বর্তমান সময়ে কোভিড-১৯, করোনাভাইরাস বিশ্বকে গ্রাস করে ফেলছে। এ পর্যন্ত কোন ভ্যাকসিন আবিষ্কার করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
আগামি ২২ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশবাসীর উদ্দেশে আহ্বান জানিয়েছেন ‘জনতা কারফিউ’ পালন করার জন্যে।
করোনা যদিও বিশ্বত্রাসের অপর নামে পরিণত হয়েছে, তবুও প্রধানমন্ত্রী মোদি বারংবার জানিয়ে দিয়েছেন, আতংকিত না হয়ে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
কারণ এ মুহূর্তে জনগণের কাছে এই সংক্রমণ ঠেকানোর জন্যে সাবধানতা ছাড়া অন্য কোন পথ খোলা নেই।
তবে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত এলাকায় যারা বাস করেন, অথবা যারা ‘করোনা’কে মনে করছেন নিতান্তই সামান্য সর্দি-কাশি-জ্বর, তাঁদের কাছে কি স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে কোন প্রকার সজাগতা গিয়ে পৌঁছচ্ছে? তাঁরা কি জানতে পেরেছেন এখনো কোভিড-১৯ কি? কোয়ারেন্টাইন কি? আইসোলেশন কি?
দুর্ভাগ্যজনক কথাটি হলো, তাঁরা এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে সজাগ নন। কারণ একবিংশ শতাব্দীতে এখনো সকল ব্যক্তির হাতে স্মার্ট ফোন নেই। কারণ যাঁদের সারা দিন-রাত পরিশ্রম করে নিজের মুখে না হলেও পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দিতে হয়, ঋণের বোঝা চুকাতে হয়, তাঁদের করোনা নিয়ে ভাবনা-চিন্তার সময় নেই! এটাই স্বাভাবিক।
অন্যদিকে, প্রান্তীয় অথবা সজাগতাহীন অঞ্চলের মানুষের মধ্যে সজাগতার থেকেও বেশি কাজ করে সমালোচনা অথবা নিন্দা।
এই নিন্দা কিন্তু ‘করোনা’ প্রতিরোধে যথেষ্ট বাধার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এমনই দাবি করেছেন উজান অসমের তিনসুকিয়া শহরের বহু সচেতন নাগরিক। তাঁরা জানাচ্ছেন, “আমরা নিজেরা সাবান দিয়ে মিনিট পর পর হাত ধুয়ে থাকলেও আমাদের আশেপাশের লোকজনেরা মোটেও তা করছেন না। অথবা জ্বর-সর্দি হলেও তাঁরা সতর্ক না হয়ে যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন! এ বিষয়ে সাবধানবার্তা দিলে বরং আমাদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে। অজ্ঞানতাবশত তিনসুকিয়াবাসী বুঝতে পারছেন না করোনা’র ভয়াবহতা।”
এ অবস্থায় নাগরিকরা স্বাস্থ্য বিভাগের সাহায্য প্রার্থনা করছেন। তাঁরা চাইছেন, বিভাগীয় কর্মকর্তারা যেন প্রান্তীয় অঞ্চলগুলোতে গিয়ে মাইকে অ্যানাউন্স করেন করোনা সতর্কতা সম্বন্ধে। তাঁরা জানাচ্ছেন, মাইকের ব্যবস্থা করাই সবচাইতে ভালো হবে। কারণ তাতে প্রত্যেকে শুনতে পাবেন। এবং মূল বিষয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবেন। সামাজিকভাবে তাঁদেরও শত্রুর দৃষ্টিতে দেখবেন না কেউ।
এশিয়ার বিভিন্ন অংশ এবং এর বাইরেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এই ভাইরাস। সাধারণ সতর্কতা অবলম্বন করে আপনি এই ভাইরাসটির সংক্রমণ ও বিস্তারের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারেন।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের জন্যে আপনি যেমন নিজের যত্ন নেবেন, নিয়মিত হাত ধোয়া সাবান জল দিয়ে, তেমনি পারিপার্শ্বিক দিকেও নজর রাখতে হবে। কারণ করোনা কোন ব্যক্তিগত বিষয় নয়। নিজে সতর্কতা অবলম্বন করলেও অন্যের অসাবধানতার বলি আপনি হতেই পারেন। সুতরাং সামাজিক দূরত্ব এ মুহূর্তে কমিয়ে আনুন।
আগামি ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘জনতা কারফিউ’র আহ্বান জানিয়েছেন। তিনসুকিয়ার সতর্ক নাগরিকরা এতেও যথেষ্ট ধ্বন্দে রয়েছেন যে, যারা বিষয়টিকে পাত্তা দিতে চাইছেন না, তাঁরা কতটুকু সতর্কতা অবলম্বন করবেন?
এ মুহূর্তে ভারতে কোভিড-১৯-এ মৃত্যু সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ জনে। অসমে যদিও এখনো কোন আক্রান্তের সংবাদ নেই। কিন্তু নেই বলে হেলা করে শুয়ে-বসে থাকাটা নিজের বিপদ ডেকে আনা ছাড়া আর কিছুই নয়।
শ্বাসতন্ত্রের অন্যান্য অসুস্থতার মতো এই ভাইরাসের ক্ষেত্রেও সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা এবং জ্বরসহ হালকা লক্ষণ দেখা দিতে পারে । কিছু মানুষের জন্য এই ভাইরাসের সংক্রমণ মারাত্মক হতে পারে। এর ফলে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট এবং অর্গান বিপর্যয়ের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। তবে খুব কম ক্ষেত্রেই এই রোগ মারাত্মক হয়। এই ভাইরাস সংক্রমণের ফলে বয়স্ক ও আগে থেকে অসুস্থ ব্যক্তিদের মারাত্মকভাবে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশবাসীকে একটু সহায়তা করার জন্যে আবেদন জানাচ্ছেন। এই সহায়তা নিজের মঙ্গলের জন্যে। বয়স ১০ এর নিচে এবং বয়স ৬০/৬৫র ওপর বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের যেন একেবারেই ঘর থেকে বেরোতে না দেয়া হয়। সে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনের সাবধান বার্তা দিয়েছেন।
করোনা সতর্কতার জন্যে জনসমাগম এড়াতে গুয়াহাটির মিউজায়মসহ সারা অসমের উদ্যান, গ্রান্থাগার, স্কুল,কলেজ, বিউটি পার্লার, সেলুন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
অসমবাসীর, আপনারা নিজেকে নিজে সুস্থ রাখুন, সংক্রমণ মুক্ত রাখুন এবং একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে অপর ব্যক্তির প্রতিও নজর দিন। কারণ এ সময় হাত ধরে চলার, সতর্কতার!
এ পর্যন্ত কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস টেস্ট সেন্টার অসমে মোট ৪ খানা রয়েছে।
গুয়াহাটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (GMCH), ডিব্রুগড়ের আরএমআরসি (RMRC), যোরহাটের JMCH এবং শিলচর মেডিকেল কলেজ।
ভীত-সন্ত্রস্ত না হয়ে করোনার যে কোন উপসর্গ যেমন কাশ, সর্দি, জ্বর, নিউমোনিয়া প্রভৃতি দেখলে সঙ্গে সঙ্গে হেল্পলাইন নম্বরে কল করে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন।
অসম : 6913347770।
এছাড়া হাইকমিশন অব ইণ্ডিয়া থেকে আরো দুটো অতিরিক্ত নং চালু করা হয়েছে 00 880 255067371, 00 880 255067372।