অসম

বরাকের করিমগঞ্জে বিজেপি উত্থানের নেপথ্যে প্রথমসারীর নেতা বিনোদলাল দত্ত

গোটা বিশ্বের রাজনৈতিক পরিসরে সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলের শিরোপা অর্জনকারী ভারতীয় জনতা পার্টির প্রবল উত্থানে জীবনের একানব্বইটি বসন্ত পেরিয়ে এসেও যেন আরও একশো বছর বেঁচে থাকার খোরাক পেয়েছেন বিজেপির এক প্রবীণ নেতা।

বয়সের ভারে আজ হয়তো অনেকটাই মুক্ত অভিলাষী, ভাবলেশহীন। অনেকটাই অচেনা, অপরিচিত। আশির দশকের শেষলগ্নে কংগ্রেসের বিশাল বৃত্ত বরাক উপত্যকায় অদম্য সাহস আর দৃঢ় সংকল্প নিয়ে ভারতীয় জনতা পার্টির ধ্বজা বয়ে বেড়ানো তুখোড় ও বাকপটু এই নেতা ছিলেন প্রথমসারীর নেতা। নাম বিনোদলাল দত্ত, বাড়ি বদরপুর সমষ্টির মালুয়ায়। ছিলেন সর্বজন পরিচিত।

উত্তরপূর্বাঞ্চলে বিজেপির মূল স্থপতি, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা কিংবদন্তী নেতা কবীন্দ্র পুরকায়স্থ, অধ্যাপক সুখেন্দু দেব, কুমুদ ভট্টাচার্যদের পাশাপাশি একান্তসঙ্গী প্রয়াত মাখনলাল দেবকে সঙ্গে নিয়ে বরাকে বিজেপির প্রচার প্রসারে নিবেদিত প্রাণ বিনোদলাল দত্ত এখনও এই বয়সে এসেও দলের সঙ্গে এক অটুট সম্পর্ক ধরে রেখেছেন।

সম্প্রতি এক আলাপচারিতায় প্রখর জীবনবোধকে সঙ্গী করে পথচলা একানব্বই বছর বয়সী বিজেপির এই প্রবীণ নেতা বেশ সাবলীলভাবে কথা বললেন প্রায় ঘন্টা দেড়েক।

দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি প্রায় লুপ্ত। এরপরও অনর্গল কথা বললেন তার সুদীর্ঘ জীবনের রাজনৈতিক পথচলার নানা দিক নিয়ে, বললেন বরাকে বিশেষকরে ইন্দো-বাংলা সীমান্তঘেঁষা করিমগঞ্জ, বদরপুরে পার্টির উত্থানে তার বহু সহযোগী কর্মী সমর্থকদের অগাধ ও অসীম সাহস এবং আত্মত্যাগ সম্পর্কে, স্মরণ করলেন বিজেপির মুল কাণ্ডারী প্রয়াত অটলবিহারী বাজপেয়ী সহ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী, পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের বিরামহীন কর্মকাণ্ডকে।

দীর্ঘ আলোচনায় উঠে আসে প্রবীণ এই বিজেপি নেতার আক্ষেপের কথাও। স্বচ্ছতা বজায় রেখে রাজনীতির দীর্ঘ পথ হেঁটে বয়স ও সময় দুটোর কাছেই হার মেনে জীবনসায়াহ্ণে এসে আজ সবকা সাথ সবকা বিকাশ ঔর সবকা বিশ্বাস অটুট রাখার স্বপ্ন বাস্তব আকার ধারণ করতে চলছে বা চলেছে। তা এই বুড়োমানুষটাকে প্রেরণা জুগিয়েছে। নিজেই বললেন।

গোটা জীবন পার্টির নানারকম কর্মকাণ্ডে নিজেকে ব্যস্ত রেখে, নিজের প্রাপ্তির ভাঁড়ারটা যে শূন্যই ছিল। তিনি হয়তো বেমালুম ভুলে গেছেন বা মনে রাখতে চাননি কখনও। এবং সেই কারণেই হয়তো আজও সংস্কার সংস্কৃতি ভুলেননি। ভুলেননি মানবিকতার আর্তচিৎকারকে।

তিন ছেলে, বড় ছেলের বয়স এখন ৫৬। মধ্যম ছেলেকে পাওয়া যায়নি। তবে রাজ্যের বনবিভাগে কর্মরত ছোট ছেলের মুখে পার্টির প্রতি বাবার ডেডিকেশন, পার্টিসিপেশন ও কন্ট্রিবিউশন এই তিনটি বাক্যের কথা বারবারই উঠে আসে। উঠে আসে বর্তমান কেবিনেট মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্যের কথাও। বিজেপির এই প্রবীণ নেতার সাথে একমাত্র পরিমল বাবুরই নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। বলতে গেলে তিনি খোঁজখবর নিতেন। তবে মন্ত্রীত্বের দায়িত্ব পাওয়ার এখন আর তেমন যোগাযোগ হয়না বলেই তার কথায় জানা গেছে। হয়তো এটুকুই পাওনা ছিল।

