শিলচর: আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে আসামের করিমগঞ্জ আসনে কংগ্রেসের প্রার্থী হাফিজ রশিদ চৌধুরীকে পূর্ণ সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট। এবং একই সঙ্গে শিলচর আসনের সব প্রার্থীদের সাথে বরাকের সমস্ত জ্বলন্ত সমস্যা নিয়ে আলোচনা ও অঙ্গীকারের ভিত্তিতে যোগ্য প্রার্থীকে সমর্থন করা হবে জানালেন বিডিএফ কর্মকর্তারা।
আজ বিডিএফ কার্যালয়ে এক সাধারণ সভা শেষে এই ব্যাপারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় ও মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য বলেন যে বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট মূলতঃ বরাকের বিভিন্ন জ্বলন্ত সমস্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং এই ব্যাপারে প্রথম থেকেই সরব রয়েছে।তাই যে প্রার্থী এইসব সমস্যা সমাধানে প্রকৃতভাবে আন্তরিক থাকবেন তাকেই সমর্থন জানাতে তারা প্রস্তুত।
এ ব্যাপারে দল ইত্যাদি তাদের কাছে গৌণ। তাঁরা বলেন হাফিজ রশিদ চৌধুরী নির্বাচিত হলে যে এইসব সমস্যা নিয়ে লোকসভায় সরব থাকবেন তা নিশ্চিত। তাঁর অতীত কর্মকাণ্ড থেকে এটা স্পষ্ট।
জাতি ধর্ম নির্বিশেষে রাজ্যের সংখ্যালঘুদের সমস্যা সমাধানে তিনি দীর্ঘদিন ধরে নিরলস চেষ্টা করে আসছেন। ডি ভোটার নোটিশ প্রাপ্ত বা ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দী প্রান্তিক সংখ্যালঘুদের ন্যায় পাইয়ে দিতে তিনি বহু লোককে আইনি সহায়তা করেছেন।
শিক্ষিত,বিজ্ঞ এই রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব এই উপত্যাকার সমস্যা নিয়েও সম্পুর্ন ওয়াকিবহাল। তাই তাঁকে নির্বাচিত করলে বহুদিন বাদে এই উপত্যকার জনগন সঠিক প্রতিনিধিত্ব দেখতে পাবেন। তাঁরা বলেন সেজন্যই তাঁরা হাফিজ সাহেবকে বিডিএফ এর পক্ষ থেকে পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছেন। এবং শুধু তাই নয় এই প্রার্থীর সমর্থনে তাঁরা করিমগঞ্জ কেন্দ্রে প্রচার কার্যও চালাবেন বলে এদিন জানিয়েছেন।
বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় ও মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য এদিন আরো বলেন যে বর্তমান সরকার শুধু কিছু মামুলি প্রকল্প যথা কিছু ইন্দিরা আবাস,অরুণোদয় প্রকল্পে ১২০০ টাকা অনুদান, বিনামূল্যে চাল এইসবের মাধ্যমে গ্রামীণ প্রান্তিক নাগরিকদের হিতাধিকারী বানিয়ে তার বিনিময়ে ভোট হাসিল করতে চাইছে।
তাঁরা বলেন এতে এই উপত্যকার কোনদিনই প্রকৃত উন্নয়ন হবেনা। দরকার এই উপত্যকার নাগরিকদের স্বাবলম্বী করা ও যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক পরিকাঠামো তৈরি করা।
তাঁরা বলেন দীর্ঘ কয়েক দশক যাবৎ প্রকৃতার্থে এই উপত্যাকার উন্নয়নে প্রায় কোন কাজই হয়নি। এবং এখানকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা তার জন্য দায়ী।
প্রদীপ দত্তরায় বলেন যে উপত্যকা জোৎস্না চন্দ,মইনুল হক চৌধুরী,মহীতোষ পুরকায়স্থের মতো দক্ষ জনপ্রতিনিধি পেয়েছে সেই তুলনায় বিগত কয়েক দশকে এই উপত্যকার নির্বাচিত সাংসদদের ভূমিকা নিতান্তই দূর্ভাগ্য জনক।
তাঁরা বলেন যে এবারের নির্বাচনের ইস্যু হিসেবে বরাকের দশটি গুরুত্বপূর্ণ দাবির একটি তালিকা তাঁরা প্রস্তুত করেছেন। এরমধ্যে বরাকের শিল্পায়নের সম্ভাবনা ও তারজন্য সম্ভাব্য উদ্যোগ, আধার কার্ড বাতিল হয়ে যাওয়া নাগরিকদের সমস্যা সমাধান, বরাকে আন্তর্জাতিক বানিজ্যের সুবিধার্থে প্রস্তাবিত উদ্যোগের বাস্তবায়ন,শিলচর এবং করিমগঞ্জ শহরের নিকাশি ব্যাবস্থার সংস্কার তথা উপত্যকার বন্যা সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান,মহাসড়কের বাকি কাজ ও চন্দ্রনাথপুর লঙ্কা রেলপথের বাস্তবায়ন,বরাকের পেট্রোলিয়াম গ্যাসের বানিজ্যিক সম্ভাবনা ও ধুঁকতে থাকা চা শিল্পের উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ,বরাকে সিন্ডিকেট রাজের অবসানে নির্দিষ্ট পদক্ষেপ এবং এখানকার সরকারি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদ স্থানীয় প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষণের ইস্যু অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রদীপ দত্তরায় ও জয়দীপ ভট্টাচার্য এদিন বলেন যে তাঁরা এবারের নির্বাচনে যারাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সবাইকে এই তালিকা অগ্রিম পাঠাবেন এবং নির্বাচিত হলে এইসব সমস্যা সমাধানে তাঁরা কতটা আন্তরিক থাকবেন তা বোঝার চেষ্টা করা হবে।
এবং তার ভিত্তিতেই তাঁরা শিলচরে কাউকে সমর্থন করা যায় কিনা সেই সিদ্ধান্ত নেবেন। তাঁরা সাংবাদিক বন্ধু এবং জনগনকেও প্রার্থীদের এইসব ইস্যু নিয়ে মতামত জানার আবেদন জানিয়েছেন।
এদিন বিডিএফ এর পক্ষ থেকে উক্ত বিস্তারিত তালিকাও সাংবাদিকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
এদিনের সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হৃষীকেশ দে,কল্পার্ণব গুপ্ত,সজল দেবরায়, মিনহাজ হুসেইন লস্কর,হারাধন দত্ত, নবারুণ দে চৌধুরী প্রমুখ।
বিডিএফ যুবফ্রন্ট আহ্বায়ক দেবায়ন দেব এক প্রেস বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন।