হিন্দুস্তান পেপার করপোরেশনের অধীন কাছাড় পেপার মিল এবং জাগিরোড পেপার মিল দুটোর শ্রমিকদের উদ্যোগমন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোয়ারি আবাসগৃহ ছেড়ে যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন।
কর্মচারীদের অনিশ্চিত জীবনে কিছু বৃত্তি প্রদানের ঘোষণা করে বুঝিয়ে দিলেন আজ মন্ত্রী ড০ হিমন্ত বিশ্ব শর্মা।
বৃহস্পতিবার গুয়াহাটি ‘জনতা ভবন’ এ অনুষ্ঠিত এক প্রেস কনফারেন্সে হিন্দুস্তান পেপার মিলের মোট ৭০০ কর্মচারীর মেয়ে-ছেলেদের জন্যে এককালিন সাহায্যের কথা ঘোষণা করলেন হিমন্ত বিশ্ব শর্মা।
তিনি কৌশলে বলেনঃ “কাছাড় পেপার মিল এবং জাগিরোড পেপার মিলের মোট ৭০০ কর্মচারীর সন্তান অসমের ভিতর এবং বাইরে পড়াশুনা করার জন্যে গিয়েছিলেন। কিন্তু আর্থিক দুর্বলতার জন্যে তাঁদের জীবন অনিশ্চিয়তার অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে চলেছে।” ফলে তাঁদের জন্যে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এই শুভাচ্ছে প্রদান করা হবে।
ভোট সামনে। ফের আশার হাত রাজ্য সরকারের।
#হিন্দুস্তান পেপার করপোরেশনের যেসমস্ত কর্মচারীর সন্তানেরা মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং অথবা সে ধরনের কোর্সে অসমের ভিতর এবং বাইরে লেখাপড়া করছেন, তাঁদের এককালিন সাহায্য হিসেবে ১ লক্ষ টাকার অনুদান দেয়া হবে।
#হিন্দুস্তান পেপার করপোরেশনের যেসমস্ত কর্মচারীর সন্তানেরা পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রি অথবা গবেষণা করছেন, তাঁদের এককালিন সাহায্য হিসেবে প্রদান করা হবে ৭৫ হাজার টাকা।
#একইভাবে গ্রেজুয়েশন এবং পলিটেকনিক প্রভৃতি ডিপ্লোমা কোর্সের জন্যে মোট ৫০ হাজার টাকা বৃত্তি প্রদান করা হবে।
#উচ্চ মাধ্যমিক অথবা একই ধরনের সমকালিন ক্লাসের জন্যে এককালিন ২৫ হাজার টাকা এবং প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ১০ হাজার টাকার এককালিন অনুদান দেয়া হবে হিন্দুস্তান পেপার করপোরেশনে কাজ করা কর্মচারীদের সন্তানকে।
অর্থমন্ত্রী হিমন্ত শর্মা এও জানিয়ে দিয়েছেন যে, যদি কোন পরিবারের বড় সন্তান মেডিকেল নিয়ে পড়াশুনা করছেন, কনিষ্ঠ সন্তান করছেন গ্রেজুয়েট এবং মধ্যম সন্তানটি পোস্ট গ্রেজুয়েট করছেন সে পরিবারের প্রত্যেক সন্তানকেই এই বৃত্তি প্রদান করা হবে।
অর্থাৎ এই অনুদান পরিবারপিছু নয়, মাথাপিছু বলেই এদিন উল্লেখ করেন বিশ্ব শর্মা।
প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে মন্ত্রী এদিন জানান।
ফাইনান্স ডিপার্টমেন্টের ওয়েব পোর্টেলটি আগামি ১৪ জানুয়ারি থেকে মুক্ত করা হবে। সময়সীমা ২০ জানুয়ারির ভেতর।
অর্থাৎ ১৪ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ৭০০ কর্মচারীর সন্তানেরা প্র-পত্র পূরণ করে বৃত্তির জন্যে আবেদন করতে পারবেন অসম সরকারের কাছে। আবেদন করার জন্যে কোনপ্রকার প্রমাণ পত্রের প্রয়োজন হবে না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
এরপর ২০ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত জেলা শাসক সে আবেদনের ভিত্তিতে সরেজমিনে তদন্ত কার্য সম্পন্ন করবেন।
সমস্ত তদন্ত শেষে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রাজ্য সরকারের বিত্ত বিভাগ ডিবিটির মাধ্যমে ট্রান্সফার করা হবে।
হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সচিবালয় থেকে বৃহস্পতিবার জানিয়ে দিয়েছেন যে, হিন্দুস্তান পেপার করপোরেশনের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরা রাজ্য সরকারের এই বৃত্তির আওতায় পড়বেন না। কেবল বর্তমানের ৭০০ কর্মচারী এর আওতায় আসবেন।
উল্লেখ্য যে, চার বছর থেকে লকআউট হিন্দুস্তান পেপার করপোরেশনের অধীন কাছাড় পেপার মিল এবং জাগিরোড পেপার মিল দুটো।
২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে নির্বাচনী ভাষণে বলা হয়েছিলে শাসনক্ষমতায় আসলে কাগজকল দুটি খুলে দেওয়া হবে।
তালে তাল ঠুকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। একবার নয়, বহুবার রাজ্য সফরে এসে উদ্ধত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলে ছিলেন বিজেপি ক্ষমতায় এলে ‘ধোঁয়া নিকালকে দিখায়েঙ্গে‘। আর সে বছরই কেন্দ্রে ক্ষমতা দখল করে বিজেপি।
২০১৬ সালে অসমেও বিপুল জনসমর্থন নিয়ে সরকার গড়ে নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি। যদিও পরবর্তীতে কথা রেখেছেন মোদীজী ও সর্বানন্দ সোনোয়াল । ধোঁয়া বেরোচ্ছে। তবে বুঝতে ভুল করেছিলেন পাঁচগ্ৰাম কাগজ কলের কর্মীরা অনেকেই। তাঁরা ভেবেছিলেন, কারখানার চিমনি থেকে ধোঁয়া বেরোবে। কিন্তু বাস্তবে এর উল্টোটাই ঘটলো।
কাগজকলের সহস্র কর্মচারীরা বেতনহীন হয়ে অভুক্ত অবস্থায় বিনা চিকিৎসায় দিন যাপন করছেন। অসমে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে বিশ্ব বিনিয়োগ সন্মেলন অনুষ্ঠিত হল। কিন্তু রাজ্যের বৃহৎ শিল্পোদ্যোগ দুটি খোলার ব্যবস্থা করেনি,বরং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় ২ লক্ষ শ্রমজীবি কর্মজীবি সহ তাদের পরিবারবর্গকে অন্ধকারের দিকে একরকম জোর করে ঠেলে দেওয়া হয়।