যদিও ১৯৯১ সালে বদরপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে পার্টির মনোনয়নে ভোটে লড়ার সুযোগ এসেছিল। কিন্তু সুযোগসন্ধানীর দলে কোনদিনও ছিলেন বলে দলের একনিষ্ট কর্মী তথা একান্ত সহযোগী কুমুদ ভট্টাচার্য্যকে ১৯৯১ সালে বদরপুর আসনে প্রার্থী করে প্রচার প্রসারের দায়িত্ব নিয়েছিলেন এই বিনোদলাল বাবু।

দুর্ভাগ্যবশত কংগ্রেসের তৎকালীন ডাকবুকো নেতা আবুসালেহ নজমুদ্দিন, মওলানা আব্দুল জলিল চৌধুরীর প্রভাব প্রতিপত্তির কাছে পরাজয় স্বীকার করতে হয়েছিল যদিও হাল ছাড়েননি।

শেষভাগে দীপক দেবের মত নবপ্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে পার্টির কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িত রেখেছিলেন।

দুই দফায় বদরপুর মণ্ডল কমিটির সভাপতি এবং করিমগঞ্জ জেলা সভাপতির দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে করে পালন করেছেন।

রামমন্দির নির্মাণ কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে ১৯৯১ সালে বিনোদলাল বাবুর একক নেতৃত্বে ঐতিহাসিক শিলাপূজন কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়েছিল বদরপুরে। যা পার্টির উত্তরণের পক্ষে এক বিপ্লব বলা যায়। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সাথে জড়িয়ে ছিলেন ওতপ্রোতভাবে।

একদা প্রথমসারীর প্রচারক মালুয়া শ্রীগৌরীস্থিত মাধমধামের স্থাপনের অন্যতম হোতা বিনোদলাল বাবুর ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। মাধমধামের বিশাল ভবন নির্মাণে তার যেমন যোগদান ছিল অপূরণীয় তেমনি পার্টির পক্ষে জনসমর্থন জোটবদ্ধ করার ক্ষেত্রে তার যোগদান ছিল অবর্ণনীয়।

দুই ছেলের মাধ্যমে জানা গেছে, বিনোদলালবাবু এখনও নিয়মিত সংবাদে নজর রাখেন, বর্তমান নবপ্রজন্মের ছেলেপুলেদের কাছে খবর রাখেন তার পার্টির বিষয়ে। আজও কৌতূহল কাটেনি, ৯১ বছর বয়সে এসেও নিয়মিত খোঁজ নেন গেরুয়া বাহিনীর।

তবে আফসোস একটাই, কেন্দ্রে ও রাজ্যে দল ক্ষমতা দখলের পর অনেকটাই বদলে গেছে। বদলে গেছে রাজনীতির হালফিল পরিস্থিতি। এক্ষেত্রে কংগ্রেসী কালচার যেন দলের অন্দরে প্রবেশ না করে ফেলে, প্রয়াত শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী, পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় সহ প্রয়াত অটলবিহারী বাজপেয়ীর দেখানো পথ থেকে যেন অটল থাকে দল।

একাংশ ক্ষমতালোভী, স্বার্থান্বষীরা যেভাবে দলে জাঁকিয়ে বসতে শুরু করেছেন, তাতে নেতার সাজ ধরে সাধারণ মানুষের ন্যায্য অধিকার খর্ব না করেন। সেদিকে দলের বর্তমান পুরোধা যারা রয়েছেন, তারা যেন খেয়াল রাখেন।

জাতপাত, ধর্ম, বর্ণ ধনী গরিব নির্বিশেষে সবার সমঅধিকার কায়েমের স্বার্থে ভারতীয় জনতা পার্টি আগামী দিন লড়াই করবে বলে প্রবল আশাবাদী বিনোদলাল দত্ত।

অমলেন্দু মালাকার

Recent Posts

বাংলাদেশে হিটস্ট্রোকে উপজেলা মহিলা ভাইসচেয়ারম্যান প্রার্থীসহ  ৪ মৃত্যু, স্থগিত নির্বাচন

ঢাকা: বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে চলেছে। ইতিমধ্যে অতি গরমের ফলে হিটস্ট্রোকে ৩৭ জন মারা গিয়েছেন।…

4 days ago

বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহে রেললাইন বেঁকে ট্রেন চলাচল বিঘ্ন

ঢাকা: বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহে রেললাইন বেঁকে ট্রেন চলাচল বিঘ্ন ঘটছে। যাকে রেলের ভাষায় বলা হয়…

5 days ago

সাপ্তাহিক রাশিফল

মেষ রাশির জাতক জাতিকাদের জন্য সপ্তাহটি ভালোই হতে চলেছে। অর্থ উপার্জন হবে। সমাজে সম্মান বাড়বে।…

5 days ago

বাংলাদেশে তাপদাহে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুনঈশ্বরদীতে রেললাইনের পাত বেঁকে গেছে

ঢাকা: বাংলাদেশে চলতি বছর সীমাহীন তাপদাহে মানুষের জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশে সরবোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে…

6 days ago

আপনার আজকের দিনটি

সিংহ: আজকের দিনটি আপনার জন্য নতুন কিছু শেখার দিন হবে। ভাগ্যের দিক থেকে দিনটি ভালোই।…

6 days ago

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত

ঢাকা: বাংলাদেশে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে আবুল কালাম (২৫)…

7 days ago