ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে হত্যার প্রতিবাদ এবং তা বন্ধের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ৪৩তম আবর্তনের শিক্ষার্থী আদিব আরিফ। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে রোববার থেকে তিনি অনশনে বসেছেন। তবে রাতে নিরাপত্তা শঙ্কায় রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান করছেন; সকালে আবারও প্রেসক্লাবের সামনে অনশনে বসবেন তিনি। আদিব আরিফ চার দফা দাবিতে অনশনে বসেছেন।
দাবিগুলো হলো: ১. ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে সব হত্যার আন্তর্জাতিক আইনে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। ২. ভারতকে সীমান্তে হত্যার জন্য ক্ষমা চেয়ে আর হত্যা না করার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। ৩. সীমান্তে হত্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সব পরিবারকে তদন্ত সাপেক্ষে দুই দেশের যৌথভাবে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ৪. বাংলাদেশের সংসদে সীমান্তে হত্যার প্রতিবাদ করে নিন্দা জানাতে হবে।
অনশনে বসার কারণ হিসেবে আদিব বলেন, আমরা যে মানুষ এবং আমাদের যে হত্যা করা হচ্ছে, এই অনুভূতিটা এখন আর আমাদের মাঝে নেই। প্রতিদিন ধর্ষণ করে, নির্যাতনে, ক্রসফায়ারে, বোমা মেরে হত্যা শুনতে শুনতে একেবারে অনুভূতিহীন হয়ে গেছি। এই অনুভূতিটা তখনই জেগে ওঠে যখন নিজের বাবা, ভাই কিংবা বোন এ রকম ঘটনার শিকার হয়। একটি পরিসংখ্যান দেখিয়ে তিনি বলেন, ২০১০ সাল থেকে ২০১৯ সালে সীমান্তে ভারত প্রায় ৩০০ মানুষ হত্যা করেছে। ২০১৯ সালে এই সংখ্যাটা ছিল ৪৬। আর ২০২০ সালের প্রথম ২৬ দিনেই হত্যা করেছে ১৫ জনকে। ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে সীমান্তে হত্যা তিনগুণ। আর এভাবে চলতে থাকলে ২০২০ সালে সংখ্যাটা ৪০০ ছাড়াতে পারে। কিছুদিন আগে দেখলাম ১১ বছর আগে বাবাকে মেরেছে বিএসএফ, এবার মারলো ছেলেকে।
আদিব আরও বলেন, আমরাই ১৯৫২ সালে ভাষার জন্য চারজনকে হত্যার প্রতিবাদে পুরো দেশ বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে লড়াই করেছি। সেই আমরাই স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে এসে চেতনাহীন হয়ে গেছি। এভাবে চলতে দেওয়া যায় না; এভাবে চলতে পারে না। পাশের দেশ নেপালও দেখিয়ে দিয়েছে একজন মানুষকে মারলেও কিভাবে তার প্রতিবাদ করতে হয়। এবার আমাদের জেগে ওঠা উচিত। জেগে উঠুন, প্রতিবাদ করুন।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা কতো কাজে সময় ব্যয় করি। আড্ডা দিই, ফোনে গেম খেলে সময় নষ্ট করি। এবার একটু বাস্তব জীবনে আসুন। দশটা মিনিট দেশের জন্য প্রতিবাদ করুন। ভাইয়ের জন্য দাঁড়ান, দেশের জন্য দাঁড়ান। আর কোনো হত্যা নয়, এবার হবে প্রতিবাদ।