এনআরসি’র তথ্য সরকারি ওয়েবসাইট থেকে আশ্চর্যজনকভাবে অন্তর্ধান! মৃত্যুর দায়ভার কে নেবে?

অসমের জনগণের সুস্থ মস্তিষ্কের আবহ কেড়ে নেওয়া সেই এনআরসি’র মূল্যবান তথ্যই অন্তর্ধান সরকারি ওয়েবসাইট থেকে!

NRC-র জন্যে সরকারি ওয়েবসাইটে মোট দুটো লিংক দেওয়া হয়েছিল। সেগুলোঃ

RESULT FOR ALL NRC APPLICANTS AS PER DRAFT NRC & SUPPLEMENTARY LIST OF INCLUSION AND EXCLUSION (FINAL NRC) LINK 1

এবং

RESULT FOR ALL NRC APPLICANTS AS PER DRAFT NRC & SUPPLEMENTARY LIST OF INCLUSION AND EXCLUSION (FINAL NRC) LINK 2

এখন উক্ত ওয়েবসাইটে গিয়ে ক্লিক করলেও আশ্চর্যজনকভাবে খুলছে না বা অন্য কোনো লিংকেও  Redirect করছে না।

এই কথা অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটিই সত্য যে চাঞ্চল্যকর ঘটনাটিকে কৰ্তৃপক্ষ ফাঁকিবাজি মন্তব্য করে অত্যন্ত সহজভাবে নিয়েছেন।

কৰ্তৃপক্ষের মতে, ডাটা রাখা server-এর  Cloud storage period শেষ হয়ে গেছে বলেই নাকি ওয়েবসাইট খুলছে না। জাতীয় নাগরিকপঞ্জি কৰ্তৃপক্ষের এই মন্তব্য প্রকাশ পেয়েছে টাইমস অব ইণ্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, যান্ত্রিক ত্রুটির ফলেই এই তালিকা এই মুহূর্তে দেখা যাচ্ছে না। এই সমস্যা সমাধানের কাজ করা হচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তা ঠিক করা হবে।

উল্লেখ্য যে, অসমের প্রায় জাতীয় সংগঠনের দাবী এবং উচ্চতম আদালতের তত্ত্বাবধানে এটি সুদীর্ঘ ৬ বছরের জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিগত বছরের ৩১শে আগস্ট তারিখে অসমে নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ পেয়েছিল।

চূড়ান্ত এনআরসি’তে ৩,১১,২১,০০৪ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এর বিপরীতে মোট ১৯,০৬,৬৭৭ জনের নাম বাদ পড়েছিল তালিকা থেকে।

দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে এই তথ্যগুলো গত বছর অক্টোবর মাস থেকে অনলাইনে উপলব্ধ ছিল।

সরকারের কাছে সমস্ত প্রক্রিয়া সহজ মনে হলেও সাধারণ মানুষ, প্রতিদিন রুজি-রোজগার করে খাওয়া জনগণের কাছে এই প্রক্রিয়া এতোটাই সোজা ছিল না।

অসমের জনগণ বিভিন্নরকম শাস্তির সম্মুখীন হয়েছে এনআরসি সন্দর্ভে এবং বহু মানুষ ৭১এর পূর্বে ভারতে এসেও কোনপ্রকার নথি খুঁজে না পেয়ে মানসিক অবসাদে ভুগে আত্মহত্যা করেছে। কেউ নথি দিয়েও তালিকায় নাম ওঠানো থেকে ব্যর্থ হয়েছে!

অসম ছাড়াও উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের সোলাদানা গ্রামের কামাল হোসেন ১৯৭১ সালের পূর্বে জমির দলিল পাচ্ছিলেন না। ফলে আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। রাষ্ট্রহীন হবার ভয় কুরে কুরে খাচ্ছিল তাঁকে। সর্বশেষ, ঘর থেকে কামালের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। দেশ নয়, চিরজীবনের জন্যে জগত ছেড়ে চলে গেলেন তিনি।

এমনই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে দক্ষিণ ২৪ পরগণার ফলতার মামুদপুরে। গেরুয়া শিবিরের সমস্ত মেধাবী নেতা-নেত্রীদের মুখে এনআরসির খবর শোনার পর থেকেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন কালাচাঁদ মিদ্যা। সপরিবারে রাষ্ট্রহীন হওয়ার ভয়ে আত্মহত্যা করেন!

এই সমস্ত মৃত্যুর দায়ভার কে গ্রহণ করবে? প্রশ্ন অসমবাসীর।

সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ার সময় আইএএস প্রতীক হাজেলা এনআরসির রাজ্যিক সমন্বয়ক হিসেবে ছিলেন এবং তাঁর দ্বারাই সমস্ত কাজের তদারকি হয়েছিল।

কিন্তু চূড়ান্ত তালিকাটি প্রকাশের পর প্রতীক হাজেলাকে সুপ্রিম কোর্ট বদল করেন এবং ৯ নভেম্বর এনআরসি’র রাজ্যিক সমন্বয়কের দায়িত্ব রাজ্য সরকার হিতেশ দেবশর্মাকে অর্পণ করা হয়। তিনি ২৪ ডিসেম্বর থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

গতকাল ১১ ফেব্রুয়ারি বিরোধি দলপতি দেবব্রত শর্মা এনআরসি তথ্য অনলাইনে দেখা যাচ্ছে না রহস্যজনকভাবে এই তথ্য জানিয়ে ভারতের মহাপঞ্জীয়ক এবং রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে চিঠি লিখে এই ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। তাঁর অভিযোগ, “হঠাৎ করে সব তথ্য এভাবে গায়েব হয়ে যাওয়া একটা রহস্য। এখনও পর্যন্ত এই তালিকা নিয়ে অনেক মানুষের অনেক অভিযোগ রয়েছে। এই তালিকা আধিকারিকদের ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তাই কি এভাবে তথ্য গায়েব হল?”