“আমরা লাঠিচার্জ ও বুলেটের মুখোমুখি হতে জন্মাইনি।” কেন্দ্রীয় সরকারের এনপিআরের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন লেখিকা অরুন্ধতি রায়।
তিনি ক্ষুব্ধ কন্ঠে স্পষ্টভাবে সকল দেশবাসীর উদ্দেশে আহ্বান জানিয়েছেন, “জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্টারের জন্য আপনার বাড়িতে সরকারের লোক যাবে। আপনার নাম, ঠিকানা ও অন্যান্য তথ্য জানতে চাইবে। আধার বা ড্রাইভিং লাইসেন্সও চাইতে পারে। আপনার নাম বা ঠিকানা জানতে চাইলে ওঁদের ভুল তথ্য দিয়ে দেবেন। আমরা শুধু লাঠি বা গুলি খাওয়ার জন্য জন্মায়নি।”
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন চলাকালীন অবস্থায় বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে ঠিক একথাই জানিয়েছেন লেখক। বুধবার সিএএ এবং এনআরসি বিরোধি প্রতিবাদে যোগ দেওয়ার জন্যে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন অরুন্ধতী।
তিনি জানাচ্ছেন, ওই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন দিয়ে দেশের হিন্দু-মুসলিম ভাগ করা হচ্ছে। কেন্দ্রের এই বিভাজনরীতি কোনভাবেই মেনে নেয়া যাবে না।
“আমরা লাঠিচার্জ ও বুলেটের মুখোমুখি হতে জন্মাইনি” অরুন্ধতী রায়ের এই করুণ অথচ দৃঢ় মন্তব্য হইচই ফেলে দিয়েছে চারদিকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়েছে সে ভিডিও।
এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিশানা করেও তিনি বলেন, ‘”দিল্লির রামলীলা ময়দানে দাঁড়িয়ে একের পর এক মিথ্যে কথা বলে গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী। যদিও তিনি ধরা পড়ে গিয়েছেন। কিন্তু তিনি জেনে বুঝেই বলেছেন কারণ কিছু সংবাদমাধ্যম আছে, যারা প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করার ক্ষমতা রাখে না।”
গত ২২ ডিসেম্বর দিল্লির রামলীলা মাঠে দেওয়া ভাষণে মোদি বলেন, ২০১৪ সাল থেকে আজ পর্যন্ত একবারও তাঁর সরকার দেশে এনআরসি’ কথা একবারের জন্যে উচ্চারণ করেনি। অসমে কেবল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নাগরিকপঞ্জি হয়েছে!
এমন বার্তায় প্রশ্ন সারা দেশবাসীর মনে। কারণ বিগত নভেম্বর মাসে এবং ক্যাব উত্থাপনকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গর্বের সাথে জানিয়ে দিয়েছেন এনআরসি হচ্ছে সারা দেশে।
প্রধানমন্ত্রীর দু’ঘণ্টার বক্তৃতা শেষে তাই কার্যত স্তম্ভিত বিরোধীরা।
রাজনৈতিক শিবিরের মতে, নাগরিকপঞ্জি নিয়ে সারা দেশে আতংক এবং ধোঁয়াশা বাঁচিয়ে রাখাই এখন বিজেপির কৌশল।
এদিকে, জাতীয় নাগরিকপঞ্জি, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে গোটা দেশ যখন কাঁপছে ভয়ে, হিংসায় ঠিক সে মুহূর্তে জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জি বা ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টারে ছাড়পত্র দিল সরকার।
এই ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার বা এনপিআর সম্বন্ধে মত যে, এটি এনআরসি’রই প্রথম ধাপ।
এদিকে গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ বহুবার বলেছেন, এনপিআরের সঙ্গে এনআরসি’র কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু তাঁরই সংসদের লোক এক-দু বার নয় নয়বার বলেছেন এনপিআর এনআরসি’র সঙ্গে যুক্ত।
এনপিআর আপডেট শেষবার হয় ২০১৫ সালে। আবার ২০২০-তে এনপিআর আপডেট করতে চাইছে কেন্দ্র। কাজ চলবে ২০২০ সালের এপ্রিল মাস থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তারপরই ২০২১ সালের জনগণনা।
৪ জুলাই, ২০১৪ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় গৃহরাজ্যমন্ত্রী কিরণ রিজিজু রাজ্যসভায় কংগ্রেস সাংসদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, এনপিআরের সমীক্ষা চলমান এবং এর মাধ্যমেই নাগরিকত্ব স্থিতির ভেরিফিকেশন করা হবে। এমনকি স্বয়ং অমিত শাহ রাজ্যসভায় বলেছিলেন এনপিআর এনআরসি’র প্রথম পদক্ষেপ।
লেখক অরুন্ধতী জানাচ্ছেন, সবাইকে এর বিরোধিতায় সরব হতে হবে। মেনে নেয়া হবে না বিভাজনমূলক রাজনীতি।