‘মইনুল হক চৌধুরী’ বরাকবাসীর জন্য অতি পরিচিত এক নাম। বরাকে বসবাস করে এই নাম কেউ শোনেন নি, তা খুব কম লোকই আছেন। তাঁকে বরাকের ‘রূপকার’ও বলা হয়। তার কারণ, বরাক উপত্যকার সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে যথেষ্ট অবদান রয়েছে মইনুল হকের।
কিন্তু আজ সেই অবদানের কথা ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিলেও বরাকের মানুষের মন থেকে ব্রাত্য।
১৩ মে ছিল তাঁর ৯৬তম জন্মবার্ষিকী। জন্মবার্ষিকী পালন করতে শুধুমাত্র কাছাড় জেলা কংগ্রেসকেই দেখা গেল। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে মইনুল হক ছিলেন কংগ্রেস দলের নেতা। আর অন্যদের ক্ষেত্রে? শুধুই কী রাজনীতিবিদ হওয়ার পাশাপাশি কোনও একটি দলের প্রতিনিধিত্ব করার ফলেই তাঁকে কেউ স্মরণ করে নি? আর তাঁর অবদান? তা কি মনে করার মতো নয়?
কথায় বলে, মানুষের জন্য কিছু ভালো কাজ করলে তাকে আজীবন মনে রাখেন জনতা। তাহলে, মইনুল হকের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কেন? কেনই বা আজ তাঁর জন্মদিনও পালনে এগিয়ে আসতে দেখা গেল না বিভিন্ন সংগঠনের। ভবিষ্যৎ প্রজন্মরা আদৌ কি চিনেন মইনুল হককে। সেটি এখন বড় প্রশ্ন।
বরাকের কাছাড় জেলার উন্নয়নের পথপ্রদর্শক মইনুল হক চৌধুরীর অবদান এক নজরে-
কাছাড় জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে যথেষ্ট কাজ করে গেছেন তিনি। কৃষির ক্ষেত্রে তৈরি করেছেন বিভন্ন বাঁধ। এছাড়াও আকাশবাণী, শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ভেটেরিনারি স্কুল, কাছাড় কাগজ কল, আনিপুরে চিনি কল, আরইসি যা এখন এনআইটি হয়েছে এসব কিছু স্থাপন করতে মইনুল হকের অবদান অপরিসীম।
তিনি ছিলেন কাছাড় জেলার প্রথম ব্যক্তি যিনি বরাক দাম তৈরি করতে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এছাড়াও, সবুজ বিপ্লবের রাস্তা তিনিই দেখিয়ে গিয়েছিলেন।
মইনুল হক চৌধুরী ১৯২৩ সালের ১৩ মার্চ কাছাড় জেলার সোনাবাড়ি ঘাটে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা জন্মস্থানে নিলেও উচ্চ শিক্ষার জন্যে ১৯৪২ সালে প্রথমে তিনি গুয়াহাটির কটন কলেজ বর্তমান কটন বিশ্ববিদ্যালয় এরপর সিলেটের মুরারি চান্দ কলেজে পড়াশোনা করেন।
আবার ১৯৪৪ সালে স্নাতক পড়েছেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে। মাস্টার ডিগ্রী পরে ১৯৪৬ সালে এলএলবি করেছেন আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
ইয়থ ফ্রন্ট অব মুসলিম লিগের সাধারণ সম্পাদক থাকা কালীন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনেও যোগদান করেছিলেন তিনি। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও মৌলানা আবুল কালাম আজাদের নীতির অনুপ্রেরণায় এক সময়ে সক্রিয় ভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েন।
১৯৪৮ সালে শিলচরে বার সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। ১৯৫০ সালে তাঁর রাজনীতিতে আসা। ১৯৫২ সালে সোনাই বিধানসভা কেন্দ্রের কংগেস দলের বিধায়ক হিসেবে মনোনীত হন। ১৯৫৭ সালে কৃষি বিভাগের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও মনোনীত হন তিনি। এরপর, পরপর ৫ বার বিধায়ক নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে ধুবরী লোকসভা কেন্দ্র থেকে সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন এবং তখন শিল্পমন্ত্রালয়ে প্রদত্ত পান মইনুল হক।
১৯৭৬ সালে দিল্লিতে প্রয়াত হন তিনি।
কাছাড় জেলায় এত অবদান থাকার পরও হাতে গোনা কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া আর কোনও জায়গায় তাঁর নাম স্থান পায় নি।
সোনাবাড়ি ঘাটে তাঁর নামে রয়েছে, ‘মইনুল হক চৌধুরী হাই সেকেন্ডারি স্কুল’, ‘মইনুল হক চৌধুরী অডিটোরিয়াম’ এবং স্কুল সোনাই। আর তাঁর নামে সেখানে একটি ব্রিজ তৈরির কাজ চলছিল। কিন্তু আজ অবধি ব্রিজ তৈরির কাজ সম্পন্ন হয় নি।