বাঙালি মেধা নিয়েই জন্মায়। জীবনে যা সে গ্রহণ করে তা কেবল নিজেকে পরিপুষ্ট করার বিদ্যা।
এমনই এক মেধাসম্পন্ন বাঙালি, সমগ্র বাঙালির অহংকার ভাষাতাত্ত্বিক, সাহিত্যিক এবং শিক্ষাবিদ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের আজ ২৬ নভেম্বর ১২৯তম জন্মদিন।
বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে ৩ খণ্ডের দি অরিজিন এন্ড ডেভেলপম্যান্ট অব দ্য বেঙ্গলি ল্যাঙ্গুয়েজ গ্রন্থখানি রচনা করে যে বিদ্যাবত্তার পরিচয় প্রদান করেন তিনি, তা অনস্বীকার্য।
১৮৯০ সালের ২৬ নভেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার শিবপুরে জন্মগ্রহণ করেন।
টুইটারে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন আচার্যের উদ্দেশে।
মানব সংস্কৃতির সমস্ত বিষয়গুলোতে তিনি সারাটা জীবন অক্লান্ত গবেষণা করেছেন।
সুনীতিকুমার ১৯০৭ সালে মতিলাল শীল ফ্রি স্কুল থেকে এন্ট্রান্স ও স্কটিস চার্চ কলেজ থেকে ১৯৯০ সালে এফ এ পাস করেন। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯১১ সালে ইংরেজিতে সম্মান–সহ বি এ শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এরপর ১৯১৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এম এ শ্রেণীতেও প্রথম স্থান অর্জন করেন। এরপরই বিদ্যাসাগর কলেজে তিনি ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
১৯১৪ থেকে ১৯১৯ পর্যন্ত অধ্যাপক ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের। এরপর সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯১৯ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ধ্বনিবিজ্ঞানে ডিপ্লোমা লাভ করেন।
১৯৬৩ সালে ভারতের জাতীয় অধ্যাপক হয়ে বাঙালিসহ সারা বিশ্বকে মুগ্ধ করে দিয়েছিলেন।
তাঁর অনন্য এবং উল্লেখযোগ্য বইয়ের সাগরের মধ্যে সামান্য কিছু নাম ছোঁয়া হল— বেঙ্গলি ফোনেটিক রিডার, বাংলা ভাষাতত্ত্বের ভূমিকা, ভারতের ভাষা ও ভাষা সমস্যা, সরল ভাষা প্রকাশ বাংলা ব্যাকরণ, ভারত সংস্কৃতি, সংস্কৃতি কী, ওয়ার্ল্ড লিটারেচার অ্যান্ড টেগোর ইত্যাদি।
সুনীতিবাবুর পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে ‘ভাষাচার্য’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
জীবনে লাভ করেছেন বহু সম্মাননা।
#১৯৩৫ সালে রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন।
#১৯৪৮ সালে হিন্দি ভাষায় বিশেষ অবদানের জন্য সাহিত্য বাচস্পতি উপাধি লাভ করেন।
#১৯৫০ সালে লন্ডনের সোসাইটি অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সের সদস্য পদ লাভ করেন।
#১৯৫২-১৯৫৮ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের বিধান পরিষদের অধ্যক্ষ পদে বহাল ছিলেন।
#১৯৫৫ সালে অসলোর নরওয়েজিয়ান অ্যাকাডেমির সদস্য পদ লাভ করেন।
#১৯৬৩ সালে ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মবিভূষণ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন।
১৯২৭ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চারজন ভ্রমণসঙ্গীর একজন হয়ে সুনীতিকুমার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরে যান। এই সময় তিনি ভ্রমণ করেন বালি, জাভা, কুয়ালালামপুর, মালাক্কা, পেনাং, সিয়াম ও সিঙ্গাপুর।
“যাত্রী” গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ এই ভ্রমণের বিবরণ লিপিবদ্ধ করেন। এসব দেশগুলোতে তিনি রবীন্দ্রনাথের আদর্শ এবং ভারতীয় সংস্কৃতি ও শিল্প সম্বন্ধে বক্তৃতা প্রদান করেন।