সুস্বাদু মাছ ইলিশ।

এটি আমাদের জাতীয় মাছ। এ মাছ দেশের মানুষের খাদ্য ও নিরাপদ আমিষের যোগানের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও রপ্তানি আয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দেশে মোট উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ দশমিক ২২ শতাংশ আসে শুধু ইলিশ থেকে যা একক প্রজাতি হিসেবে সর্বোচ্চ। জিডিপি-তে এর অবদান শতকরা ১ ভাগ।

বাংলাদেশের ইলিশ ইতিমধ্যে ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। রাষ্ট্রসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সর্বশেষ ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বে ইলিশ আহরণে বাংলাদেশ শীর্ষে। বিশ্বের মোট উৎপাদিত ইলিশের ৮০ শতাংশের বেশি আহরিত হয় এদেশের নদ-নদী, মোহনা ও সাগর থেকে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সমন্বিতভাবে নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করায় ইলিশের উৎপাদন আশাতীতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৮-২০০৯ অর্থ-বছরে ইলিশের আহরণ ছিল ২ দশমিক ৯৮ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমান সরকারের নেওয়া ব্যবস্থাপনায় তা ক্রমান্নয়ে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৬৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে।

অর্থাৎ গত ১২ বছরে দেশে ইলিশ আহরণ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এ সময়ে দেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির হার প্রায় ৯০ শতাংশ।রেজাউল করিম বলেন, দেশে প্রায় ৬ লাখ মানুষ ইলিশ আহরণে সরাসরি এবং ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ ইলিশ পরিবহন, বিক্রয়, জাল ও নৌকা তৈরি, বরফ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, রপ্তানি প্রভৃতি কাজে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত।

হাবিবুর রহমান

Recent Posts

বাংলাদেশে হিটস্ট্রোকে উপজেলা মহিলা ভাইসচেয়ারম্যান প্রার্থীসহ  ৪ মৃত্যু, স্থগিত নির্বাচন

ঢাকা: বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে চলেছে। ইতিমধ্যে অতি গরমের ফলে হিটস্ট্রোকে ৩৭ জন মারা গিয়েছেন।…

7 days ago

বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহে রেললাইন বেঁকে ট্রেন চলাচল বিঘ্ন

ঢাকা: বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহে রেললাইন বেঁকে ট্রেন চলাচল বিঘ্ন ঘটছে। যাকে রেলের ভাষায় বলা হয়…

1 week ago

সাপ্তাহিক রাশিফল

মেষ রাশির জাতক জাতিকাদের জন্য সপ্তাহটি ভালোই হতে চলেছে। অর্থ উপার্জন হবে। সমাজে সম্মান বাড়বে।…

1 week ago

বাংলাদেশে তাপদাহে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুনঈশ্বরদীতে রেললাইনের পাত বেঁকে গেছে

ঢাকা: বাংলাদেশে চলতি বছর সীমাহীন তাপদাহে মানুষের জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশে সরবোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে…

1 week ago

আপনার আজকের দিনটি

সিংহ: আজকের দিনটি আপনার জন্য নতুন কিছু শেখার দিন হবে। ভাগ্যের দিক থেকে দিনটি ভালোই।…

1 week ago

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত

ঢাকা: বাংলাদেশে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে আবুল কালাম (২৫)…

1 week ago