
বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৈরি হওয়া পশ্চিমবঙ্গে এখন শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির মধ্যে সৃষ্টি হওয়া রাজনৈতিক যুদ্ধ অত্যন্ত প্রকট হয়ে উঠেছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কোণঠাসা করে সিবিআই এক বিশেষ নোটিস দিয়েছে।
তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যার ভাইপো তথা তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জির স্ত্রী এবং শ্যালিকাকে সিবিআই নোটিস ধরিয়েছে।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী-র পর শ্যালিকাকেও নোটিস দিয়েছে সিবিআই। আনন্দপুরে অভিষেকের শ্যালিকা মেনকা গম্ভীরের বাড়িতে গিয়ে নোটিস দিল সিবিআই।
সিবিআই ভাইপোর পরিবারে এভাবে হঠাৎ নোটিস দেয়ার পর কেন্দ্র শাসনাধিষ্ঠ বিজেপির বিরুদ্ধে আরো অগ্নিশর্মা মমতা।
এই প্রসঙ্গে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বলেন, তিনি বন্দুকের বিরুদ্ধে বহু যুদ্ধ করেছেন। এখন ইঁদুরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে কেন ভয় পাবেন?
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে ফুটবল খেলার সঙ্গে তুলনা করে মমতা বলেন যে সেই খেলায় গোলরক্ষক হবেন তিনি।
খেলায় কে জেতে কে হারে তা সময়ই প্রমাণ করবে। কারাবাসের ভয় দেখিয়ে কেউ তাঁকে ক্ষান্ত করতে পারবে না বলেও মমতা স্পষ্ট করে দেন।
ভাষা দিবসে মুখ্যমন্ত্রী মমতার কথাগুলো গুরুত্বসহকারে নিয়েছেন অনেকেই। কারণ এটা সবসময়ই দেখা গিয়েছে যে বাংলা এবং বাঙালির প্রতি অন্যরকম চিন্তাধারা রয়েছে। বাংলাকে কেন বঙ্গাল বলা হবে? এই বিষয়টি নিয়ে প্রচুর তর্ক বিতর্ক হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। হিন্দি হোক বা যে ভাষাই হোক, বাংলাকে বাংলাই বলতে হবে। কেন বঙ্গাল?
মুখ্যমন্ত্রী এ নিয়ে এদিন প্রশ্ন তোলেন।
‘চিরকাল আমি একটা জিনিস দেখছি। বাংলা রাজ্যটার প্রতি বঞ্চনার একটা ভাব। বিমাতৃসুলভ একটা আচরণ। আর যদি বাংলার কেউ বড় হয়ে যায় তাকে নীচে টেনে নামানো। তার জন্য নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, রামকৃষ্ণ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, রাজা রামমোহন রায় কাউকে রেয়াত করা হয়নি। এ জিনিস কেন হবে’?
দক্ষিণ কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কে সরকারি অনুষ্ঠানে বলেন, ‘ধমকানি - চমকানি আর জেল টেল দেখিয়ে প্লিজ আমাদের ভয় দেখাবেন না। আমরা অনেকদিন আগে পার হয়ে এসেছি।’
যুদ্ধ করা মানুষ তিনি।
বাংলার প্রতি দিল্লির মনোভাবের কথা তুলে ধরেন। বলেন, ‘বাংলা মানে সব থেকে খারাপ, এই একটা অ্যাটিটিউড, পারসেপশন সো ব্যাড। বাঙ্গাল বলেছে, কাঙ্গাল বলেছে, কত কী বলে বেড়াচ্ছে। আর আমি তো শুনেছি কখনও কখনও বলে বেড়াচ্ছে দিল্লির কিছু নেতা, বাঙালিদের মেরুদণ্ড কী করে ভেঙে দিতে হয় আমি জানি। আমি বলি, আসুন না, একটু চেষ্টা করে দেখুন না। অনেকবার তো চেষ্টা করেছেন’।
মমতার হুঙ্কার, ‘আপনাদের ধমকানি চমকানি আর জেল টেল দেখিয়ে প্লিজ আমাদের ভয় দেখাবেন না। আমরা অনেকদিন আগে পার হয়ে এসেছি। বন্দুকের সঙ্গে যারা লড়াই করে এসেছি তারা আবার নেংটি ইঁদুরের সঙ্গে লড়াই করতে ভয় পাবো কেন’?
এদিন তৃণমূলনেত্রী প্রতিজ্ঞা করেন, ‘ভাষা দিবসে আমি আপনাদের সামনে প্রতিজ্ঞা করছি। যতদিন আমার দেহে প্রাণ থাকবে, কোনও ধমকানি – চমকানিকে ভয় পাই না, এবং পাবোও না। আমাদের মেরুদন্ড ভেঙে দেওয়া অত সহজ নয়। আমাদের চোখ উপড়ে দেওয়াও অত সহজ নয়। আমাদের জাতিটাকে বিস্মৃত করিয়ে দেওয়াটাও অত সহজ নয়’।
তাঁর দাবি, ‘আমাকে এই বাংলা শিখিয়েছে বীরের মতো লড়বি। বাঘের বাচ্চার মতো লড়বি। বাঘের বাচ্চা যেন বিড়ালকে দেখে ভয় না পায়’।