বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে বৃহস্পতিবার ১৯ চৈত্র মহারামনবমী তিথি। বাসন্তীপূজোর মহাধুমধাম। কিন্তু করোনা-র ভয়াবহতা কেড়ে নিয়ে গেল গ্রাম কাটিগড়ার উৎসব উল্লাস । প্রতি বছর এমনই রোদবৃষ্টির মিশলে সীমান্তবর্তী কাটিগড়ার বিভিন্ন পূজোমণ্ডপে ঢাকিয়ারা ঢোল বাজায়,কাঁসর বাজায়।
শঙ্খধ্বনি,উলুধ্বনির মধ্যে দিয়ে উৎসব আনন্দে ভরে উঠে গোটা সনাতনী সমাজ। চলে মহাপ্রসাদ বিতরণের হৈ হৈ রব । কিন্তু চলতি বছর সবকিছুই যেন হিমঘরে। শূন্য খা খা করছে পথ ঘাট হাট মাঠ। বন্ধ দোকানপাট। রাজপথ জুড়ে পুলিশ আর পুলিশ । উৎসব আনন্দের পাশাপাশি বাড়তি পাওনা হিসেবে থাকে চৈত্র সেলের জমজমাট ভীড় আর বারুণী মেলার আলাদা আমোদপ্রমোদ ।
আসলে এই সময়ে সড়কের ফুটপাত জুড়ে চৈত্র-সেলের ধুমধাড়াক্কা বাজার শুরু হয়ে। থাকে রাস্তায় রাস্তায় নজরকাড়া জনসমাগম। বিশেষকরে সিদ্ধেশ্বর বারুনী মেলার মাঠে দুরদুরান্তের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে বসতে দেখা যেতো। বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ-শিশুদের দখলে চলে যেতো মেলার মাঠ থেকে শুরু করে ৬নং জাতীয় সড়কের লাগোয়া দোকানপাট। এই চৈত্র-সেলকে ঘিরে ছিল কতই না উন্মাদনা । আস্ত একটা মাস জুড়ে। এরইমধ্যে চৈত্র-বৈশাখের ঝড়বৃষ্টি। রোদবৃষ্টির লুকোচুরি খেলা থাকে প্রায় নিত্যদিন।
ঠিক আঙ্গুলে গোনে কয়েকটি দিন পার পেয়েই ১৫ এপ্রিল। পয়লা বৈশাখের নতুন নতুন ভাবনাচিন্তা,বাঙালিদের রকমারি খানাপিনা। বাঙালির ঘরে ঘরে যেন উৎসবমুখর পরিবেশ । নতুন হাল-খাতা নবীকরণ । মফঃস্বল কাটিগড়ার সবকটি দোকানে নিয়মকরেই পয়লা বৈশাখের হালখাতা মহরৎ অনুষ্ঠান। গোটা বছরের লেনদেনের হিসেব ক্লোজড। নতুনভাবে আবার যাত্রা শুরু করার সেই আদ্যিকালের প্রথা । কিন্তু অপ্রত্যাশিত একটা ভাইরাস ঝড়ে আজ পরিস্থিতি ভিন্নমোড় নিয়েছে। জীবনমৃত্যুর দৌদুল্যমান পরিস্থিতির মধ্যে স্বজন পরিজনদের নিয়ে অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো মারণব্যাধি ভাইরাসে রাজ্যে,দেশে,জেলায়,পাড়ায় ক‘জন আক্রান্ত হলো, কোয়ারিন্টিন এই নতুন শব্দের বেড়াজালে কতজন রয়েছে।
পরিস্থিতি কি একটু পরিবর্তন হচ্ছে?এনিয়ে সারাক্ষণ খবরের কাগজ, টেলিভিসন,মোবাইলের পর্দায় চোখ রেখে শংকিত প্রবীণ থেকে শুরু করে নেটিজনেরা। ভীড়েঠাসা বাজারহাট, জাতীয় সড়ক থেকে পাড়া মহল্লার রাস্তাগুলো এখন শূন্য খা-খা করছে। শুধু পুলিশ আর পুলিশ । গত ২৪ মার্চ মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষনা এই শতকের সবচেয়ে বড় ও বিপ্লবী সিদ্ধান্ত বললেও কম হয়। কেননা এরআগে অনশন,দিনব্যাপী ধর্মঘটই প্রত্যক্ষ করেছিলেন জনতা। কিন্তু লকডাউন নামের কোনও অস্বস্তিকর কিছুই প্রত্যক্ষ করেননি এ অঞ্চলের জনগন,এটুকু অন্তত হলফ করেই বলা যায়। দোকানপাট, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্
প্রশাসন, পানীয়জল,বিদ্যুত সহ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত দায়িত্বপ্রাপ্তদের পাশাপাশি সংবাদকর্মী ছাড়া আমজনতার জন্য সবকিছুই বন্ধ। এমনই একটা মোক্ষম সিদ্ধান্তের সাক্ষী হয়ে থাকবে গোটা দুনিয়া তা একেবারে অকল্পনীয় ছিল। এদিকে হোমকেোয়ারিন্টিনের সংখ্যা হুঁ হুঁ করে বাড়ছে কাটিগড়ায়। এখন পর্যন্ত এই সংখ্যা ২৫৬ ছাড়িয়েছে। তবে স্বস্তির খবর কাটিগড়ার যারা নিজামুদ্দিন মরকজে গিয়েছিলেন,তারা কেউই কাটিগড়ায় ফেরেননি। দিল্লীতেই তারা কোয়ারিন্টিনে রয়েছেন বলে সুত্রের খবর। যদিও আতঙ্কে বহর বাড়ছে সর্বত্র । এই পরিস্থিতিতে গলি মহল্লার রাস্তাঘাটগুলো ক্লোজ করে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন গ্রামের সচেতন নাগরিকরাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে।