ঢাকা: Bangladeshএ মূল্যস্ফীতি গত কয়েক বছরের মধ্যে বর্তমানে সর্বোচ্চ। আয় কমেছে মানুষের। বেড়েছে ব্যয়। অনেক নিত্যপণ্যের দাম নিম্নবিত্তের নাগালের বাইরে।
বিভিন্ন প্রসাধনীর দামও আকাশচুম্বী। এর মধ্যে দুর্ভিক্ষ ও বৈশ্বিক মন্দার শঙ্কা খোদ প্রধানমন্ত্রী Sheikh Hasina র মুখে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থাসহ বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোর সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে খাদ্য সঙ্কটে পড়া দেশের তালিকায়ও রয়েছে Bangladesh, যা বাড়তি চাপ তৈরি করেছে সব শ্রেণির মানুষের।
এর মধ্যে দেশের মানুষের প্রধান খাদ্যপণ্য চালের দামও বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে। একদিকে চাল, চিনি ও তেল অন্যদিকে সবজির বাজারেও আগুন।
এছাড়া ক্রমেই নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে মাছ-মাংস। বেড়েই চলেছে সব দ্রব্যমূল্যের পাগড়া ঘোড়া। বাজারে গিয়ে হতাশ হচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিন্মআয়ের মানুষ।
বিগত কয়েক মাসে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (আইএফপিআরআই) এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্ল্যাসিফিকেশন (IPC) ছাড়া আরো কিছু খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা সংস্থা বলছে, ২০২৩ সালে দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তে পারে অনেক দেশ।
বৈশ্বিক এ মন্দার কবলে পড়লে বিশ্বের ৩৫ কোটি মানুষ খাদ্য সঙ্কটে পড়বে। এসব সংস্থার খাদ্য সঙ্কটের তালিকায় নাম আছে Bangladesh রও। সাধারণ মানুষ বলছে, গত কয়েক মাসে বাজারে কোনো সুখবর নেই।
মূলত Russia-ukraine যুদ্ধের শুরু থেকে বৈশ্বিক পণ্যবাজারে দামের উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে দেশের বাজারে। এর মধ্যে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবও পড়েছে।
এতে কয়েক দফা বাড়ে নিত্যপণ্যের দাম। দুর্ভিক্ষের খবরের পর আবারও দফায় দফায় পণ্যের দাম বাড়ছে, যা এখন অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। সেই খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ।
বাজারের তথ্যও বলছে এমন কথা। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব Bangladeshর (টিসিবি) তথ্য বলছে, বিগত এক বছরের ব্যবধানে বাজারে আটার দাম ৭৯ শতাংশ বেড়েছে।
মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ৮ শতাংশ। একইভাবে ময়দার দাম বছর ব্যবধানে ৬৪.৭৭ শতাংশ এবং মাসের ব্যবধানে ১৬ শতাংশ বেড়েছে। চালের দাম বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৬ শতাংশ। অর্থাৎ, প্রধান দুটি খাদ্যশস্যের দাম বাড়ায় দারুণ চাপে পড়েছে মানুষ।
Bangladeshর বাজারে দুটি পণ্যের দামই দাঁড়িয়েছে ইতিহাসে সর্বোচ্চ। আগে মানুষ চালের দাম বাড়লে বিকল্প হিসেবে আটা-ময়দা বেছে নিতো। এবছর সে সুযোগও নেই। আটার দামও অত্যন্ত চড়া। এমনকি চালের দামকে ছাড়িয়ে গেছে আটা-ময়দার দাম।
অন্যদিকে টিসিবির তথ্য আরো বলছে, বাজারে সয়াবিন তেলের দাম এখন গত বছরের তুলনায় সাড়ে ২১ শতাংশ বেশি। আর চিনির দাম বেড়েছে সাড়ে ৪৫ শতাংশ। চিনির ক্ষেত্রে গত একমাসেই দাম বেড়েছে ২১ দশমিক ৬২ শতাংশ।
গত বছর এক কেজি চিনির দাম ৮০ টাকার মধ্যে থাকলেও সেটি এখন ১১৫ টাকা। বাজারের তথ্য আরো বলছে, বিগত এক বছরে মসুর ডালের দাম ২৬ শতাংশ, অ্যাংকর ডালের দাম ৪৭ শতাংশ, রসুনের দাম ৫০ শতাংশ, শুকনা মরিচের দাম ১১৫ শতাংশ, আদার দাম ১৩০ শতাংশ, গুঁড়ো দুধের দাম ৩৭ শতাংশ, লবণের দাম ১৫ শতাংশ, ফার্মের ডিমের দাম ২৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
বাজার বিশে¬ষকরা আরো বলছেন, বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যসহ অনেক পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। একই সঙ্গে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, দেশের বাজারে চাহিদা ও জোগানের মধ্যে বড় ধরনের ভারসাম্যহীনতা, পরিবহন খরচ ও বিদেশি মুদ্রার বিনিময় হারের ঊর্ধ্বগতির প্রভাব রয়েছে বাজারে।
পাশাপাশি একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সরবরাহ ঘাটতির সুযোগ নিচ্ছেন। দুর্ভিক্ষের খবর পুঁজি করে তারা পণ্য মজুত ও অযাচিতভাবে দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে পণ্য সরবরাহ ঠিক রাখতে বিকল্প আমদানির উৎস খোঁজার চেষ্টা, খাদ্যে ভর্তুকি বাড়ানো ও দরিদ্র মানুষের জন্য সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলোর পরিসর বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন তারা।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক এম আসাদুজ্জামান বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন সঙ্কট থেকে শুরু করে ডলারের সঙ্কট হয়েছে সেটা সত্য।
তবে সেসব কারণ দেখিয়ে যে হারে পণ্যমূল্য বাড়ানো হয়েছে সেটা বেশি। তিনি বলেন, বাজারের এ অস্বাভাবিক পরিস্থিতি এখন হুট করেই তৈরি হয়নি। করোনা পরিস্থিতির পর থেকেই আস্তে আস্তে হচ্ছে, কিন্তু সেটা সরকার আমলে নেয়নি, যা এখন চরম আকার ধারণ করেছে। নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
সাবেক কৃষি সচিব ড. আনোয়ার ফারুক বলেন, আমদানিনির্ভর পণ্যগুলোর দাম নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। কিন্তু তেল, চিনি, ডাল ও আটা-ময়দার কোনো বিকল্প নেই। সেজন্য এমন গুরুত্বপূর্ণ যেসব পণ্য আমদানি হয়, সেগুলো যেন ব্যাহত না হয় সে ব্যবস্থা দরকার।
প্রয়োজনে সরবরাহ ঠিক রাখতে যেখানে ডলার সঙ্কট রয়েছে, তাদের সাধ্যমতো সাপোর্ট দিতে হবে। যেন তারা সুবিধামতো পণ্য আমদানি করতে পারে। তাহলে বাজারও স্থিতিশীল থাকবে।