ভোট আসে ভোট যায়। সঙ্গে নিয়ে আসে প্রতিশ্রুতির বন্যা। ভোট ব্যাংকের রাজনীতিতে শুধু নেতা-মন্ত্রীদেরই ঝুলি ভরে। কিন্তু সাধারণ মানুষ কিংবা দেশের জনগণের ঝুলি শূন্য যে শূন্যই থেকে যায়।
সরকারের অবহেলার শিকারে আরেক দৃষ্টান্ত হচ্ছে অসমের নগাঁও এবং কাছাড় কাগজকল। এই কাগজ কল দুটি ছিল অসমের অন্যতম ট্রেড মার্ক। কিন্তু আজ ধ্বংসের পথে।
২৯ মাস ধরে বেতন নেই এই কাগজ কলগুলিতে। আন্দোলন- স্মারকপত্র, অনশন, নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ অনেক কিছুই করেছেন কর্মচারীরা। শুধু কর্মচারী নন, তাদের স্ত্রী এমনকি সন্তানরাও আন্দোলনে নেমেছিলেন। তাঁরা আশায়-আশায় ছিলেন যে এইবার হয়তো বেতন পাবেন, এইবার হয়তো দিন ফিরবে তাদের। কিন্তু যেই-সেই।
স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সংসার সামলাতে হিমসিম খেয়ে ফের আরেক কর্মচারী প্রাণ দিলেন। সোমবার, নগাঁও কাগজ কলের কলের ইউটিলিটি ম্যানাজার বিশ্বজিৎ মজুমদারের মৃতদেহ হোস্টেল-রুমে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয়। পশ্চিমবঙ্গের কালনার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ বাবু মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিগ্রি নিয়ে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁর আত্মহত্যার ঘটনায় কাগজকল কর্মীদের মধ্যে তীব্র উদ্বেগ- উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে।
গত দুদিন ধরে, বিশ্বজিৎ মজুমদারের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে সোমবার তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। অর্থের অভাবে অবর্ণনীয় নির্যাতন সহ্য করতে না পারায় শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর পথ বেঁছে নেন তিনি।
বিশ্বজিৎ বাবুর মৃত্যুর পর এ পর্যন্ত এই কাগজ কল দুটির কর্মচারীর মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৫৫।
এদের মধ্যে বিশ্বজিৎ মজুমদার সহ আত্মহত্যা করেছেন মোট ৩ জন।
উল্লেখ্য, দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল বছর তিনেক আগে দুটি কাগজ কল পুনরুজ্জীবিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত এই প্রতিশ্রুতি কার্যকর হয় নি। একের পর এক কলের কর্মচারী অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন, আত্মহত্যার পথ বেঁছে নিচ্ছেন। নেতা-মন্ত্রীদের দরজায় কড়াও নেড়েছেন অসহায় কর্মচারীর পরিবার। কিন্তু সরকারের টনক কিছুতেই নড়ছে না।