বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয়া দুর্গাপুজোকে ঘিরে প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো। কারিগরদের দম ফেলার ফু্রসত নেই। হাতেগোনা কয়েকদিন বাদেই প্রতিমার গায়ে পড়বে রঙের ছোঁয়া।
বৃহত্তর কাটিগড়ার বিভিন্ন প্রতিমালয়ে এখন শোভা পাচ্ছে ছোট-বড় শতাধিক প্রতিমা। বাঁশ-কাঠ আর কাদা মাটি দিয়ে তৈরি প্রতিমাগুলো দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন সনাতন ধর্মের লোকজন।
প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা। কাটিগড়ার চৌরঙ্গী,কাতিরাইল,সিদ্ধিপুর,কালাইন,গুমড়া,জালালপুর সহ প্বার্শবর্তী বদরপুরঘাট, শ্রীগৌরী দাসপাড়া,মালুয়া প্রভৃতি এলাকায় প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে জোরকদমে।
বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পুজোকমিটির কর্মকর্তারা প্রতিমার দরদামে উৎসাহ দেখাচ্ছেন। কোন কোন পুজোকমিটি প্রতিমা বাবদ অগ্রিম দিচ্ছেন।
দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে প্রতিমা তৈরি করে আসছেন মৃৎশিল্পীদের জনৈক মৃৎশিল্পী জানান,আগামি ৪ অক্টোবর মহাপঞ্চমী দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব শুরু।
৮ অক্টোবর চৌরঙ্গী,কাটিগড়া,কালাইন,জালালপুর প্রভৃতি বিসর্জন ঘাটে প্রতিমা নিরঞ্জনের মধ্যে দিয়ে সমাপন ঘটবে সর্ববৃহৎ এই উৎসবের।
৪ অক্টোবর মহাষষ্ঠী পূজা থেকে মণ্ডপে মণ্ডপে বেজে উঠবে ঢাকঢোল আর কাঁসার শব্দ। আরও এক শিল্পী জানান দুই মাস আগে থেকে তিনি প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেছেন। এ পর্যন্ত ২৫টি প্রতিমা সেট তৈরি করেছেন।
তিনি বলেন,আগে একটা প্রতিমা সেট তৈরি করতে খরচ হতো ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। সেটি বিক্রি হতো ৩০ থেকে ৬০ হাজার টাকায়। কিন্তু এখন বাঁশ, কাঠ, কাদা মাটিসহ প্রতিমা তৈরির উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় প্রতি সেট প্রতিমা তৈরিতে খরচ হচ্ছে ৪০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। এখন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার বেশি লাভে বিক্রি করা যাচ্ছে না। তারপর কাঠ, সুতা, খড়, রং, কাপড় ও মুকুট দিয়ে এক সেট প্রতিমা তৈরি করতে সময় লাগে পাঁচ দিন। কিন্তু প্রতিমা সেট বিক্রি করে তেমন লাভ হচ্ছে না।
স্থানীয় পুজোকমিটির কর্মকর্তারা জানান গত বছর এখানকার বিভিন্ন পূজোমণ্ডপে বিগ বাজেটের পুজো অনুষ্ঠিত হলেও বর্তমান ব্যবস্থা বাণিজ্যের বেহাল পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য রেখে অনেকটাই কাটছাঁট করা হয়েছে।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তরফে জনৈক কর্মকর্তা জানান, ৮ অক্টোবর হাজারো ভক্তের উপস্থিতিতে কাটিগড়া ও চৌরঙ্গী মাঠে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হবে। এই দিকে সতর্কতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে নিরাপত্তার ব্যাপারে পুলিশ সহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা চাওয়া হবে।
সব মিলে হাতেগোনা দিনকয়েক পরেই মহোৎসবের ধূম পড়বে। ফের সারা বছরের ক্লান্তি অবসাদ ভুলে গরিব বিত্তশালী সমাজের প্রতিটি বর্গের উৎসবপ্রেমী জনগণ আনন্দে মেতে উঠবেন।