অসম সরকারের অ্যাকাডেমিক কেলেন্ডারে ২৫শে বৈশাখ অর্থাৎ রবীন্দ্রজয়ন্তীকে গুরুত্ব না দিয়ে ওইদিনই পরীক্ষার ব্যবস্থা করা প্রত্যেকটি সম্প্রদায়ের জন্য অপমানজনক। কারণ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কোনও সংকীর্ণ জাতি-সত্তার মধ্যে আবদ্ধ রাখা হয় না। কেলেন্ডারে রবীন্দ্রনাথ ব্রাত্য, এর প্রতিবাদ হওয়ার প্রয়োজন, কিছু আবেগ-ক্রোধ মেশানো সুরে এমনটাই বললেন বরাকের লোক গবেষক ড. অমলেন্দু ভট্টাচার্য।
বৃহস্পতিবার, শিলচরে আর্য সংস্কৃতি বোধনী সমিতির উদ্যোগে এবং শিলচর পুরসভা ও লায়ন্স ক্লাবের সহযোগিতায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৮ তম জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এদিন, সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে গবেষক ড. অমলেন্দুবাবু আরও বলেন, সারা বিশ্বে রবীন্দ্রনাথ প্রথম ব্যাক্তি ছিলেন যিনি আমাদের দেশের ঐতিহ্যগত আদর্শকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছিলেন।
তাঁর কথায়, শিলচরে অনেক মহাপুরুষের পদধুলি পড়লেও রবীন্দ্রনাথের আগমন হয় নি। কিন্তু ১৯১৯ সালে তিনি বরাক উপত্যকায় এসেছিলেন। তিনি বরাকের উপর দিয়েই সিলেট যাত্রা করেন। গুয়াহাটি থেকে রেল পথে করিমগঞ্জ-বদরপুর হয়ে সিলেট পৌছেছিলেন কবিগুরু। ওই সময়ে, শিলচর পুরসভার সভাপতি ছিলেন কামিনীকুমার চন্দ। তাঁর বিশেষ ব্যবস্থায় ওইদিন করিমগঞ্জে কুড়ি মিনিট সময় কবিগুরুর গাড়ি অপেক্ষারত ভাবে রাখা হয় এবং সে সময়ই রবীন্দ্রনাথকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়।
এই ঘটনা, প্রত্যেকেরই স্মরণ করে রাখার প্রয়োজন বলে মনে করেন লোক গবেষক ড. অমলেন্দু ভট্টাচার্য। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এমন ঘটনা শিলচরের জন্য গৌরবময় বিষয়। রবীন্দ্র সাহিত্যে অন্তত একাধিক জায়গাতে শিলচরের নাম রয়েছে। তাঁর ‘শেষের কবিতা’য়ও শিলচরের নাম উল্লেখ রয়েছে। কাজেই আত্মিক যোগাযোগের জায়গা রবীন্দ্র-শিলচর। বলেছেন অমলেন্দুবাবু।
অন্যদিকে, অসম সরকারের অ্যাকাডেমিক কেলেন্ডারের কথা তুলে ধরে বলেন, রবীন্দ্রজয়ন্তীতে কোনও অনুষ্ঠান না রাখা, এতো কোনও বঙ্গীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে পড়ে না, চরম অপমানজনক। সব মহল থেকে প্রতিবাদের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার কথাও বলেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে উত্তরণের রাস্তা দেখাতে পারেন রবীন্দ্রনাথ, বলেছেন ড. অমলেন্দু ভট্টাচার্য।
এদিন, সকালবেলা শিলচরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংস্থা বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা করে ঠিক ৭ টায় ইন্ডিয়া ক্লাবে স্থিত কবিগুরুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন। একই স্থানে চলে নাচ-গান-আবৃত্তি।
এছাড়াও, কৃষ্টি-সংস্কৃতির শহর শিলচরে এদিন বঙ্গ সাহিত্য সংস্কৃতি কাছাড় জেলা কমিটি, মাতৃভাষা সুরক্ষা সমিতি সহ নানা সংস্থার উদোগের আয়োজনে রবীন্দ্রজয়ন্তীকে ঘিরে রয়েছে নানা অনুষ্ঠান। এছাড়াও রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষ্যে তিনদিন ব্যাপী ‘হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ চেতনায় উনিশ’ শীর্ষক নামক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চ।