পশ্চিমবঙ্গে করোনার শুরুতেই জনগণ সরকারের নীতি-নিয়ম অনুসারে লকডাউন মানছে না, পরিস্থিতি ভয়ংকর হচ্ছে চিন্তা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সেনা পাঠানোর কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়েছিলেন। সে প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন মমতা।
করোনা সংহারি রূপ ধারণ করেছে রাজ্যে। বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে লোকজন বাইরে বেরোচ্ছে। এর মাঝেই ভয়ংকর ক্ষতি করে দিয়ে গেছে সুপার সাইক্লোন আমফান। অবস্থা সামলাতে না পেরে প্রধানমন্ত্রীকে ডেকে পাঠিয়েছেন মমতা।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মুখ্যমন্ত্রী মমতার একডাকে বাংলার বিপর্যস্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্যে ছুটে গিয়েছেন। মোট ৮৩ দিন পর নয়া দিল্লি থেকে বেরোলেন তিনি।
তাৎক্ষণিকভাবে ১ হাজার কোটি টাকার আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করেছেন গোটা রাজ্যে আমফানের ক্ষয়ক্ষতি সামাল দেবার জন্যে! পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়ে মৃতের পরিবারের হাতে তুলে দেয়া হবে ২ লক্ষ টাকা এবং গুরুতর আহতদের ৫০ হাজার করে আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হবে।
নাঃ, আসলে যা ভাবা হচ্ছে তা নয়। ইতিমধ্যেই রাজ্যে রাজনৈতিক দলে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে “আগামী বছর বাংলায় বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়েই কি মোদীর এই উৎসাহ? ভোট জিততেই কি তাঁর রাতারাতি এক হাজার কোটি টাকার ঘোষণা?
আমরা চাই বাংলা আবার তার প্রাণ ফিরে পাক; আবার হাসুক বাংলা। যে কোন পরিস্থিতিতে নিয়মমাফিক পশ্চিমবঙ্গের পাশে দাঁড়াবে ভারত সরকার। প্রধানমন্ত্রী মোদি বসিরহাটে বলেন।
শুধু কী এই প্রবল ঘূর্ণিঝড় আমফানে কেন্দ্র রাজ্যের পাশে দাঁড়িয়েছে? এর আগে গত বছরও ফণী ঘূর্ণিঝড়ের সময় প্রধানমন্ত্রী রাজ্যের জন্য সাহায্যের হাত বাড়াতে চেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নিজে ২০১৯-এর মে মাসে ফণী-র সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দু’বার ফোন করেছিলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীকে ফোনে পাওয়া যায়নি। তিনি পরে ‘কল ব্যাক’-ও করেননি।
২২মে’ নরেন্দ্র মোদি ওড়িশায় গিয়েছেন আমফান পরবর্তী পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্যে। বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতাদের যুক্তি, প্রধানমন্ত্রী শুধু আজ পশ্চিমবঙ্গে যাননি। আমপান পরবর্তী পরিস্থিতি দেখতে ওড়িশাতেও গিয়েছেন। সেখানে কোনও ভোট নেই।
বলা বাহুল্য, পশ্চিমবঙ্গের প্রায় একাংশ স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্যে সু-ব্যবস্থা নেই।
মেদিনীপুরে করোনা যোদ্ধা তথা হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের সামাজিকভাবে বয়কটের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। তাঁদেরকে খাবারের জল পর্যন্ত সংগ্রহ করতে দেওয়া হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, প্রতিনিয়ত তাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি ভাইরাল করে বিরূপ মন্তব্যও করা হচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে এসব ঘটনা ঘটে চলেছে মেদিনীপুর শহরের বেসরকারি নির্ণয় হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে। শহরবাসী একাংশ মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্মীদের দ্বারাই করোনা ছড়াচ্ছে!
এমন মর্মান্তিক ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এভাবে চলতে থাকলে তাঁরা শহর থেকে চিকিৎসা পরিষেবা চিরতরে বন্ধ করে দিয়ে হাত গুটিয়ে নেওয়ার কথাও ভাবতে পারেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
শুধু তাই নয়, যে মণিপুরকে রবীন্দ্রনাথ সম্মান দিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন ভাষা সংস্কৃতির পীঠস্থানে, আজ সেখান থেকেই অপমানিত হয়ে ফিরে গিয়েছেন ৫ শতাধিক নার্স।
কলকাতা ছেড়ে মণিপুরে পৌঁছে এক নার্স জানিয়েছেন, তাঁদের ফেলে দেওয়া PPE ব্যবহার করতে বাধ্য করছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, ‘আমাদের ১২ ঘণ্টা করে ডিউটি করতে হচ্ছিল। এর মধ্যে আমাদের শৌচাগার ব্যবহার করতে হয়, খেতে হয়। কিন্তু PPE পরে এগুলো করা সম্ভব নয়। আর একবার PPE খুললে তা ফেলে দিতে হয়। PPE দ্বিতীয় বার ব্যবহারের অনুমতি নেই। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের পুরনো PPE ফের ব্যবহার করতে বাধ্য করছিল। যার ফলে আমাদের Covid-19 সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ছিল।” এছাড়াও তাঁদের মাইনে দেয়া হচ্ছিল না ঠিকমতো, এমনও অভিযোগ উঠেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বিরুদ্ধে!