১৯ মার্চ সারা রাত দেশের শীর্ষ আদালতে শুনানি শেষে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল শেষবারের মতো কোনভাবেই বাঁচবে না নির্ভয়া ধর্ষণের ৪ আসামি।
সারা দেশ এক হয়ে গিয়েছিল নির্ভয়ার জন্যে, এদিকে মেয়েটির ন্যায়ের জন্যে প্রাণ দিয়ে লড়ে যাচ্ছিলেন সীমা কুশওয়া। অনন্ত ধৈর্য, সত্য জয়ী হয়েছে।
এপি সিং-এর মতো আইনজীবীর প্রতি ঘৃণায় মন ভরে গেছে দেশ তথা বিশ্ববাসীর। তিনি বলেছিলেন, যদি তাঁর মেয়ে নির্ভয়ার মতো রাতে একা বাইরে থাকত, তাহলে তিনি তাঁকে পুড়িয়ে মারতেন।
এমন জঘন্যতার বিরুদ্ধে মাটি কামড়ে অবিচল নিষ্ঠায় লড়ে গেছেন সীমা।
ভারতীয় সময় শুক্রবার সকাল ৫.৩০ টায় চার আসামিকে দিল্লির তিহার জেলে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
দীর্ঘ ৮ বছর পর আজ শান্তির ঘুম আসবে নির্ভয়ার মায়ের। যিনি ২০১২ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলেন মেয়ের খুনির শাস্তি হবেই। বিশ্বাস রেখেছিলেন আইনের প্রতি।
১২০ মিনিটের কাউন্টডাউন শেষে ফাঁসুড়ে পবন ট্রিগার টেনে একসঙ্গে ৪ অভিযুক্তের ফাঁসি দেয় ফাঁসুড়ে পবন জল্লাদ। এরপর ৩০ মিনিট ফাসিকাষ্ঠে দেহ ঝুলে থাকার পর কুয়োয় ফেলা হয়।
ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম একসঙ্গে চারজনকে ফাঁসিতে ঝোলানো হল।
চার আসামি হলেন অক্ষয় ঠাকুর, বিনয় শর্মা, পবন গুপ্তা ও মুকেশ সিং।
ভারতে ২০১৫ সালের পর এই প্রথম মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর করা হয়েছে।
২০১২ সালে নয়াদিল্লিতে চলন্ত বাসে ২৩ বছরের তরুণীকে গণধর্ষণ করে নির্মম অত্যাচার চালিয়ে খুন করে ৬ জন।
ভারতের ইতিহাসে বোধহয় এমন নির্মম ঘটনা আর হয়নি। সারা বিশ্বে আলোড়ন তোলে। এরপরই ভারতে ধর্ষণবিরোধী নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়।
ধর্ষণের অভিযোগে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে ভারতীয় পুলিশ। তাঁদের মধ্যে অভিযুক্ত রাম সিং ২০১৩ সালের মার্চে কারাগারে আত্মহত্যা করে।
এছাড়া আরো এক ধর্ষক নাবালক হওয়ায় ২০১৫ সালে তাকে মুক্তি দিয়ে দেয়া হয়।
আমরা একবার দেখে নেবো, ফাঁসি সংক্রান্ত কী কী নিয়ম রয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী, মৃত্যুর পরোয়ানা জারি হওয়ার পর থেকে সাজা কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তিকে আইসোলেশন সেলে রাখা হয়। যদি অপরাধী চায়, তাহলে শেষবার পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দিতে হয়। নির্দিষ্ট দিনে সূর্যের আলো ফোটার আগেই ফাঁসি দিতে হয়। ফাঁসির সময় জেলের সুপার, ডেপুটি সুপার, ভারপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার ও রেসিডেন্ট মেডিক্যাল অফিসারকে হাজির থাকতে হয়। অপরাধী যদি চায়, তাহলে ধর্মগুরুও হাজির থাকতে পারেন। তবে চাইলেও, অপরাধীর আত্মীয়রা কোনওভাবেই ফাঁসির সময় হাজির থাকতে পারবেন না। তবে গবেষণার জন্য প্রয়োজনে সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিদ ও মানসিক রোগের চিকিৎসককে ফাঁসির সময় হাজির থাকার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।
যেদিন ফাঁসি দেওয়া হয়, সেদিন ভোরে জেল সুপারকে দেখে নিতে হয়, সাজা কার্যকর সংক্রান্ত কোনও প্রক্রিয়া বাকি আছে কি না। এরপর তাঁকে আইসোলেশন সেলে গিয়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করে উইল সহ বিভিন্ন নথিতে সই করিয়ে নিতে হয়। এরপর সাজাপ্রাপ্তকে হাত পিছমোড়া করে বেঁধে ফাঁসির মঞ্চের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যান হেড ওয়ার্ডার ও ৬ ওয়ার্ডার। দু’জন করে ওয়ার্ডার সাজাপ্রাপ্তর সামনে ও পিছনে থাকেন এবং দু’জন তার হাত ধরে রাখেন। সাজাপ্রাপ্তকে ফাঁসির মঞ্চের কাছে নিয়ে যাওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেটকে তার পরিচয়ের বিষয়ে নিশ্চয়তা দেন জেল সুপার। তিনি সাজাপ্রাপ্তকে তার জানা ভাষায় মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনান। এরপর সাজাপ্রাপ্তর চোখ ঢেকে দেওয়া হয়। তাকে কোনওভাবেই ফাঁসিকাঠ দেখতে দেওয়া হয় না। তাকে যখন ফাঁসিকাঠে তোলা হয়, তখনও হাত ধরে থাকেন ওয়ার্ডার। ফাঁসির দড়ির ঠিক নীচে দাঁড় করানোর পর সাজাপ্রাপ্তর পা বেঁধে দেন ফাঁসুড়ে। এরপর তিনি গলায় দড়ি পরিয়ে দেন। ফাঁস ঠিকমতো লাগানো হয়েছে কি না এবং গলায় দড়ি ভালভাবে লাগানো হয়েছে কি না, সেটা পরীক্ষা করে দেখে নেন জেল সুপার। এরপর ওয়ার্ডারদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সুপারের নির্দেশে সাজা কার্যকর করেন ফাঁসুড়ে। ফাঁসি দেওয়ার পর আধঘণ্টা ঝুলিয়ে রাখা হয় দেহ। এরপর রেসিডেন্ট মেডিক্যাল অফিসার দেহ পরীক্ষা করে জানিয়ে দেন, মৃত্যু হয়েছে। শেষে মৃত ব্যক্তির ধর্ম অনুযায়ী সৎকার করা হয়।
ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম একসঙ্গে চারজনকে ফাঁসিতে ঝোলানো হল।