অসম

মাতৃভাষা কর্ম-সত্তায় নির্ধারিত হয়, বরাক উপত্যকা সর্বান্তকরণে সমর্থন জানিয়েছে নাগরিকত্ব বিলের

বাঙালি যে আজো যুগ যুগের লড়াইয়ে মাথা উঁচু করে বেঁচে আছে, লড়াই করে যাচ্ছে দাঁতে দাঁত চেপে তা শরীরের সবটুকু রক্ত নিঃশেষ করে দিলেও সে কর্জ শোধ করার নয়।

আমি আজ হতাশ, ক্ষুব্ধ আর রাগান্বিত। আমার সহ্যের সীমা অতিক্রম করেছে। বাঙালিরা কোথায় যাবে? চারদিকে যে জ্বলছে আগুন। দেশভাগের যন্ত্রণা বাঙালিকে হাড়ে হাড়ে জ্বালিয়ে মারছে।

সীমার মতো এমন হাজারো ভারতের সীমার ক্ষোভ আজ। তাদের বুক ফাটছে তবু মুখ ফোটছে না।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নতুন কথা নয়।

সোমবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল উত্থাপন করে যুক্তিযুক্তভাবে বহু তথ্য তুলে ধরেছেন।

সরাসরি জানিয়েছেন, বিজেপি ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন করছে না, বিভাজন হয়েছে পূর্বে। সে বিভাজন করেছে কংগ্রেস।

তিনি বলেন, প্রতিবেশী বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন না-থামাটাই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আনার অন্যতম প্রধান কারণ।

বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়ার লক্ষ্যেই আনা হয়েছে এই বিল।

আর সেটি সোমবার লোকসভায় পেশ করতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলাদেশ-সহ তিনটি প্রতিবেশী দেশের সংবিধানকে উদ্ধৃত করে জোরদারভাবে আরও বলেছেন, এই দেশগুলোর রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বলেই সেখানে অন্য ধর্মের মানুষরা অত্যাচারিত হচ্ছেন।

“মাননীয় স্পিকার, সে দেশে কিন্তু নরসংহার থামেনি – একাত্তরের পরও বেছে বেছে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের ঘটনা ঘটেই চলেছে।”

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।

পাকিস্তানি সৈনিকদের হাত থেকে বাঁচার জন্যে হিন্দুকে অভিনয় করতে হয়েছে মুসলমান হওয়ার। লুঙ্গি পড়ে ভয়ে প্রাণ হাতে নিয়ে তাঁরা ঘরের বাইরে পা রেখেছে। কিন্তু লুঙ্গি পরলেই কি প্রমাণ হয় তিনি হিন্দু নন? তাই তাঁকে কাপড় উঠিয়ে প্রমাণ দিতে হয়েছে সত্যিই তিনি মুসলমান কিনা! শ্রীমতি ‘অমুক’কে হতে বেগম!

পাকিস্তানের সৈনিকরা রাজাকার বা সমর্থনকারীদের ছেড়ে দিলেও ছাড়েনি হিন্দুকে।

মুক্তিযুদ্ধের ভয়ংকর এই দিনগুলোতে লক্ষ লক্ষ শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছে।

এবং ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের দখলদারির বিরুদ্ধে একজোট হয়েছিল বাঙালি-মুসলমান সকলে। এবং প্রত্যেকে বাঙালি হয়ে দেশমাতৃকে রক্ষা করার জন্যে যুদ্ধে নেমেছিল।

বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির সত্তাকে শেখ মুজিবর রহমানের পরিবারকে হত্যা করে। দেশের বাইরে থাকার জন্যে বেঁচে গেলেন বর্তমান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তথা মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা।

চূড়ান্ত জাতীয় নাগরিকপঞ্জী থেকে জানা গেছে, ৭১ সালের পর বাংলাদেশ থেকে অসমে এসেছেন ৫ লক্ষ ৪ হাজার মানুষ।

যে সংখ্যাটাকে বাড়িয়ে লক্ষে লক্ষে (মুখে মুখে) পরিণত করার চেষ্টা চলছে।

সূত্রের খবর, লোকসভায় আটকাতে না পারলেও রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব বিলটি আটকে দেওয়ার মরিয়া চেষ্টা করবে কংগ্রেস।

লোকসভার রাজ্যসভায় তুলনায় শক্তি অনেকটাই বেশি বিরোধীদের। তাই যতটা সম্ভব বিরোধীরা চাইছে,  কোনওভাবে যদি বিলটিকে আটকানো যায়।

কংগ্রেস সূত্রে লাভ করা খবর অনুযায়ী, দলের তিন বর্ষীয়ান নেতা এই বিলের বিপক্ষে বক্তব্য রাখবেন। কংগ্রেস শিবিরের নেতৃত্ব দেবেন কপিল সিব্বল। বক্তব্য রাখবেন আনন্দ শর্মা এবং অসমের সাংসদ রিপুন বরা।

এদিকে কিন্তু সংখ্যাতত্ত্ব বলছে,  বিরোধীদের হাজার চেষ্টা হয়তো কাজে লাগবে না।

লোকসভার তুলনায় রাজ্যসভায় বিরোধীদের শক্তি বেশি হলেও, বিলটিকে আটকে দেওয়ার মতো কোন জায়গা নেই তাঁদের।

রাজ্যসভার মোট আসনসংখ্যা হচ্ছে ২৪৫। সেই হিসেবে বিল পাশ করাতে ১২৩ জন সাংসদের সমর্থন প্রয়োজন।

তবে, এই মুহূর্তে ৭টি আসন মোট ফাঁকা পড়ে আছে। তাই, ফিগার কমে দাঁড়িয়েছে ১২০ এ।

এই মুহূর্তে দল হিসেবে একা বিজেপির হাতে রয়েছে ৮৩ জন সাংসদ।

বিজেপির অন্যান্য জোট মিলিয়ে এনডিএ-র মোট সাংসদ সংখ্যা ১১৯।

সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন মাত্র ১টি অতিরিক্ত আসন।

এদিকে অসম, ত্রিপুরা উত্তাল হয়ে উঠেছে নাগরিকত্ব বিলের বিরুদ্ধে। উত্তর-পূর্ব ছাত্র সংস্থা ক্যাবের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার আহ্বান জানানো ১১ ঘন্টা বন্ধে সমগ্র অসম উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

টায়ার জ্বালিয়ে রাজপথ বন্ধ করে প্রতিবাদ সাব্যস্ত করছে।

মূলত অসমে এবং ত্রিপুরায় কেন অশান্তি?

অসমে অশান্তির কারণ মূলত ভাষা৷ অসমিয়ারা বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের বিরোধী৷ তাঁদের কাছে বাংলাদেশিদের ধর্মীয় বিভেদ গুরুত্বহীন৷ মুসলমান বা হিন্দু – কোনও বাংলাদেশিকেই অসমে অনুপ্রবেশ করতে দিতে চায় না অসমবাসী৷ তাঁদের মতে অসমে ভাষাগত এবং সাংস্কৃতিক সমস্যার সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশীরা৷ ত্রিপুরার একটি অংশের মানুষও এই বিলের বিরোধী৷

অসমের বরাক উপত্যকার জনগণ কী ভাবছে ক্যাব নিয়ে?

বাঙালি অধ্যুষিত বরাক উপত্যকায় বাংলাভাষাভাষিরা নাগরিকত্ব বিলকে সমর্থন জানিয়েছে। কারণ তারা মনে করে ওই বিল তাঁদের বাঁচাবে৷ কারণ জাতীয় নাগরিকপঞ্জী বা ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস (এনআরসি) -এর ফলে প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষ ওই তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন৷

 

 

 

 

এন ই নাও নিউজ

Recent Posts

বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহে রেললাইন বেঁকে ট্রেন চলাচল বিঘ্ন

ঢাকা: বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহে রেললাইন বেঁকে ট্রেন চলাচল বিঘ্ন ঘটছে। যাকে রেলের ভাষায় বলা হয়…

14 hours ago

সাপ্তাহিক রাশিফল

মেষ রাশির জাতক জাতিকাদের জন্য সপ্তাহটি ভালোই হতে চলেছে। অর্থ উপার্জন হবে। সমাজে সম্মান বাড়বে।…

19 hours ago

বাংলাদেশে তাপদাহে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুনঈশ্বরদীতে রেললাইনের পাত বেঁকে গেছে

ঢাকা: বাংলাদেশে চলতি বছর সীমাহীন তাপদাহে মানুষের জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশে সরবোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে…

1 day ago

আপনার আজকের দিনটি

সিংহ: আজকের দিনটি আপনার জন্য নতুন কিছু শেখার দিন হবে। ভাগ্যের দিক থেকে দিনটি ভালোই।…

2 days ago

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত

ঢাকা: বাংলাদেশে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে আবুল কালাম (২৫)…

2 days ago

ভোট দিলেন নারায়ণ মূর্তি

কলকাতা: ভারতে ৭ দফা ভোটের আজ শুক্রবার দ্বিতীয় দফার ভোট। পশ্চিমবঙ্গ, অসম, বিহার সহ ১৩…

3 days ago