ঢাকা: ভারত সীমান্ত সংলগ্ন পিলার থেকে পাকিস্তানের নাম উঠতে দেরি হওয়া দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী Sheikh Hasina। মঙ্গলবার বর্ডার গার্ড Bangladesh (বিজিবি) দিবস- ২০২২ উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরের অভ্যন্তরে বীর উত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (bgb) দিবস-২০২২’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
Sheikh Hasina বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ১৪ হাজার ৫টি বিভিন্ন পিলারে এক সময় পাকিস্তানের সংক্ষিপ্ত পাক লেখা ছিল। পরে বিজিবি সেটা পরিবর্তন করে Bangladesh ও বিডি নাম লিখেছে। কিন্তু এটা করতে দীর্ঘদিন সময় লাগা অত্যন্ত দুঃখজনক।
প্রধানমন্ত্রী Sheikh Hasina বলেন, ‘জাতির পিতা ভারতের সঙ্গে চুক্তি করে আমাদের সংবিধান সংশোধন করে সীমানা ঠিক করে দিয়ে গিয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো তখনো ভারতের সঙ্গে আমাদের ছিটমহল বিনিময় হয়নি। ৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা কখনো আমাদের এই সীমান্ত রেখা সুনির্দিষ্ট করার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
৯৬ সালে আওয়ামি লিগ ক্ষমতা গ্রহণের পর আমরা এই উদ্যোগ নিই। দ্বিতীয়বার আমরা ক্ষমতায় আসলে আমাদের উদ্যোগে ভারতের পার্লামেন্টে সর্বসম্মতিক্রমে আইন পাস করে সীমান্তরেখা সুনিদির্ষ্ট করা হয়েছে। এটা আমাদের বিরাট অর্জন।’
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে দখলদার পাকিস্তানের সঙ্গে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর ৯০ হাজারেরও বেশি সশস্ত্র পাকিস্তানি সেনা ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার জগজিৎ অরোরার নেতৃত্বে মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমপনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে।
এদিকে ২০০৯ সালে ঢাকার পিলখানায় আধাসামরিক বাহিনীতে হত্যাযজ্ঞকে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, জাতি এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না। শেখ হাসিনা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কর্মীদের শৃঙ্খলা ও চেইন অব কমান্ড মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকার গঠনের মাত্র ৫২ দিনের মাথায় ২০০৯ সালে একটি দুর্ভাগ্যজনক কাণ্ড ঘটে পিলখানায়। সেই ঘটনায় যারা শহীদ হয়েছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান শেখ হাসিনা।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, সেদিন অধশত পদস্থ সেনা আধিকারিক শহীদ হয়েছিলেন কিছু বিডিআর সেনা সদস্যের হাতে। পরে বিডিআর নাম পাল্টে করা হয় বিজিবি। বিজিবির উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, ‘সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি চোরাচালান রোধ; মাদক, নারী ও শিশু পাচার আন্তর্জাতিক অপরাধ দমনসহ সীমান্তবর্তী জনগণের জানমাল রক্ষা আপনাদের দায়িত্ব।
আপনারা এসব দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পালন করে যাচ্ছেন। আমরা অত্যন্ত উৎসবমুখরভাবে ছিটমহল বিনিময় করেছি যা বিশ্বের অন্য কোনো দেশ করতে পারেনি। এক্ষেত্রে আমাদের বর্ডার গার্ড অত্যন্ত দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে।’সরকার প্রধান আরও বলেন, ‘একটা কথা মাথায় রাখবেন।
কখনো শৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটাবেন না। অর্পিত দায়িত্ব মেনে চলবেন, চেইন অব কমান্ড মেনে চলবেন।’শৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি কর্তব্যনিষ্ঠ হওয়ার জন্য তিনি বিজিবি সদস্যদের উদ্দেশে ১৯৭৪ সালের ৫ ডিসেম্বর তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের সদস্যদের উদ্দেশে দেওয়া জাতির পিতার ভাষণের চুম্বকাংশ উদ্ধৃত করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘ঈমানের সাথে কাজ কর; সৎ পথে থেকো, দেশকে ভালোবাস।’একটি পেশাগত ও সুশৃঙ্খল বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমি বিশ্বাস করি, যেকোনো পেশাদার বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুশৃঙ্খল ও দক্ষ বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই।
বিজিবি সদস্যদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য সাতকানিয়ার ‘বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজ’ এর পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গায় আরও একটি প্রশিক্ষণ সেন্টার স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বিএসএফকে মিষ্টি উপহারঃ এদিকে বিজিবি দিবস উপলক্ষে দিনাজপুরের হিলি সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে (বিএসএফ) মিষ্টি উপহার দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
মঙ্গলবার সকাল ১১টায় হিলি সীমান্তের ২৮৫ নম্বর মেইন পিলারের ১১ নম্বর সাব-পিলার সংলগ্ন চেকপোস্ট গেটের শূন্যরেখায় বিএসএফকে মিষ্টি উপহার দেয় বিজিবি। ভারতের হিলি বিএসএফের চেকপোস্ট কমান্ডার সুশীল কুমারের হাতে বিজিবির হিলি আইসিপি বিওপি ক্যাম্প কমান্ডার সুবেদার মাহবুব রহমান ৬ প্যাকেট মিষ্টি উপহার দেন।
এ সময় সেখানে উভয় দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর নারী-পুরুষ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বিজিবি হিলি আইসিপি ক্যাম্পের কমান্ডার সুবেদার মাহবুব রহমান বলেন, আজ বিজিবি দিবস উপলক্ষে বিজিবির পক্ষ থেকে বিএসএফকে মিষ্টি দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হলো।