দমবন্ধ-করা ফ্ল্যাট কালচারে অভ্যস্ত দ্রুতগামী নগরীর অন্ধকার অলিগলিতে নিত্যদিন সংগঠিত নৃশংস ও অমানবিক ঘটনার বলি হতে হয়েছে মফঃস্বল এলাকারই কোনও এক দুস্থ দরিদ্রকে। কাছাড় জেলার ইন্দো-বাংলা সীমান্তবর্তী কাটিগড়া মহকুমা এলাকার দুধপুর প্রথম খণ্ডের হতভাগিনী এক মা দিলারা খানম চৌধুরী তার নিরপরাধ যুবতী মেয়ে জায়েদা বেগমের নৃশংস ও অমানবিক ঘটনার কথা খোলসা করতেই কার্যত স্পষ্ট হয়ে গেল যে, হ্যাঁ একবিংশ শতকের দোরগড়ায় এসে সত্যিকার অর্থেই মানবিকতার আর্তচিৎকার নির্বাক হয়ে পড়েছে।
ব্যাঙ্গালুরুতে চাকরি,একেবারে কেতাদুরস্ত প্রেমিকের ঢং ধরে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রথমে প্রেমিকাকে অপহরণ পরে নির্মমভাবে খুন। অভিযুক্ত প্রেমিক । লক্ষণীয়ভাবে মৃতদেহ থেকে কিডনি গায়েব। প্রায় ১মাস পর বুধবার দুপুরে ঘটনার খোলসা করতে গিয়ে যুবতীর অভিভাবকের অভিযোগ, ব্যঙ্গালুরুতে ফুসলিয়ে নিয়ে গিয়ে ১৫ দিনের মাথায় খুন করে দুটি কিডনি গায়েব করেছে পাষণ্ড যুবক। তাদের সন্দেহের আবর্তে সেখানকার পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রেমের অন্তরালে এহেন লোমহর্ষক ঘটনা তো আকছার টেলিভিশনের ডিটেকটিভ ধারাবাহিক গুলোতে দেখা যায়। কিন্তু বাস্তবে এমনটাই যে ঘটে,তার দৃষ্টান্ত অবশ্যই এই ঘটনা ।
এখানকার চেতনা ভবনে সাংবাদিকদের কাছে তার ষোড়শী মেয়ের অকাল মৃত্যুর ন্যায় বিচার চেয়ে খুনী,পাষণ্ড আব্দুল বাছিত ও তার গোটা পরিবারের কঠোর শাস্তির দাবি করেন। সন্তান শোকে কাতর বাবা তমিজ উদ্দিন ও মা দিলারা জানান, চলতি বছরের ২৯ মার্চ মাসীর বাড়ীতে যাওয়ার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি তার মেয়ে। ওইদিনই প্রেম ভালোবাসার ফন্দি এঁটে রীতিমত ডাকাতি করে তার মেয়েকে নিয়ে যায় কাছাড়ের বড়যাত্রাপুর চাঁদপুরের বিলাল উদ্দিনের ছেলে আব্দুল বাছিত।
কাজের সুবাদে ব্যাঙ্গালুরুতে থাকলেও গ্রামের বাড়ীতে আসলেই দুধপুর প্রথম খণ্ডের জায়েদা বেগমের বাবা তমিজ উদ্দিনের বাড়িতে আনাগোনা ছিল নিয়মিত । আর এখান থেকেই ষোড়শী যুবতীর সঙ্গে নীরবে সম্পর্ক গড়ে তুলে চুতুর আব্দুল বাছিত। সম্পর্কের নিরিখে প্রেমিকা জায়েদাকে নিয়ে গত ২৯ মার্চ চম্পট দেয় প্রেমিকযুগল।
১৫ দিন পর অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল আচমকা খবর আসে জায়েদা নাকি আত্মহত্যা করেছে। খবর পেয়ে দিশেহারা জায়েদার অভিভাবকরা। পরে সেখানে কর্মরত জায়েদার এক কাকুকে জোরকরে অভিভাবক সাজিয়ে ফেক স্বাক্ষর করিয়ে মৃতদেহ সমজে দিয়ে গাঢাকা দেয় পাষণ্ড প্রেমিক । থানা পুলিশ সহ হাসপাতালের যাবতীয় সামলে কোনোমতে জায়েদার নিথর মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসলে সেখানেও ঘটে বিপত্তি । আব্দুল বাছিতের পরিবার থেকে হুমকিধমকি সহ মৃতদেহটি কবরস্থ করার ফন্দি আঁটেন। যদিও তমিজ উদ্দিনরা পূর্ণ সৎকারের মাধ্যমে মেয়েকে কবরস্থ করার পক্ষপাতী ছিলেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের বাকবিতণ্ডাও ঘটে বলে সাংবাদিকদের জানান তারা । পরে অবস্থা বেগতিক দেখে মধ্যস্থতায় নামেন জেলার দুই গ্রাম পঞ্চায়েত্ বড়যাত্রাপুর ও গণিরগ্রাম জিপির দুই পঞ্চায়েত্ সভাপতি । ঘটনার বিষয়বস্তু নিয়ে ওয়াকিবহাল হওয়ার পর বিহিত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মিলবে সুবিচার বলে আশ্বস্ত করলেও সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা সুর চওড়া করে দুই মধ্যস্থতাকারীদেরও বুড়ো আঙ্গুল দেখায় আব্দুল বাছিতের বাবা বিলাল উদ্দিন সহ তার পরিবার ।
এদিকে কাটিগড়া থানায়ও যোগাযোগ করে হতভাগিনী জায়েদার পরিবার। কিন্তু মিলেনি কোনো সুবিচার । যাবতীয় তথ্য প্রমাণাধী না পাওয়ায় পুলিশও বেশি দুর এগোতে পারেনি। তবে কাকতালীয়ভাবে দেখা গেছে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের সঙ্গে কিডনি গায়েবের কোনো মিল নেই। গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যাজণিত কারনে জায়েদার মৃত্যু হয়েছে বলে সেখানকার হাসপাতালের তরফে ইস্যু করা রিপোর্টের সঙ্গেও একমত নন তারা। তাদের জ্যোষ্ঠ কন্যাকে মুখে চাপা দিয়ে খুন করা হয়েছে বলে সাফ অভিযোগ করেন তারা । তাদের সাফকথা,ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তক্রমে অভিযুক্ত প্রেমিক ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করে তাদের মেয়ের উপর অকথ্য অত্যাচারের ন্যায় বিচার হোক। পাষণ্ড আব্দুল বাছিতকে পুলিশী হেফাজতে আনলেই রহস্য উদঘাটন হবে বলে মনে করেন তারা ।
উল্লেখ্য,অভিযুক্ত প্রেমিক আজও উন্মুক্ত আকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। গোটা ঘটনাপ্রবাহে একটি যুবতীর অকাল মৃত্যুর ঘটনা নেহাৎ নিদারুণ ও মর্মস্পর্শী । ফলে পুলিশ প্রশাসনকে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহনের আর্জি জানান অভিভাবক সহ শুভবুদ্ধিসম্পন্ন জনগণ ।