অসম

NRC-র পর ডি-সন্ত্রাসে বিধ্বস্ত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী কাটিগড়ার তিন শতাধিক পরিবার

দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা ও তদারকিতে জাতীয় নাগরিক পঞ্জীয়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও সদ্যপ্রকাশিত এনআরসির চূড়ান্ত তালিকায় যাদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকাংশকে ফের ডি‘ভোটার সংক্রান্ত নোটিশ ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী কাটিগড়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ।

জানা গেছে, গত কয়েকদিনে অন্তত প্রায় তিন‘শ ডি‘ভোটার সংক্রান্ত নোটিশ কাটিগড়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত জনগণের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে খবর।

সংশ্লিষ্ট নোটিস কাছাড়ের ট্রাইবুনাল কোর্টের তরফে সীমান্ত পুলিশের মাধ্যমে নোটিশ প্রেরণ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, হাজারো নথিপত্র যাচাই করে যাদের নাম এনআরসির চূড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাদেরকে ফের সন্দেহজনক ভোটার হিসেবে গণ্য করার নেপথ্য রহস্য কি? কেনই বা হয়রান করা হচ্ছে?

যাদের পূর্বপুরুষরা এই দেশের আলো বাতাসে বড় হয়েছেন, এই দেশের মাটিকে জন্মভিটে হিসেবে আমৃত্যু জেনে আসছেন। তাদের উত্তরাধিকারীদের এনআরসির নামে সরকারের পক্ষ থেকে এত হেনস্তা কেন? এমন প্রশ্ন উঠা কি স্বাভাবিক নয়।

সূত্রমতে, কাটিগড়ার গোবিন্দপুর তৃতীয় খণ্ডের আদি বাসিন্দা প্রয়াত চরিত্রমোহন দাসের মোট আট পুত্রসন্তানের মধ্যে অতি সরল স্বাভাবিক কাজকর্মে অক্ষম দুই সন্তানের বাবা শ্যামল দাসের হাতে দিনকয়েক আগে ডি‘ভোটার সংক্রান্ত নোটিশ ধরিরে দেয় সীমান্তপুলিশ ।

উল্লেখ্য, শ্যামল দাসের বর্তমান বাসস্থান কাতিরাইল জিপি এলাকার শিবচর গ্রামে। প্রদত্ত নোটিশে বলা হয়েছে এই পরিবারকে আগামী ২৩ অক্টোবর শিলচরের চার নং ট্রাইবুনেল কোর্টে হাজির হতে হবে । ১৯৫৪ সালের জমির দলিল সহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় নথিপত্র মজুত থাকা সত্ত্বেও আচমকা কোর্টের ডাকে পরিবারটি হতভম্ব ।

নিতান্তই গরিব শ্যামল দাস পরিবারের পেঠের ভাত জোগাতে যেখানে হিমশিম খেতে হচ্ছে সেখানে শারিরীকভাবে অক্ষম শ্যামল দাসের পরিবারের কাঁধে সন্দেহজনক ভোটারের ফরমান ।

স্বাভাবিকভাবেই মানষিকভাবে ভেঙে পড়েছে পরিবারটি। জানা গেছে, শিলচরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চৌকিদারির কাজ করে মাসে সাকূল্যে চার হাজার টাকা জুটে। তা থেকে দুহাজার দিয়ে দিতে হয় ঘর ভাড়া বাবদ। শ্যামল দাসের স্ত্রী গৃহপরিচারিকার কাজ করে কোনওমতে পেটের ভাত জোগাড় হয়। ছেলেমেয়েদের স্কুলের পড়াশোনা ইত্যাদি সবই এই সামান্য কটা উপার্জনে চলে। এই অবস্থায় ডি‘ভোটার যন্ত্রণা ।

আইনি প্রক্রিয়ায় আবেগ মূল্যহীন যদিও প্রয়োজনীয় নথিপত্র থাকা স্বত্বেও অযথা হয়রানি। তা মেনে নেওয়া যায় না বলে সাফ বক্তব্য সচেতন মহলের। একইভাবে রাজাটিলা জিপি এলাকার করইকান্দি দ্বিতীয় খণ্ডের বাসিন্দা প্রয়াত হাফিজ আব্দুল মতিন মজুমদারের তিন পুত্র ও তিন কন্যা সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় পুত্র আব্দুল মুনিম মজুমদারের নামে ডি‘ভোটার নোটিশ।

তাকে আগামী চার নভেম্বর ২০১৯ তারিখে কাছাড়ের ট্রাইবুনালের কোর্ট নং চার এ হাজিরা দিতে বলা হয়েছে।

১৯৫৮ সালে বাবা আব্দুল মতিন মজুমদারের নামের ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। রয়েছে বহু পুরাতন জমির দলিল। তার অন্তত পাঁচপুরুষ এই গ্রামের বাসিন্দা বলে জানান মতিন। বাবার নামের লিগ্যাসি সহ অন্যান্য পর্যাপ্ত নথিপত্র জমা করেই এনআরসির তে নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। পূর্বপুরুষের সবাই ভারতীয় নাগরিক। তা ছাড়াও তিন ভাই, তিন বোনের সকলেরই নাম এনআরসি চুড়ান্ত তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে। এমনকি আব্দুল মুনিমের নাম সহ তার পরিবারের মোট সাত সদস্যের নামও এনআরসি চুড়ান্ত তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে। এরপরও আব্দুল মুনিমের নামে সন্দেহের তকমা। কি আশ্চর্য !

দিনমজুর আব্দুল মুনিমের পরিবার চালনার এক মাত্র উপায় কৃষি। সাত সদস্যের পারিবারিক দায়দায়িত্বে ফাঁপরে উঠা মতিন এখন ডি‘সন্ত্রাসে সন্ত্রস্ত । এখানেই শেষ নয়, শিবনারাইনপুর গ্রামের বাসিন্দা বাবুলচন্দ্র দাসের স্ত্রী স্বপ্না রানী দাসের নামেও গত সোমবার পৌঁছে ডি ভোটারের তকমা সাঁটা নোটিশ। যেতে হবে ট্রাইবুনাল কোর্টে। এক্ষেত্রেও স্বামী, সন্তান সন্ততিদের নাম এনআরসির চুড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

তাছাড়া ভোটার তালিকায় স্বপ্নারানী দাসের নামের আগে ‘ডি’-র উল্লেখ নেই। অথচ নেহাৎ গরিব এই পরিবারের গৃহকর্ত্রীর নামের সংগে ‘ডি’ সেঁটে দিয়ে অদ্ভুত বিড়াম্বনার মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ । এমন বহু পরিবার রয়েছে যাদের নামের পেছনে কখনো ‘ডি’ভোটারের তকমা লাগেনি, তাদের নামে ‘ডি’ ভোটারের নোটিশ ধরিয়ে দিচ্ছো সীমান্ত পুলিশ। প্রতিটি নির্বাচনের সময় যথাযথভাবে ভোট প্রদান করে আসার পরও আজ ‘ডি’ ভোটারের তকমা সেঁটে দিয়ে আতঙ্কগ্রস্থ করে তোলা হচ্ছে।

এদিকে ট্রাইবুনালের নোটিশ পেয়ে রীতিমত আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ। ৪৫ বছর বয়সী কালাইন ছলিগ্রামের বাসিন্দা প্রয়াত নগেন্দ্র দাসের পুত্র সামেন্দ্র দাসের বাড়িতেও ট্রাইবুনেলের নোটিশ। রাজ্য সরকারের এহেন তুঘলকি কাণ্ডে এটাই প্রমাণিত হচ্ছে যাদের পিতা, পিতামহ সকল পূর্বপুরুষ ভারতীয় তাদের নামে ‘ডি’ভোটার এর তকমা লাগিয়েছে আসাম সরকার। যার ভুর ভুরি প্রমান রয়েছে গোটা রাজ্যে।

যারা দীর্ঘদিন সরকারের আওতাধীন জীবনের বেশিরভাগ সময় সরকারি চাকরি করে কাটিয়েছেন তাদের নামেও ‘ডি’ ভোটার এর তকমা সেঁটে দেওয়া হয়েছে।

এমন বহু প্রমাণ ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছিল। এবার ফের নতুন করে ‘ডি’ভোটারের নোটিশ সমস্ত কাটিগড়ায় আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।

এনআরসির গণহয়রানি শেষে ‘ডি’ সন্ত্রাসে বিধ্বস্ত মফঃস্বলীয় জনগণ এবার কোন খাতে যাবেন।

তা নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে বৈ কমছে না। এদিকে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারকে দৃষ্টি আরোপ করার গণদাবি উঠছে সর্বত্র ।

অমলেন্দু মালাকার

Recent Posts

বাংলাদেশে হিটস্ট্রোকে উপজেলা মহিলা ভাইসচেয়ারম্যান প্রার্থীসহ  ৪ মৃত্যু, স্থগিত নির্বাচন

ঢাকা: বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে চলেছে। ইতিমধ্যে অতি গরমের ফলে হিটস্ট্রোকে ৩৭ জন মারা গিয়েছেন।…

14 hours ago

বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহে রেললাইন বেঁকে ট্রেন চলাচল বিঘ্ন

ঢাকা: বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহে রেললাইন বেঁকে ট্রেন চলাচল বিঘ্ন ঘটছে। যাকে রেলের ভাষায় বলা হয়…

1 day ago

সাপ্তাহিক রাশিফল

মেষ রাশির জাতক জাতিকাদের জন্য সপ্তাহটি ভালোই হতে চলেছে। অর্থ উপার্জন হবে। সমাজে সম্মান বাড়বে।…

2 days ago

বাংলাদেশে তাপদাহে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুনঈশ্বরদীতে রেললাইনের পাত বেঁকে গেছে

ঢাকা: বাংলাদেশে চলতি বছর সীমাহীন তাপদাহে মানুষের জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশে সরবোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে…

2 days ago

আপনার আজকের দিনটি

সিংহ: আজকের দিনটি আপনার জন্য নতুন কিছু শেখার দিন হবে। ভাগ্যের দিক থেকে দিনটি ভালোই।…

3 days ago

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত

ঢাকা: বাংলাদেশে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে আবুল কালাম (২৫)…

3 days ago