২০১৯ সংসদীয় নির্বাচনের আগাম সমীক্ষা সহ ডান বাম সব একজোট হয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ও বিরোধী মহাজোটের যাবতীয় আখ্যান তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছে ম্যাসিভ উইন ভারতীয় জনতা পার্টর।
রাজনৈতিক বৌদ্ধিকমহলের ভোটপ্রাক্ ও পরবর্তী সমীক্ষার উর্ধ্বে উঠে প্রান্তিক বরাক উপত্যকার ১ ও ২ নং সংসদীয় আসনেও বিজেপির ম্যাসিভ উইন। শিলচরে রীতিমত রেকর্ড ভোটে জয় হাসিল বিজেপির।
অন্যদিকে দীর্ঘ ২৩ বছরের খরা কাটিয়ে ১ নং সংসদীয় আসন করিমগঞ্জে বিজেপির অবিশ্বাস্য জয়। বলতে গেলে বরাকেও এবার বিরোধী শিবির কুপোকাত । তবে ২০১৯-এর নির্বাচনী মহারণে তাৎপর্যপূর্ণভাবে বরাকের দুটি সংসদীয় আসনের ক্ষেত্রে দেখা গেছে মোদী ম্যাজিকে ভোটাররা প্রভাবিত হয়ে একতরফা নরেন্দ্র মোদীকে সমর্থন করেছেন। এখানে দলীয় নেতা মন্ত্রী সহ কর্মীদের কোনও রসায়ন ধোপে টিঁকেনি। করিমগঞ্জ ইউডিএফের গড় বললেও এবার খেই হারিয়ে ফেলে দলটি।
অন্যদিকে শিলচর লোকসভা সমষ্টির অধীন সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের ভোট পর্যালোচনা করলে পরিস্কার ভাবেই দেখা গেছে ভোট বিভাজনের একটা বড় ফ্যাক্টর কাজ করেছে। ছিটেফোঁটা ভোট এদিক-ওদিক হলেও বৃহত্তর অংশের ভোট দুইভাগেই বিভক্ত হওয়ার চিত্রই প্রায় স্পষ্ট ছিল।
এক্ষেত্রে সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু ভোটারের দুটি দিকও সামনে এসেছে। প্রথাগতভাবে এবারও প্রান্তিক বরাক উপত্যকার হাজারও সমস্যার কথা গৌণ হয়ে পড়ে। হিন্দু-মুসলমান কার্ডের উপর ভিত্তি করেই নির্বাচনী হারজিৎ নিশ্চিত হয়। প্রসঙ্গত, প্রাক্ নির্বাচনী সমীক্ষায় শিলচরে এবার দ্বিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা ছিল একেবারে শুরু থেকেই। কেননা এখানে কংগ্রেস ইউডিএফের মধ্যে ম্যাচ ফিক্সিং-এর একটা আভাস থাকায় সরাসরি কংগ্রেস বনাম বিজেপির লড়াই ছিল। আখেরে ঘটেছেও তাই। ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর সেই সম্ভাবনাই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তবে ভৌগোলিক দিক দিয়ে কাছাড়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাটিগড়া বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপির ভোট বৃদ্ধি হয়েছে বলা যায়।
২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে যেখানে ৬০ হাজারের কাছাকাছি ভোট পড়ে বিজেপির ঝুলিতে। মাত্র তিন বছরের মোড়ে বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৭০ হাজারের কাছাকাছি । এখানকার শাসকদলীয় বিধায়ক অমরচাঁদ জৈন বেশ আত্মবিশ্বাসী । ভোট পরবর্তীতে ৭০ হাজার ভোটের বাজি ধরেছিলেন এবং ফলাফল শেষে বাজিমাত করেন তিনি ।
কিন্ত কংগ্রেস প্রার্থী সুস্মিতার লিড ঠেকানো যায়নি কাটিগড়ায়।প্রায় সাড়ে ৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে কংগ্রেস প্রার্থীকে এগিয়ে রেখে এখানকার কংগ্রেসীরা মুখ রক্ষা করলেও শিলচর,ধলাই, উদারবন্দ,লক্ষীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে রীতিমত মুখ থুবড়ে পড়ে কংগ্রেস ।
আর এখান থেকেই সাংসদ সুস্মিতার হাত থেকে ফসকে যায় দ্বিতীয়বারের মত সাংসদের আসনটি। বস্তুত, নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে যতবেশী আক্রমণাত্মক বয়ানবাজী করে নির্বাচনী রণনীতি তৈরি করেছিলেন বিরোধীরা,ততবেশি ভোট একাট্টা হয়েছে নরেন্দ্র মোদীর পক্ষে,অন্যথায় ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে প্রবল মোদী হাওয়া বইলেও অধরা রয়ে যায় প্রান্তিক বরাক উপত্যকার ১ ও ২ নং সংসদীয় আসন দুটি ।
মোদী ক্যরিশ্মায় সারা দেশে যখন নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি ও বিজেপির মিত্রজোটের প্রবল উত্থান ঘটেছিল ঠিক তখন বরাক উপত্যকায় খাতা খুলতে পারেনি পদ্মশিবির। কিন্তু এবার সত্যিকার অর্থেই ব্যতিক্রম ঘটে বরাকে। যদিও এই ব্যতিক্রমের নেপথ্যে একমাত্র প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
এক্ষেত্রে অন্য কারো কোনও হাত নেই বলে মনে করেন রাজনৈতিক বৌদ্ধিকমহল। ভোটের পরিসংখ্যান মতে, কাটিগড়া সমষ্টির মোট ১লক্ষ ৭৩হাজার ৬৬২ মোট ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে ৭৪ দশমিক ০৫ শতাংশ (সরকারী সুত্র)। সেই হিসেবে ১লক্ষ ৩০ হাজারের পাশাপাশি প্রায় সোয়া লক্ষ ভোট পড়েছে এখানকার ২১৮ টি ভোটগ্রহণকেন্দ্রে। এই সোয়া লক্ষ ভোটারদের উপর কে কতটুকু প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছেন বা প্রচারপর্বে কে এগিয়ে ছিলেন ? তা এই মুহূর্তে মোটেই আলোচিত বিষয় না হলেও শাসকদলীয় বিধায়ক অমরচাঁদ জৈন ঠিকই তার দূর্গ ধরে রাখতে সক্ষম বলা যায়।
যদিও এক্ষেত্রে কালাইন ও কাটিগড়া দুই মণ্ডল কমিটির শীর্ষনেতারা কম কসরৎ করেননি। অন্যদিকে ভোটপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে কংগ্রেসের সুস্মিতাও এখানে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন।
কিন্তু সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে সাংগঠনিক যা হালহকিকৎ,তাতে কংগ্রেসের পক্ষে আগুন্তুক নির্বাচনে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়টিও চিন্তনীয় ।