শিলচর: ২০২০ সালের ৩১ শে মার্চ শেষ হয়েছিল আসামের শিলচরের শেষ পুরবোর্ডের মেয়াদ।
পুরনিগমে উন্নীত করার অজুহাতে বিগত চার বছর ধরে এখানে পুর নির্বাচন হচ্ছে না যার খেসারত দিতে হচ্ছে শহর বাসীকে। অথচ একই সময়ে শিলচর ও ডিব্রুগড় পুরসভাকে পুরনিগমে উন্নীত করার ঘোষণা করা হলেও ডিব্রুগড়ে এরপর পুর নির্বাচন হয়েছে, গঠিত হয়েছে পুরবোর্ড।
গত বুধবার আনুষ্ঠানিক ভাবে ডিব্রুগড় পুরসভাকে পুরনিগমে উন্নীত করা হলেও শিলচরে এই প্রক্রিয়া এখনো বিশবাঁও জলে রয়েছে।
একই রাজ্যের দুটো শহরের এমন বিপরীত অবস্থান বরাকের প্রতি সরকারের বিমাতৃসুলভ মনোভাবের জ্বলন্ত প্রমান দিচ্ছে। সমগ্র ঘটনাক্রমের পরিপ্রেক্ষিতে বরাক পৃথকীকরণ ছাড়া কোন বিকল্প নেই বলে মতামত ব্যক্ত করলেন বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট এর সদস্যরা।
এদিন সাংবাদিকদের সামনে কথা বলতে গিয়ে বিডিএফ মিডিয়া সেলের মুখ্য আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য বলেন যে নির্বাচিত পুরবোর্ডের অভাবে শহরে সবধরনের অরাজকতা চলছে।
ফুটপাথ দিয়ে হাঁটা যায়না,শহরে চুরি ডাকাতির ঘটনা ক্রমবর্ধমান। শোনা যাচ্ছে গ্যাসের পাইপলাইন বসাতে গিয়ে পানীয় জলের পাইপলাইন ফুটো করে দেওয়া হচ্ছে যারজন্য নর্দমার দুষিত জল পানীয় জলের সাথে মিশছে। স্থানীয় প্রশাসনের ভুমিকা মোটেই সন্তোষজনক নয়।
জনগণেরও অভাব অভিযোগ জানানোর কোন রাস্তা নেই কারণ স্থানীয় কোন পুরপ্রতিনিধি নেই। তাই সব অর্থেই অভিভাবক হীন হয়ে পড়েছে এই শহর। জয়দীপ বলেন যে ইদানীং দেখা যাচ্ছে যে মুখ্যমন্ত্রী বরাকের ব্যাপারে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের দায়িত্ব বরাক বাসীর কোর্টে ঠেলে দিচ্ছেন।
বরাক বাসী চাইলে উড়ালপুল হবে, শিলচরের বিধায়ক সাংসদ চাইলে শিলচর পুরসভা পুরনিগমে উন্নীত হবে ইত্যাদি। এটা মনে রাখা দরকার যে শিলচরের সাংসদ ও বিধায়ক তাঁর দলেরই । তাঁরা কি করছেন না করছেন তার দায়িত্ব কি মুখ্যমন্ত্রীর উপর বর্তায় না ?
জয়দীপ বলেন আসলে তিনি জানেন যে বরাক বাসীর কাছে কোন বিকল্প নেই। যতই অবহেলা করা হোক না কেন ভোটটা তাঁদের বাক্সেই যাবে কারণ বিরোধীরাও এসব ব্যাপার নিয়ে নীরব থাকেন। জয়দীপ বলেন যে পাঁচগ্রাম ও জাগীরোড কাগজ কল একই সময়ে বন্ধ করে দেওয়া হল।
এরপর মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করলেন যে পাঁচগ্রাম কাগজকলের জমিতে সরকারি উদ্যোগে ইন্ডাসট্রিয়াল হাব তৈরি হবে। সেই প্রতিশ্রুতি নিয়ে এরপর আর কোন উচ্চবাচ্য নেই অথচ জাগিরোড কাগজকলের জমিতে টাটা গোষ্ঠীর সহায়তায় তৈরি হতে চলেছে এশিয়ার বৃহত্তম সেমিকন্ডাকটর তৈরির কারখানা যা নিযুক্তি সহ স্থানীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে।
বরাকের চাকরি প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি দিয়েও চাকরি দেওয়া হয়না, মহাসড়কের কাজে অগ্রগতি নগন্য ,মাল্টিমডেল লজিস্টিক পার্কের জমি আজও চূড়ান্ত হলনা। জয়দীপ বলেন এটা বুঝে নেওয়া জরুরী যে বরাক বাসীকে নিজেদের বিকল্প তৈরি করতে হবে। নিজেদের উন্নয়নের ভার নিজেদেরই নিতে হবে। তাই বরাক পৃথকীকরণ ছাড়া আর কোন সমাধান নেই।
তিনি তাই সবাইকে এই দাবিতে আবারও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন তাঁদের সাংগঠনিক কাজকর্ম অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু এই দাবিতে জনগনকে স্বতস্ফুর্তভাবে সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। একই সাথে এদিন তিনি কাছাড়ের জেলাশাসকের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন যে যতদিন পানীয় জলের পাইপ লাইনের সম্পুর্ন মেরামতি না হচ্ছে ততদিন গ্যাসের পাইপলাইনের কাজ যাতে সম্পুর্ন বন্ধ রাখা হয় এই মর্মে পুর্বভারতী গ্যাস এজেন্সিকে যাতে তাঁর তরফে নোটিশ দেওয়া হয়। এবং প্রসাসনের প্রত্যক্ষ তদারকিতে যাতে অবিলম্বে এই সমস্যার সমাধান করা হয়।
বিডিএফ আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে এদিন বলেন যে গতবছরের ভয়াবহ বন্যার পর রাঙির খালের সংস্কারের কাজের শিলন্যাস করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। অথচ আবার বর্ষার মৌসুম আগতপ্রায়। অনেক সময় এপ্রিল থেকেই অতিবৃষ্টির প্রকোপ দেখা যায় এই উপত্যকায়।
অথচ সংস্কারের কাজ চলছে চূড়ান্ত ঢিমেতালে। কবে শেষ হবে কেউ জানেন না। গত সপ্তাহে শিলান্যাস হল করিমগঞ্জ মেডিক্যাল কলেজের। কাজ কবে শেষ হবে জানা নেই। অথচ এই মেডিক্যাল কলেজের সাথে আরো যে চারটি মেডিক্যাল কলেজের ঘোষণা করা হয়েছিল সবকটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়ে গেছে।
এবার আসন্ন নির্বাচনের আগে গাদাগাদা শিলন্যাস করে চলেছেন শিলচর লোকসভা প্রার্থী পরিমল শুক্লবৈদ্য। অথচ তার বিধানসভা কেন্দ্রে বহু আগে প্রস্তাবিত অনেক প্রকল্পই এখন বাস্তবায়িত হয়নি। বিডিএফ আহ্বায়ক এদিন বলেন এসব থেকে মুক্তি পেতে হলে বরাক বাসীকে সঠিক বিকল্প বেছে নিতে হবে। এবং বরাক পৃথকীকরণই সেই বিকল্প।
বিডিএফ এর পক্ষ থেকে দেবায়ন দেব এক প্রেস বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন।