বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মন্দবাগ রেলস্টেশন এলাকায় মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় শিশুসহ ১৬ জন নিহত হয়েছে। এছাড়াও দুই শতাধিক যাত্রী গুরুতর আহত হয়েছে। আহতদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কসবা, নরসিংদী ও ঢাকায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
এর আগে মঙ্গলবার ভোর ৮টার দিকে কসবা উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনের ক্রসিংয়ে আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ও তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের মধ্যে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনাটি ঘটার সময় ট্রেন দুটি চলন্ত অবস্থায় ছিল। তবে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া বগির নিচে আরও মরদেহ থাকতে পারে বলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ধারণা করছে। তাই তারা উদ্ধারের কাজ করছে। ট্রেন ঘটনার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম ও সিলেট-চট্টগ্রামের মধ্যে রেলযোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
ইতিমধ্যে রেলওয়ে ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ঘটনা তদন্তে ৩টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে আখাউড়া থেকে রিলিফ ট্রেন দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে। ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তথ্যকেন্দ্র খোলা হয়েছে। কোনো হতাহতের পরিচয় পেলেই জানানো হচ্ছে তথ্যকেন্দ্র থেকে। নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে আপাতত, মরদেহ নেওয়ার সুবিধার্থে। এ ছাড়া আহতদের সেবায় জেলা প্র্রশাসনের তত্ত্বাবধান থাকবে।
দুর্ঘটনার পর প্রত্যক্ষাদর্শীরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রামগামী তূর্ণা নিশীথা ট্রেনটি সিগন্যাল অমান্য করলে এই দুর্ঘটনা ঘটে। মন্দবাগ স্টেশনে দাঁড়ানোর জন্য সিগন্যাল দেয়া হয়। এসময় উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনটি প্রধান লেন থেকে ১ নম্বর লাইনে দাঁড়ানো শুরু করে। ট্রেনটির ৬টি বগি লাইনে ও অপর বগিগুলো লেনে থাকা অবস্থায় সিগন্যাল অমান্য করে তূর্ণা নিশীথা ট্রেনটি উদয়ন এক্সপ্রেসের ওপর উঠে গেলে উদয়নের তিনটি বগি দুমড়েমুচড়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, দুর্ঘটনায় নিহতরা সবাই উদয়নের যাত্রী।
আখাউড়া রেলওয়ে থানা পুলিশের ওসি শ্যামল কান্তি দাস জানান, সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ও চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেস মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে আসামাত্রই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে দুই ট্রেনেরই কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে যায়।
জেলা প্রশাসক হায়াত উদ-দৌলা জানান, এ পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হওয়ার ব্য্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ঘটনাস্থলে ১০ জন, কসবা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তিনজন, বৃাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে দুই জন ও কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। দুমড়েমুচড়ে যাওয়া বগির নিচে আরো মরদেহ থাকতে পারে। হতাহতদের উদ্ধার কাজ চলছে। অনেকের কাটা হাত-পা উদ্ধার হচ্ছে।
এ দৃশ্য অসহনীয়। সম্ভবত একটি শিশু ভেতরে রয়ে গেছে। সকাল ১১টা নাগাদ তাকে জীবিত বা মৃত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।