দুবেলা দুমুটো পেটভরে না খেতে পেয়ে মানুষগুলো মরতে বসেছে। চাল থেকে নুন কিছুই নেই,নেই উনুনের খড়ি। এমনকি শিশুখাদ্যও নেই । হাঁড়ি শূন্য। হাতে টাকাকড়ি নেই। মালিক সুদূর কলকাতাবাসী। ২৩ মার্চ দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও স্তব্ধ যোগাযোগ ব্যবস্থার যাঁতাকলে কলকাতা ভিত্তিক এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানির মূল মালিক দিলীপ দত্ত আটকে আছেন কলকাতায়।
বহু আশা প্রত্যাশা নিয়ে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে বিভিন্ন রকমারি নাগরদোলা,মৌত কা কুয়া,শিশুদের মনোরঞ্জনের জন্য খেলনাপাতির সাজসরঞ্জাম নিয়ে ব্যাবসার তাগিদে বারুণী মেলার উদ্দেশ্যে কাটিগড়া সিদ্ধেশ্বর বরুণীমেলার মাঠে ঘাঁটি গেঁড়েছিল কলকাতা ভিত্তিক এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানিটি। সব প্রস্তুতিও প্রায় ছিল সারা ।
কিন্তু প্রকৃতির কি নিদারুণ পরিহাস । সব আশায় জল ঢেলে দিয়ে এখন না খেতে পেয়ে বিপন্ন অবস্থা শিশু,মহিলা, পুরুষ মিলে মোট ২২জনের দলটির। আচমকা লকডাউনের কবলে পড়ে দলটি বেফাঁস ফেঁসে আছে। না যেতে পারছে বাড়িতে,না দুবেলা দুমুটো পেটভরে খেতে পাচ্ছে। এর উপর চলতি মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত লকডাউনের সিদ্ধান্তে তারা যেন আরও হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। গত ২২ মার্চ থেকে সূচনা হওয়ার কথা ছিল বহু প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বারুণীমেলার। কিন্তু এদিনই অর্থাৎ ২২ মার্চেই জনতা কার্ফুর ডাক দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মাঝে একদিনের বিরতিতে ২৪ মার্চ থেকে টানা ২১ দিনের লকডাউন তথা সর্বাত্মক বনধ্ ঘোষনা করা হয় ।
মারণব্যাধী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিস্তার পাওয়ার বিকল্প কোনও রাস্তাই খোলা ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই দমবন্ধ-করা পরিস্থিতিতেকে না মানা স্বত্বেও মেনে নিতে হয়েছে গোটা দেশকে। কিন্তু এই অপ্রত্যাশিত লকডাউনের জেরে কত মানুষ যে অভুক্ত । তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা মুশকিল ।
রবিবার সুদুর কলকাতা ভিত্তিক এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানিটির হালহকিকৎ জানতে চেয়ে বারুণীমেলার মাঠে গেলে কোম্পানিটির বর্তমান পরিচালক আলতাফ হোসেন,সুমিত্রা দাস,নিবারন সহ দলটির অনেকেই তাদের মর্মান্তিক অবস্থার কথা তুলে ধরেন।
মহামারির ভয়াবহতায় লকডাউনের কবলে সারা দেশ। বিনা মেঘে যে এমন বজ্রপাত ঘটবে তাদের জানা ছিলোনা। কিছু করারও নেই। কিন্তু তাদের আক্ষেপ একটাই এখানকার বহু সংস্থা সংগঠন, আয়োজক কমিটির কর্মকর্তা,রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এমনকি স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবেলায় নানাভাবে সাহায্য সহায়তায় এগিয়ে আসলেও তাদের বেলায় একজনও এগিয়ে আসেননি।
কেউই খোঁজখবর নেয়নি।রোজিরুটির তাগিদে বর্হিরাজ্য থেকে এখানে এসে অপ্রত্যাশিত সংকটজনক পরিস্থিতির মুখে পড়লেও তাঁদের খোঁজ কেউ নেয়নি। বর্হিরাজ্য থেকে আসলেও তারাও তো এদেশের নাগরিক । এভাবেই তাদের রোজিরুটি চললেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আজ তারা অভুক্ত ।
সংকটময় পরিস্থিতির শিকার । অথচ পাশে নেই কেউ। এই অবস্থায় আলতাফরা দুহাত তোলে সাহায্য সহায়তার আকুল আর্জি জানিয়েছেন। প্রান্তজ্যোতির তরফেও কাছাড় জেলাপ্রশাসন সহ স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় অগ্রনী সামাজিক সংগঠনগুলোকে লকডাউনের জেরে আটকে পড়া অসহায় শিশু মহিলাদের অন্তত দুবেলা দুমুটো খাওয়ার ব্যবস্থা করার আবেদন জানানো হচ্ছে।