অমর্ত্য সেনের পর দ্বিতীয় বাঙালি হিসেবে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করলেন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়।
১৪ অক্টোবর ইন্দো-আমেরেকান অভিজিৎ ব্যানার্জী, তাঁর স্ত্রী এস্টার ডাফলো এবং মাইকেল ক্রিমারকে সন্মিলিতভাবে ২০১৯ সালের অৰ্থনীতির নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়।
এ পর্যন্ত ছয় নোবেলজয়ীর শিকড়, শ্বাস-প্রশ্বাসে জড়িয়ে রয়েছে আমার-আপনার সকলের প্রিয় কলকাতা!
# সদ্য নোবেল বিজয়ী অভিজিৎ ব্যানার্জীর পৈত্রিক বাড়ি এ শহরের বুকেই। তিনি উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছেন সাউথ পয়েন্ট হাইস্কুল থেকে। অর্থনীতিতে স্নাতক হয়েছেন প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে।
মা নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায় জন্মসূত্রে মহারাষ্ট্রের মানুষ, কলকাতার সেন্টার ফর স্টাডিজ় ইন সোশ্যাল সায়েন্সেস-এর অধ্যাপক। বাবা দীপক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন প্রেসিডেন্সি কলেজে অর্থনীতির প্রবাদপ্রতিম অধ্যাপক।
# বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঃ কেবল প্রথম ভারতীয় নয়, প্রথম অ-ইউরোপিয় হিসেবে ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারটি জয় করেছিলেন তিনি। কবিগুরুর জন্ম, বেড়ে ওঠা এবং প্রথাগত শিক্ষার বেশ কিছু সম্পন্ন হয়েছিল কলকাতাতেই। কলকাতা ধন্য বিশ্বকবির পায়ের ধুলায়।
# অমর্ত্য সেনঃ নোবেলজয়ী আরও একজন প্রখ্যাত বাঙালি অর্থনীতিবিদ। অমর্ত্য সেনের জন্ম শান্তিনিকেতনে মাতামহ ক্ষিতিমোহন সেনের ‘পর্ণকুটীরে’। তার আদি নিবাস বর্তমান বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মানিকগঞ্জে। তিনিও কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতির স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৭২ সাল পর্যন্ত নিজের কর্মজীবনের অধিকাংশ সময় ব্রিটেন এবং আমেরিকাতে কাটালেও পরবর্তীতে তিনি ফের কলকাতয় ফিরে আসেন। ১৯৯৮ সালে তিনি অর্থনীতিতে ‘নোবেল’ পান।
# সি ভি রমনঃ চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমন ছিলেন এশিয়ার প্রথম ব্যক্তি যিনি বিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছিলেন। ১৯৩০ সালে পদার্থ বিদ্যায় নোবেল পেয়েছিলেন তিনি। মাদ্রাসের প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করার পর ১৯১৭ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯০৭ সাল থেকে ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত মোট ২৬ বছর তিনি যুক্ত ছিলেন কলকাতার বউবাজারস্থিত ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর কাল্টিভেশন সায়েন্স-এর সঙ্গে। এখানেই আবিষ্কার হয় তাঁর বিখ্যাত ‘রমন এফেক্ট’।
# মাদার টেরেসাঃ সুদূর ইউরোপের আলবেনিয়াতে জন্মগ্রহণ করলেও সমাজসেবী মাদার টেরেসা তাঁর সম্পূর্ণ জীবন সমাজের কল্যাণে উজাড় করে দিয়েছেন এই কলকাতা থেকেই। এবং তাঁর এই কাজের জন্য নোবেল শান্তি সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন তিনি। ১৯৫০ সালে কলকাতায় তিনি দ্য মিশনারিজ অফ চ্যারিটি (দাতব্য ধর্মপ্রচারক সংঘ) নামে একটি খ্রিস্ট ধর্মপ্রচারণাসংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১২ সালে এই সংঘের সাথে যুক্ত ছিলেন ৪৫০০ সন্ন্যাসিনী। প্রথমে ভারতে ও পরে সমগ্র বিশ্বে তার এই ধর্মপ্রচারণা কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৬ সালে পোপ ফ্রান্সিস তাকে ‘সন্ত’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন এবং ক্যাথলিক গির্জায় তিনি ‘কলকাতার সন্ত টেরিজা’ হিসেবে আখ্যায়িত হন।
# রোনাল্ড রসঃ ম্যালেরিয়া নিয়ে তাঁর গবেষণার জন্য ১৯০২ সালে তিনি নোবেল পুরস্কার পান। তিনিই প্রথম দেখান কি করে ম্যালেরিয়া ছড়ায়। বিদেশে জন্ম নিলেও ১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ আমলে তিনি কলকাতায় চলে আসেন। তাঁর সমস্ত গবেষণা এই কলকাতায়।
ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড০ মনমোহন সিং অভিজিৎ ব্যানার্জীকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘দারিদ্র্যতা নির্মূল তথা নতুন কৌশলের উন্নয়ন সন্দর্ভে করা তাঁর কাজ সত্যিই কালজয়ী।’
অভিজিৎ বাবুকে তিনি একখানা পত্রও লিখে ফেলেছেন। সেখানে লেখা ছিল, ‘এই সংবাদ আমাকে অত্যন্ত আনন্দিত তথা গৌরবান্বিত করেছে।’